কলকাতা: অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে চুপি চুপি ঢুকে পড়লেন তিনি। সবার চোখ তখন বড়পর্দায়, কেউ লক্ষ্যই করলেন না। কালো পোশাক পরা একজন কখন হল পেরিয়ে দ্রুত পায়ে মঞ্চের সিঁড়ি অবধি পৌঁছে গিয়েছে কেউ খেয়ালই করেননি। আলো জ্বলে উঠতেই স্বভাবসিদ্ধ উচ্ছ্বলতার মাইকের সামনে চলে এলেন তিনি। গোটা হল ফেটে পড়ল উচ্ছাসে, চিৎকারে। বেশ কয়েকজন অল্পবয়সী তরুণী একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন আনন্দে। কান পাতলে শোনা গেল.. কেউ একজন বলছেন, 'আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।' মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই উচ্ছ্বাস উপভোগ করছিলেন তিনি, মুখে যেন প্রশ্রয়ের হাসি। চিৎকার একটু কমলে মাইকটা হাতে নিয়ে বলে উঠলেন, 'নমস্কার, আমি দেব (Dev)! ফের উল্লাসের শব্দে এক মুহূর্ত কথা থামিয়ে দিতে হল তাঁকে।
এক মাস পেরিয়েও হাউজফুল 'টনিক' (Tonic)। রবিবার নন্দনে অনুরাগীদের চমকে দিতে হাজির হয়েছিলেন দেব স্বয়ং। হলের মধ্যের সেই আনন্দ, উচ্ছ্বাস কতটা ছুঁল দেবকে? হাসতে হাসতে দেব বললেন, 'আজ তো ছবি মুক্তির প্রথম রবিবার নয়, ৬ সপ্তাহ ধরে হাউজফুল হচ্ছে 'টনিক'। এই ছবিটা নিয়ে একটা অন্যরকম স্মৃতি আছে। 'টনিক' মুক্তি পেয়েছিল ২৪ শে ডিসেম্বর। ২০-২২ ডিসেম্বর থেকে আমরা নিয়মিত ফোন করতাম হল মালিকদের। বলতাম 'একটা শো দিন।' কেউ বলতেন আমাদের কাছে বড় হিন্দি ছবি আছে, কেউ বলতেন দক্ষিণী ছবি আছে। ভালবেসে, পায়ে ধরে যতগুলো শো পেয়েছিলাম, তাতেই ছবিটা রিলিজ করলাম। আজ ৬ সপ্তাহ পর 'টনিক'-এর ধারে কাছে কোনও ছবি নেই। আমি যতদিন বাঁচব, 'টনিক'-এর মুক্তির পিছনের লড়াইটা আমার মনে থাকবে। আমরা অন্তত বাংলা ছবির মানসম্মানকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছি।'
আরও পড়ুন: বয়সের পার্থক্য সমস্যা নয়, 'আমার তোমায় ভালো লাগে' প্রেমে এটাই যথেষ্ট
কেবল দর্শকের ভালোবাসা নয়, অন্যান্য পরিচালক থেকে শুরু করে অভিনেতা, অভিনেত্রী, সফল বাংলা ছবির কথা বলতে গিয়ে অনেকেই উদাহরণ হিসেবে 'টনিক' বা 'গোলন্দাজ'-এর নাম করছেন। এটা কী উপরি পাওনা? লাজুক হেসে দেবের উত্তর, 'ভাবতে ভালো লাগে, করোনা পরিস্থিতির পর সফল দুটো বাংলা ছবির সঙ্গেই আমার নাম জড়িয়ে আছে। আমরা সিনেমাহলে দর্শককে ফেরাতে পারলাম। আর হ্যাঁ, অন্য ভাষার ছবির কাছে হার মানলাম না। একটা সময় লড়াইটা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, বাংলা ছবি কে দেখবে? আজ সেই বাংলা ছবিই সিনেমাহল এতদিন খুলিয়ে রেখেছে আর টানা হাউজফুল দিচ্ছে। আমরা বাংলা ছবির দর্শকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই এটার জন্য। বাঙালি হারল না, বাংলা ছবি আবার জিতল।'