তোর্ষা ভট্টাচার্য্য, কলকাতা: নববর্ষ (Bengali New Year) মানেই নতুন জামা, মিষ্টির বাক্স, হালখাতা, লোভনীয় সরবত... আট থেকে আশির মনে যেন এই কথাগুলোই ঘোরাফেরা করে। তবে তাঁর মনে হত, নাহ.. এ যেন সম্পূর্ণ নয়। সব নতুনের পাশাপাশি, চাই একটা নতুন গান। বাবার কাছে গিয়ে বায়নাও করতেন যে জামার সঙ্গে যেন একটা নতুন গানও থাকে। ছোটবেলা থেকেই যাঁর জীবন বেড়ে উঠেছে গানকে জড়িয়ে, তাঁর জীবনের আবেগ-অনুভূতিগুলোও যেন এমনই সুরে বাঁধা। উত্তমকুমারকে (Uttam Kumar) প্রথম দেখা, মান্না দে (Manna Dey), হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের (Hemanta Mukherjee) সঙ্গে কাজ করার সুযোগ, সবই এসেছিল এই গানের হাত ধরে। এবিপি লাইভের সঙ্গে নববর্ষের সুখস্মৃতি ফিরে দেখলেন বর্ষীয়ান সঙ্গীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লা (Haimanti Sukla)।


কেমন করে কাটত হৈমন্তী শুক্লার ছোটবেলার নববর্ষ? হৈমন্তী শুক্লা বলছেন, 'আমার ছোটবেলা কেটেছে শোভাবাজারে। ওখানে নববর্ষ বলতেই দেখতাম কারখানায় গণেশ পূজো হত। আমরা প্রসাদের অপেক্ষায় থাকতাম। আর তারপরে সন্ধেবেলাটা ছিল বাবা-মায়ের সঙ্গে হালখাতায় যাওয়ার আকর্ষণ। এক বাক্স মিষ্টির সঙ্গে সঙ্গে, অন্যতম আকর্ষণ ছিল এক ধরনের লাল সরবত। রাতে বাড়ি ফিরে আবার হিসেব করতে বসতাম, কোন কোন দোকানে মিষ্টি আনতে যাওয়া হল না। তখন আমরা নিউ ইয়ার জানতাম না, বাংলা বছরই আমাদের নববর্ষ।'


পয়লা বৈশাখের আগেরদিন একটি বিশেষ নিয়ম পালন করা হত তাঁর বাড়িতে। হৈমন্তী শুক্লা বলছেন, 'আমাদের বাড়িতে চৈত্রসংক্রান্তির দিন একটা বিশেষ নিয়ম পালন করা হত। বলেছিলেন আমাদের এক পরিচিত কাকা। আগেরদিন ভেজানো কাঁচা মুসুর ডালবাটা আর নিমপাতা বাটা একসঙ্গে খেয়ে নিতে হত। এতে নাকি শরীর ভাল থাকে। এখনও সেই নিয়ম আমি মেনে চলি। নিজের বন্ধুবান্ধবদেরও বলি। ওটাই যেন আমার পয়লা বৈশাখের শুরু।'


নতুন বছর মানে যেমন খাওয়া দাওয়া, তেমনই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। এই প্রথা চলে আসছে বহুদিন থেকেই। তা নিয়েও অনেক স্মৃতি রয়েছে হৈমন্তী শুক্লার। সঙ্গীতশিল্পী বলছেন, 'অনেকেই আমায় প্রশ্ন করেন, কেন বিয়ে-সংসার করলাম না। সংসার তো আমার গানের সঙ্গে। ছোটবেলা থেকেই যখন গান শিখছি, করছি.. মনে হত, আচ্ছা আমায় কি কখনও বসুশ্রী (সিনেমাহল)-তে অনুষ্ঠান করতে ডাকবে না? সেই সময়ে নববর্ষে বসুশ্রীতে খুব বড় করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। উত্তমকুমার থেকে শুরু করে শ্যামল মিত্র, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়.. কে নেই সেখানে! ভীষণ স্বপ্ন দেখতাম ওঁদের সামনে গান গাওয়ার। অবশেষে ডাক এল। বলা হল, অনুষ্ঠান করার জন্য আমায় ২৫ টাকা দেওয়া হবে। নববর্ষে বসুশ্রীতে অনুষ্ঠান করব এতেই আমি তখন আনন্দে আত্মহারা। বিনামূল্যে বললেও করে দিয়ে আসতাম। তবে আমার গান শুনে, ২৫ টাকার বদলে ১২৫ টাকা দিয়েছিলেন মন্টু বসু। সেইসমস্ত দিন এক্কেবারে অন্যরকম ছিল। এখন সেই অনুষ্ঠান হলেও, সেই উন্মাদনা এখন হারিয়ে গিয়েছে। এখনও মনে হয়, নববর্ষে যদি নতুন শাড়ি পড়ে গানই না গাইলাম, তবে কিসের আর নববর্ষ?'


আরও দেখুন: Bengali New Year 2024: উত্তমকুমারকে দেখে বন্ধ গান! নববর্ষের অনুষ্ঠানে হৈমন্তী শুক্লার প্রথম উপার্জন ১২৫ টাকা!


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।