কলকাতা: সাদা শাড়ি, মাথায় ঘোমটা। চুলে পাক ধরেছে অল্প বিস্তর। রোজ সন্ধেবেলা নিয়ম করে এই বেশেই ড্রইংরুমের টিভি স্ক্রিনে হাজির হন তিনি। ধারাবাহিকে তাঁর চরিত্রের নাম, রানি রাসমণি। কিন্তু টেলিভিশনের পর্দার বাইরে তিনি ছোট চুল, জিন্স-টপের অষ্টাদশী তরুণী, দিতিপ্রিয়া রায়। ধারাবাহিকের ১০০০ এপিসোড পেরিয়ে তাঁর জীবনযাত্রাতেও প্রভাব ফেলেছে ‘রানিমা’-র চরিত্র। কিন্তু ছোট পর্দার বাইরে ঠিক কেমন সদ্য কলেজে পা দেওয়া সোশিওলজির ছাত্রী? গোয়া থেকে ফিরে এবিপি আনন্দর সঙ্গে আড্ডায় মজলেন দিতিপ্রিয়া।



করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে কলেজ, চলছে অনলাইন ক্লাস। কলেজ জীবনের স্বাদ থেকে তাই এখনও বঞ্চিত দিতিপ্রিয়া, হয়নি নতুন বন্ধুও! কেন? অভিনেত্রী বলছেন, ‘সোশিওলজি নিয়ে পড়ছি।  মার্চে কলেজের প্রথম সেমিস্টার। শ্যুটিং, পড়াশোনা সমস্ত কিছু নিয়ে বেশ চাপে রয়েছি। আর আমি অনলাইন বন্ধুত্বে বিশ্বাসী নই। সামনে গিয়ে কথা না বললে, ঠিক বন্ধু হয় না।’



ইনস্টাগ্রাম খুললেই বিভিন্ন মুডে দিতিপ্রিয়ার ছবি চোখে পড়ে। কখনও শাড়ির সঙ্গে কোমর ছাপানো চুলে ফটোশ্যুট আবার কখনও হটপ্যান্ট-টি শার্টে প্রকৃতির কোলে ছুটি কাটাচ্ছেন তিনি। আবার টিভি খুললেই সাদা-শাড়ি কাঁচাপাকা চুলে ঐতিহাসিক চরিত্র দিতিপ্রিয়া। ছোটপর্দার ‘রানিমা’ কখনও কি ছাপিয়ে যায় মানুষ দিতিপ্রিয়াকে? আমার আর রাসমণির বয়সের এতটা পার্থক্য, যে অনেক ক্ষেত্রে লোকজন আমায় পর্দার বাইরে দেখে চমকে যায়। আমি এত ছোট কেউ ভাবতেই পারেন না,’ হেসে ফেললেন দিতিপ্রিয়া। তারপর বললেন, ‘রানি রাসমনি সত্যিই এখন দিতিপ্রিয়াকে ছাপিয়ে গিয়েছে। তবে আমি দিতিপ্রিয়া হয়েই সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ। আমি যে চরিত্রে অভিনয় করি তাঁকে অবশ্যই সম্মান করি। তবে ছোটপর্দার বাইরে দিতিপ্রিয়া একটা অন্য মানুষ। তার নিজস্ব একটা জীবন রয়েছে। সেটাকে নিজের মতো করে উপভোগ করি। সেখানে কারও কিছু বলার থাকতে পারে না।’



ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত ‘গানের ওপারে’  ধারাবাহিকে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল মিমি চক্রবর্তী অভিনীত ‘পুপে’ চরিত্রটি।  মিমিও সেই সময় কলেজ ছাত্রী ছিলেন। ধারাবাহিক শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও মিমিকে ‘পুপে ইমেজ’ থেকে বেরনোর জন্য সাময়িক বিরতি নিতে হয়েছিল অভিনয়ে। দিতিপ্রিয়ার ক্ষেত্রেও কি তেমন হবে? অভিনেত্রী বলছেন, ‘আমি রানি রাসমনি ধারাবাহিক ছাড়াও অনেক কাজ করছি। আশা করি অন্য চরিত্রে অভিনয় করলে দর্শকদের আমায় মেনে নিতে অসুবিধা হবে না। তবে আমার বাংলা উচ্চারণটা ঠিক করতে এক-দু মাস সময় লেগে যাবে। রাসমণির মতো কথা বলা এমনই অভ্যাস হয়েছে, এখন বাড়িতেও মাঝে মধ্যেই রাসমণির মতো করে কথা বলে ফেলি!’



১৮ বছরে পা দিয়েছেন অভিনেত্রী। সামনেই নির্বাচন। দিতিপ্রিয়া এবার প্রথম ভোটার। রানি রাসমণি হাসিমুখে অনেক রাজনীতি সামলালেও দিতিপ্রিয়ার রাজনীতিতে আগ্রহ আছে কি? ‘আমি এখনও ভোটার কার্ড হাতে পাইনি, তাই এখন নির্বাচন নিয়ে কোনও কথা নয়। এই বছর ভোট নাও দিতে পারি। আমি খুব ডিপ্লোম্যাটিক,’ যেন রহস্য জিইয়ে রাখতে চাইলেন। দিতিপ্রিয়া বললেন, ‘এখন আমি কাজ করছি, শুধু সেদিকেই মন দিতে চাই। রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করার বয়স এখনও হয়নি।’



সোশ্যাল মিডিয়ায় দিতিপ্রিয়ার অভিনীত চরিত্র নিয়ে ট্রোল, মিম হয়েছে অনেক। বেশ অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও বদলায়নি সেই ধারাটা। সোশ্যাল মিডিয়ায় কুরূচিকর মন্তব্যের শিকার হচ্ছেন একাধিক অভিনেত্রী। দিতিপ্রিয়া বলছেন, ‘ট্রোল, মিম আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। যখন আমি এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, আমি তখন অনেক ছোট। খারাপ লাগত। এখন মনে হয়, কেউ যদি আমায় নিয়ে মিম বানিয়ে মজা পায় তাতে কিছু বলার নেই। বরং আমার ভালোই লাগে আমি একজনকে আনন্দ দিতে পারছি।  তবে মেয়েরা সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব সফট টার্গেট। মেয়েদের আক্রমণ করাটা ভীষণ সহজ বলে মনে করে সবাই। এই জিনিসটা আমায় একজন নারী হিসাবে খুব কষ্ট দেয়।’



ইন্ডাস্ট্রিতে দিতিপ্রিয়ার প্রেম নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। যদিও সেই কথা উড়িয়ে দিয়েছেন অভিনেত্রী। তবে অভিনেত্রীর গুণমুগ্ধর সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। প্রেমিক হিসাবে কেমন মানুষ পছন্দ তাঁর? দিতিপ্রিয়া বললেন, ‘পরিকল্পনা করে তো প্রেম হয় না। তবে এটুকু বলব, আমি খুব চাপা স্বভাবের।  ভীষণ মুড স্যুইং করে। জীবনে একটা মানুষ এমন থাকবে যে দিনের ক্লান্তির শেষে ফোন করে বলবে, কেমন কাটালে দিনটা? একটু কেয়ার করবে আমার। ব্যাস আর কিচ্ছু চাই না। ’



একদিনের জন্য রানিমার মত ক্ষমতা পেলে কী করতেন দিতিপ্রিয়া?  ‘রানিমা মেয়েদের জন্য যা যা করতেন, ঠিক তাই তাই করতাম,’ সপ্রতিভ উত্তর দিতিপ্রিয়ার। যোগ করলেন, ‘এমন কোনও আইন করতে চাই, যাতে মেয়েদের ওপর সমস্তরকমের অত্যাচার বন্ধ হয়।’




ছবি সৌজন্য: ইনস্টাগ্রাম