কলকাতা: করোনাভাইরাস আবহ, লকডাইনের মাঝে মানুষ প্রায় ভুলেই গিয়েছেন যে কোথা দিয়ে পঁচিশে বৈশাখ পেরিয়ে এসে পড়েছে বাইশে শ্রাবণ। রবীন্দ্র জয়ন্তীর যে মাসব্যাপী অনুষ্ঠান চলে বঙ্গে তা এই বছর বিস্মৃত। প্রয়াণ দিবসও নিষ্প্রাণ। তবে একটা অন্য বিকল্প অবশ্য উঁকি দিচ্ছে। তা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। রবি ঠাকুরের ছোটগল্প অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘ডিটেকটিভ’। তা আগামী ১৪ অগস্ট মুক্তি পাবে ছবি প্রস্তুতকারক সংস্থা এসভিএফ-এর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-এ। উল্লেখ্য, এ ছবি তৈরি হয়েছিল বড় পর্দার জন্যই। কিন্তু অতিমারীতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছবিটির ডিজিটাল মুক্তিই ঘটতে চলেছে। দেশ জুড়েই ঘটছে এখন এই ঘটনা। হিন্দি ছবির ক্ষেত্রে বারবার এমন ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ে। মনে পড়ে যেতে পারে অ্যামাজন প্রাইমে ‘গুলাবো সিতাবো’, ডিজনি হটস্টারে ‘দিল বেচারা’, কিংবা নেটফ্লিক্সে ‘গুঞ্জন সাক্সেনা’র মুক্তি পাওয়ার কথা।


এবার সেই ধাক্কা টালিগঞ্জেও। এই প্রথমবার হলের জন্য তৈরি কোনও বাংলা ছবি ওটিটি-তে মুক্তি পেতে চলেছে বলে দাবি প্রযোজনা সংস্থাটির। ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার আগামী ১৪ অগস্ট। সেদিনই প্রথমবারের জন্য হইচই-য়ে ছবিটি দেখতে পাওয়া যাবে।
ছবি সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় অনির্বাণ বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের গল্পটা নিয়ে সৌগত বসু একটা চিত্রনাট্য করেছেন। রবি ঠাকুরের গল্পের জিস্টটাই রাখা হয়েছে, তবে সঙ্গে ব্যাকড্রপে রয়েছে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন। মহিমের সঙ্গে তার স্ত্রী-র কেমিস্ট্রিটা আরেকটু এক্সটেনশন করা হয়েছে। মহিমচন্দ্রের চরিত্রের যে নির্যাস তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। কাহিনির চলনকে কমেডি বলা যেতে পারে, আবার একটা মানুষের ইচ্ছের ট্র্যাজিক পরিণতিও বলা যেতে পারে, যে কীনা সফল গোয়েন্দা হতে চায় কিন্তু কোথাও একটা মিসফায়ার গোছের হয়ে যায়।‘
প্রসঙ্গত, জয়দীপ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্র পুলিশ ডিটেকটিভ মহিমচন্দ্রের ভূমিকায় রয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য।মহিম সবসময় একটা জটিল কেস খোঁজে যা সমাধান করে সে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে বিখ্যাত হতে পারবে। মহিমের প্রথম প্রেম শার্লক হোমস-সহ বিভিন্ন ডিটেকটিভ গল্পের বই। আর দ্বিতীয় প্রেম স্ত্রী সুধাকুমারী (ইশা সাহা)। জটিল কেস খুঁজতে গিয়ে মহিমের সঙ্গে আলাপ হয় মন্মথ নামে এক যুবকের (সাহেব ভট্টাচার্য)। আর ডিটেকটিভ মহিমের ‘ওয়াটসন’ হলেন হুতাশনের (অম্বরীশ ভট্টাচার্য)। মহিমের এক বিধবা বোনও রয়েছে যার নাম স্নেহলতা (তৃণা সাহা)।
এসভিএফের অন্যতম কর্ণধার মহেন্দ্র সোনি বলেন, ‘এই প্রথমবারের জন্য আমাদের তথা বাংলায় তৈরি কোনও ছবি সরাসরি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেতে চলেছে। তাই বিষয়টি নিয়ে আমরা বেশ উত্তেজিত। কোভিড পরিস্থিতির জন্যই বাধ্য হয়ে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।আশা করছি মানুষের ভালো লাগবে।‘ অনুরূপ উত্তেজনার রেশ হইচই প্ল্যাটফর্মের কো-ফাউন্ডার বিষ্ণু মোহতার গলায়ও।
ব্যোমকেশের মতো সিরিয়াস গোয়েন্দার চরিত্র করার পর এই চরিত্রটা করতে কেমন লেগেছে জানতে চাওয়ায় অনির্বাণ বলছেন, ‘সেটার জন্যই ব্যাপারটা এনজয় করেছি। গোয়েন্দা ট্যাগটাকে নিয়ে একটা কমেডির এমন চেষ্টা আমাদের এখানে তেমন একটা হয়নি আগে। সিরিয়াসনেসের বাইরে যে একটা এক্সপেরিমেন্ট হয়েছে, সেটা ভালো লেগেছে। সৌগতদা যেভাবে স্ক্রিপ্টটা লিখেছেন, জয়দীপদা যেভাবে ছবিটা পরিচালনা করেছেন তাতে শুধুমাত্র সারাক্ষণ হাসার মতো নয় কিন্তু ছবিটা। বঙ্গভঙ্গের মতো একটি সিরিয়াস প্রেক্ষাপটও কিন্তু সঙ্গে চলছে।‘
অনির্বাণের সংযোজন, ‘অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে এই ছবি করতে গিয়ে।জয়দীপদার পরিচালনায় এই প্রথম কাজ করলাম। সাহেব, ইশার সঙ্গেও এটা আমার প্রথম কাজ। আবার অম্বরীশদার সঙ্গে ছবিটায় অনেকটা পরিসরে ডুয়ো হিসেবে কাজের একটা অভিজ্ঞতা হল।‘ আবার প্রথম ডিজিটালে মুক্তি পাওয়া কোনও বাংলা ছবির শরিক হতে পারারও অভিজ্ঞতা নিয়েও রীতিমতো উত্তেজিত অনির্বাণ।