কলকাতা: যে গল্প লেখার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কিংবদন্তির নাম, যে বই থেকে ছবি হয়েছে একাধিক, সেই চরিত্রকে নতুন আঙ্গিকে ফুটিয়ে তোলা চ্যালেঞ্জ তো বটেই। শেখর-এর চরিত্র ছিল গৌরব চক্রবর্তী (Gaurav Chakraborty)-র কাছে তেমনই একটা চ্যালেঞ্জ। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'পরিণীতা' -কে ওয়েব সিরিজে নিয়ে আসছে 'হইচই' (Hoichoi)। আর সেখানেই শেখরের চরিত্রে অভিনয় করছেন গৌরব। বিপরীতে দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায়। পরিচালনায় অদিতি রায় (Aditi Roy)।


এর আগে যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee), সেফ আলি খান (Saif Ali Khan), সেই চরিত্রে নতুন করে অভিনয় করা কতটা কঠিন ছিল? এবিপি লাইভকে গৌরব বলছেন, 'পরিণীতা এমন একটা গল্প, যেটা প্রায় সবারই পড়া। আর এই গল্প পড়ে প্রত্যেকের মনের মধ্যেই গল্পের নায়ক শেখরকে নিয়ে একটা ধারণা রয়েছে। সেই কল্পনার সঙ্গে ছবিটাকে মেলানোই সবচেয়ে বড় কাজ। তার ওপরে এই চরিত্রে বাঘা বাঘা সব অভিনেতারা অভিনয় করে গিয়েছেন। একটা প্রজন্মের কাছে যেমন শেখরের চরিত্র মানেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তার পরের প্রজন্ম আবার কল্পনা করে সেফ আলি খানকে। তবে আমি সেই বাড়তি চাপটা নিয়ে ভাবি না, তাহলেই মুশকিল। আমি পুরনো কাজগুলো ফিরে দেখি না। বরং বইটাকেই আরও ভাল করে পড়েছি আর আমার কল্পনায় শেখরের চরিত্র ঠিক যেমনটা হওয়া উচিত, পর্দায় সেটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। অদিতি সাহায্য করেছেন। আশা করি দর্শকদের ভাল লাগবে।'


কেমন ছিল শেখরের চরিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা? গৌরব বলছেন, 'অনেক সময়ে যেটা হয়, আমরা চিত্রনাট্য পড়ে, একরকম কল্পনা করে ফ্লোরে যাই। আর অভিনয় করতে গিয়ে সব বদলে যায়। পরিণীতায় কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছিল আমি আর পরিচালক একেবারে, একই লাইনে ভেবেছেন। আমার কল্পনা, আবহসঙ্গীত, গান, দৃশ্য পরিকল্পনাগুলো পর্যন্ত মিলে গিয়েছিল অদিতিদির সঙ্গে। আর তাই আমার এই কাজটা একটা ভীষণ ভাল লাগার কাজ হয়েছে। সেই সঙ্গে যদি দর্শকের ভাল লেগে যায়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা।'


'পরিণীতা' প্রথম পর্দায় দেখেছিলেন গৌরব। বলছেন, 'প্রদীপ সরকারের অ্যাডপ্টেশনটা প্রথমে দেখেছিলাম, বইটা তার পরে পড়া। তারপরে বুঝেছিলাম, প্রদীপ সরকার গল্প, চরিত্র সবকিছুকেই বদলে ফেলেছিলেন। অনেকটা আধুনিকীকরণ ঘটেছিল। আমরা একেবারে গল্পের সময়টাকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যাঁরা বইটা পড়েছেন, তাঁরা যাতে হতাশ না হন, সেই চেষ্টাই করেছি।'


পরিণীতা বড়পর্দায় আসলে কী বেশি খুশি হতেন গৌরব? অভিনেতা বলছেন, 'আমি এখন কোনও মাধ্যমের কাজের মধ্যেই পার্থক্য করছি না। বড়পর্দায় কাজের একটা আলাদা পরিতৃপ্তি রয়েছে। তবে এখন মানুষ পছন্দ করছেন বেশিরভাগ ছবিই বাড়িতে বসে দেখতে। তাই বড়পর্দা আর ওটিটির বিভাজন করার কোনও মানেই হয় না। পুষ্পা, অ্যানিম্যালের মতো ছবিও মানুষ বাড়িতে বসে দেখছেন। তবে ওটিটির মাধ্যমে কাজটা এতগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে সেটাই তো বড় পাওয়া। '


গৌরব নিজে কোন মাধ্যম সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন? অভিনেতা বলছেন, 'আমি যখন মঞ্চে অভিনয় করেছি, সেটার একটা আলাদা ভাললাগা রয়েছে। টেলিভিশন, সিনেমা, শ্রুতিমাধ্যম.. প্রত্যেকটা বিষয়েরই আলাদা একটা মাদকতা রয়েছে। অডিও মিডিয়ামে কাজ করতে ভীষণ ভাল লাগছে। প্রত্যেকটা মিডিয়ামে নিজেকে অভিনেতা হিসেবে নতুন করে আবিষ্কার করছি। তবে থিয়েটারে আরও একটু কাজ করতে পারলে ভাল লাগবে। আর আমি মেনস্ট্র্রিম বাংলা ছবিতে কাজ করার সুযোগ খুব কম পেয়েছি। রাজ চক্রবর্তীর 'আবার প্রলয়' করতে গিয়ে ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলাম। সেইরকম সুযোগ আরও পেলে ভাল লাগবে। বিশেষ করে কোনও চরিত্রের কথা বলতে পারব না। তবে একইরকমের চরিত্রে বারে বারে অভিনয় করতে চাই না। একটু চ্যালেঞ্জিং চরিত্র পেলে ভাল লাগবে।'


গৌরব বাবা হয়েছেন ১ বছরও হয়নি। খুদেকে নিয়ে কেমন সময় কাটছে? অভিনেতা হেসে বললেন, 'দুর্দান্ত। এই সময়টা এত দামি যে আমি আর ঋদ্ধিমা প্রত্যেকটা মুহূর্ত উপভোগ করার চেষ্টা করছি। তবে ঋদ্ধিমা এখন একটু কাজ কম করছে। জি-এর একটা অনুষ্ঠানই করছে, তার জন্য মাসে ৫দিন শ্যুটিং হয়। বাকি দিনগুলো ও ছেলেকে নিয়েই কাটায়। আমি ও যতটা পারি বাড়িতে সময় দিই।'


আরও পড়ুন: Tota Roychowdhury on Kajol: কাজলের গুণগ্রাহী থেকে কাজলের অনস্ক্রিন প্রেমিক! নায়িকার জন্মদিনে স্মৃতি হাতড়ালেন টোটা


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।