কলকাতা: বাংলা ছাড়িয়ে আপাতত মুম্বইতে ধারাবাহিকের কাজে ব্যস্ত তিনি। ইতিমধ্য়েই সেখানকার কাজের ধারার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন নিজেকে, ফলে কাজও এগোচ্ছে মজা করেই। তারই ফাঁকে সময় বের করে তাঁর নতুন ওয়েব সিরিজ থেকে শুরু করে মুম্বইয়ের কাজ নিয়ে এবিপি লাইভের (ABP Live) সঙ্গে আড্ডা দিলেন অভিনেত্রী দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায় (Debchandrima Singha Roy)। 


বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ দেবচন্দ্রিমা, মুম্বই গিয়ে কেমন কাজ চলছে তাঁর? বাংলার কাজের ধারার থেকে কি মুম্বইয়ের কাজের ধারা আলাদা? দেবচন্দ্রিমা বলছেন, 'নয় নয় করে অনেকদিন হয়ে গেল একসঙ্গে কাজ করছি। সবার সঙ্গে এখন খুব ভাল সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে। খুব মজা করেই কাজ করছি। প্রথমে এসে একটু একা একা লাগত। মনে হত, আমি বাইরে থেকে এসেছি। সবার সঙ্গে মিশতে পারতাম না প্রথমে। এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। সবার সঙ্গে মিলেমিশেই কাজ করছি। তবে বাংলা আর এখানকার কাজের ধরণ একটু আলাদা। এখানে সেটে একটুও বিশ্রামের সময় পাওয়া যায় না। ফুটেজ না উঠলে ১৬-১৭ ঘণ্টা পর্যন্তও শ্যুটিং হতে পারে। কলকাতাতেও এই ধারা প্রথমদিকে ছিল। এখন বদলে গিয়েছে। আমার অবশ্য এই ধারায় কাজ পছন্দ নয়, শরীর একটুও বিশ্রাম পায় না। একটা সময়ে মাথা কাজ করে না। কিন্তু এখন মানিয়ে নিয়েছি।'


'পরিণীতা' দেবচন্দ্রিমার কেরিয়ারে নিঃসন্দেহে একটা বড় প্রোজেক্ট। নিজেকে ললিতা করে তোলার জন্য় কতটা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন দেবচন্দ্রিমা? অভিনেত্রী বলছেন, 'অদিতিদি আর শ্রীকান্তদা যে আমার ওপর ভরসা রেখেছেন, তাতে আমি কৃতজ্ঞ। 'পরিণীতা' আমার কেরিয়ারের খুব উল্লেখযোগ্য একটা কাজ, তাই এটার জন্য প্রচুর খেটেছিলাম। এর আগে, 'প্রেমে পড়া বারণ'-এর শ্যুটিং করেছি। 'পরিণীতা' -র জন্য মাত্র ১ মাস সময় পেয়েছিলাম। গৌরবদার (Gaurav Chakrabarty) মধ্যে, কথা বলা-হাঁটাচলায় একটা সাবেকিয়ানা রয়েছে। আমার মধ্যে সেটা একেবারেই নেই। আমি ১ মাস ধরে বাড়িতে শাড়ি পরে হাঁটাচলা করতাম। পুরনো দিনের মতো করে কথা বলার চেষ্টা করতাম। বারে বারে চিত্রনাট্য পড়েছি, বই পড়েছি। তবে হ্যাঁ, এই ছবি নিয়ে আগে যা কাজ হয়েছিল, সেগুলো দেখিনি। কারণ তাতে অনুকরণ করার প্রবণতা চলে আসে। যাঁরা এর আগে ললিতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাঁরা কিংবদন্তি। আমার সঙ্গে তাঁদের তুলনাও চলে না। তাই আমি পরিণীতাকে নিজের মতো করেই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। শ্যুটিং শেষ হওয়ার পরে অদিতিদি আমায় বলেছিলেন, 'তুই ছাড়া আমি আর কাউকে ললিতা হিসেবে ভাবতেই পারছিলাম না। তুই যা কাজ করেছিস তাতে আমি খুশি। বাকিটা দর্শকের ওপর।'


পরিবারকে ছেড়ে, বাড়ি ছেড়ে মুম্বই গিয়ে রয়েছেন কাজের তাগিদেই। দেবচন্দ্রিমার বাড়ির জন্য মনখারাপ হয়? অভিনেত্রীর সাফ জবাব, 'হয়.. কিন্তু আমি ভীষণ বাস্তববাদী। ছোটবেলায় বাবা মারা যান আমার। চোখের সামনে দেখেছি মা কতটা কষ্ট করে আমাদের দুই বোনকে বড় করেছেন। সেই থেকেই মাথায় ঢুকে গিয়েছিল, উপার্জন করাটা জরুরি। তবেই আমার কাছের মানুষদের ভাল রাখতে পারব। এখনও মা ফোন করে কাঁদেন যে, 'কত দূরে চলে গেলি'.. মাকে বোঝাই, কিন্তু এমন নয় যে তার জন্য বাড়ি ফিরে আসব। যে জায়গাটা অর্জন করেছি, সেটা নিজের জোরে। কেউ আমায় হাত ধরে এই জায়গাটায় পৌঁছে দেয়নি। আজও গলা উঁচু করে বলতে পারি, প্রিয়জনের জন্যও কখনও কাজকে অবহেলা করিনি। কারণ আমি ঠেকে শিখেছি যে প্রিয়জন থাকে না, থেকে যায় কাজটাই। আমি যে পরিশ্রম করছি, বিশ্বাস করি সেই ফল একদিন পাবই। এই ভাবনার জন্য আমায় যদি কেউ আবেগহীন বলেন, বলতেই পারেন। কিন্তু আমি নিজেকে বাস্তববাদী বলি। অনেক ঠেকে শিখেই এই ভাবনাটা এসেছে। ভবিষ্যতেও কারও জন্য কাজ ছেড়ে দেব না। আমায় বুঝতে গেলে আগে কাজের প্রতি আমার মনোযোগটা বুঝতে হবে।'


আরও পড়ুন: Gaurav Chakrabarty: বাংলা মূলধারার ছবিতে আরও অভিনয় করতে চাই: গৌরব


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।