মুম্বই: দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি পোস্টের মাধ্যমে ইজরায়েলে (Israel) নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিলেন অভিনেত্রী নুসরত ভারুচা (Nushrratt Bharuccha)। কীভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত হঠাৎই আটকে পড়েন তিনি, জানিয়েছেন গোটা অভিজ্ঞতার কথা।
ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিলেন বলিউড অভিনেত্রী নুসরত
মঙ্গলবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইজরায়েল থেকে ফিরে আসার পর প্রথম বিবৃতি দিলেন অভিনেত্রী নুসরত ভারুচা।
ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও শেয়ার করে অভিনেত্রী বলেন, 'আমি কিছু মুহূর্ত নিয়ে প্রত্যেককে তাঁদের বার্তা, প্রার্থনা ও শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি ফিরে এসেছি, আমি বাড়িতে, আমি সুরক্ষিত আছি, আমি ভাল আছি কিন্তু ঠিক দিন দুই আগে আমি হোটেলের ঘরে ঘুম থেকে উঠি বোমার আওয়াজে এবং চারিদিকে সাইরেনের আওয়াজ এবং সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বেসমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয় শেল্টারের জন্য। আমি কখনও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। কিন্তু আজ, যখন আমি নিজের বাড়িতে ঘুম থেকে উঠলাম, চারিদিকে কোনও শব্দ নেই, এবং নিজে সুরক্ষিত ও সুস্থ, আমি আশ্বস্ত হচ্ছি এটা ভেবে যে আমরা কতটা সৌভাগ্যবান যে আমরা এই দেশে রয়েছি, আমরা সুরক্ষিত ও আমরা ভাল আছি।'
নুসরত ভারুচা তাঁর পোস্টে ভারতীয় সরকারকে, ভারতীয় দূতাবাস ও ইজরায়েলের দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানান।
ওই ভিডিও ছাড়াও একটি দীর্ঘ পোস্ট লিখে শেয়ার করেন অভিনেত্রী। তিনি লেখেন, 'গত সপ্তাহ আমার স্মৃতিতে চিরকাল টাটকা থাকবে... আবেগের ঘূর্ণিঝড়, শেষের ৩৬ ঘণ্টা যা কোনওদিনই আমি ভুলতে পারব না এবং আজীবন আমাকে তাড়া করবে। আমার প্রযোজক, স্টাইলিস্ট ও আমি ইজরায়েলের হাইফায় পৌঁছই ৩ অক্টোবর, সেখানকার মর্যাদাপূর্ণ হাইফা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমাদের সাম্প্রতিক ছবি 'অকেল্লি'র স্ক্রিনিংয়ে উপস্থিত থাকতে। সঙ্গে আমাদের ইজরায়েলি সহ অভিনেতা সাহি হালেভি ও আমির বোট্রাসও ছিলেন।' ইজরায়েলের নানান ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার পর, ৬ অক্টোবর ছবির স্ক্রিনিংয়ের পর এলাহি নৈশভোজ শেষে একে অপরকে বিদায় জানান তাঁরা। পরেরদিন ভারতের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা তাঁদের। কিন্তু তার আগের দিন সন্ধ্যার মতো একেবারেই ছিল না শনিবারের সকাল, জানান অভিনেত্রী। বোমা বারুদের কান ফাটানো শব্দে ঘুম ভাঙে তাঁদের, সেই সঙ্গে সাইরেনের আওয়াজ। প্রত্যেককে নিয়ে যাওয়া হয় হোটেলের বেসমেন্টে, শেল্টার জোনে। অপেক্ষার প্রত্যেক মুহূর্ত যেন অসীম মনে হচ্ছিল, জানান নুসরত। 'এমন খবরের জন্য আমাদের কেউ প্রস্তুত করতে পারেনি', লেখেন অভিনেত্রী। সেই পরিস্থিতিতে প্রথমেই তিনি ভারতীয় দূতাবাসে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন বলে জানান নুসরত, যা তাঁদের হোটেল থেকে মাত্র ২ কিমি দূরে অবস্থিত। কিন্তু অতটুকু দূরত্বও যেন বহুদূর মনে হচ্ছিল, কারণ কোনও যানবাহন তো ছিলই না, উল্টে কেবল বোমা বিস্ফোরণের শব্দ। তারই মধ্যে খবর পান তাঁরা যে হামাস সৈন্যরা একাধিক শহরে প্রবেশ করেছে এবং রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষকে বাড়ি থেকে বের করে নির্বিচারে হত্যা করছেন বলেও খবর শোনা যায়। রাস্তায় গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং 'ভীষণ বিপদগ্রস্ত' হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। নুসরত লেখেন, 'তখন ধীরে ধীরে বুঝতে পারছি যে ফ্লাইট ধরতে তো পারবই না, উল্টে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে আটকে পড়ব। আমরা তখন সাহায্যের আশায় সর্বত্র ফোন করতে শুরু করি। সাহির সঙ্গে যোগাযোগ যখন করি, যে নিজেও কিছুদিন ইজরায়েলের সৈনবাহিনীতে কাজ করেছে কিছুদিন, তখন জানতে পারি পরিষ্কার, ইজরায়েলে জরুরি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং যুদ্ধে সামিল হয়েছে।'
আরও পড়ুন: Israel-Hamas War: ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে 'নৃশংসভাবে' খুন হলেন ভারতীয় অভিনেত্রীর বোন ও ভগ্নিপতি
ভারতে ফেরার পরে মুম্বই বিমানবন্দরে ক্যামেরাবন্দি হন অভিনেত্রী। 'রাম সেতু' অভিনেত্রীর একগুচ্ছ ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। তিনি পোস্টে জানান 'তেল আভিভ হোটেল' থেকে বের হওয়ার সফর তাঁদের নেহাতই সহজ ছিল না। প্রবল আতঙ্কে, চোখের জল সামলে, একে অপরকে আঁকড়ে, একে অপরের সাহস হয়ে দাঁড়িয়ে বেন গুরিওঁ বিমানবন্দরে পৌঁছন। বিমানবন্দরের প্রত্যেক মুহূর্ত আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অবশেষে উড়ান ছাড়তে যে অনুভূতি তাঁদের হয়েছিল তা যেন স্বর্গীয় বললেও কম বলা হবে, লেখেন অভিনেত্রী।
আপাতত দেশে ফিরে এসেছেন অভিনেত্রী। সকলের শুভেচ্ছা, প্রার্থনার জন্য ধন্যবাদও জানিয়েছেন।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন