তোর্ষা ভট্টাচার্য্য, কলকাতা: খুব ছোট্ট, কিন্তু ছোটবেলার পুজোয় সময় ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা মনকে নাড়া দিয়ে যায় এখনও! পুজোর গন্ধ, মা দুর্গার আগমন, নতুন জামা... এখনও মনে করিয়ে দেয় সেই দিনটাকে। তাই পুজোয় কখনও নিজের জন্য নতুন জামা কেনেন না তিনি। এমনকি উপহার পেলেও তা পুজোর সময় পরেন না। কী সেই ঘটনা যার স্মৃতি এখনও তাজা বর্ষীয়ান অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Paran Bandhopadhay) মনে? পুজোর আগে, এবিপি লাইভকে (ABP Live) ফেলে আসে পুজোর গল্প শোনালেন অভিনেতা।
ছোটবেলা কেটেছে চূড়ান্ত দারিদ্রে। তারপরে সময় বদলেছে, জীবন বদলেছে অভিনেতার। এখন কেমন কাটে তাঁর পুজো? পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, 'প্রত্যেক বছর আমি যেমন করে পুজো কাটাই, তেমনই কাটবে। কোনোদিনই আমি পুজোয় বাইরে বেরোই না। নতুন পোশাকও পরি না। বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক উপহার পাই, পোশাকও। নিজেও উপহার দিই। তবে এই চারটি দিন আমার বাড়িতেই কাটে। এর অবশ্য একটা বিশেষ কারণ রয়েছে।'
কী সেই কারণ? প্রশ্ন করতেই, কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে অভিনেতা ফিরে গেলেন তাঁর কৈশোরে। পরাণ স্মৃতিতে ডুব দিয়ে বলতে লাগলেন, 'তখন সদ্য কৈশোর থেকে যৌবনে পা দিয়েছি। একদিন পাড়ার মণ্ডপে গিয়েছি ঠাকুর দেখতে। অভাব থাকলেও সেসময়ে পুজোয় এক দুটো নতুন জামা হত। সেটা পরেই গিয়েছি। ঠাকুর দেখতে দেখতে হঠাৎ নজর গেল মণ্ডপের গেটের দিকে। পায়ে পায়ে সেখানে এসে দাঁড়িয়েছে একটি বাচ্চা মেয়ে। তার পরণে শতছিন্ন একটা জামা, কিন্তু ঠাকুর দেখার লোভ সামলাতে পারেনি। ওই ছেঁড়া জামা পরেই মণ্ডপের দরজায় দাঁড়িয়ে সে ঠাকুর দেখছে। এক ঝলকে আমার সমস্ত আনন্দ যেন ম্লান হয়ে এল। মনে হল, ওর ছেঁড়া জামাটা যেন আমায় বিদ্রুপ করছে। আমিও তো একটা সময় ওইরকম দারিদ্রতাই দেখেছি। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি এসে নতুন পোশাক ছেড়ে ফেলেছিলাম। সেই স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছি আমি। একা গোটা পৃথিবীর দারিদ্র দূর করতে পারব না, তবে পুজোয় নতুন জামা পরতে গেলেই, ওই মেয়েটির ছেঁড়া জামাটা আমার এখনও মনে পড়ে।'
এক মুহূর্ত থামলেন প্রবীণ অভিনেতা। তারপরে আবার বললেন, 'বাড়ির বড়রা থাকতে শাসন করে নতুন জামা পরাতেন। যবে থেকে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় এসেছি, পুজোর সময় নতুন পোশাক আমি আর পরি না। আজও আমার কাছে কোনও ব্যাখ্যা নেই, সদ্য যৌবনে পা দেওয়ার সময় দেখা সেই দৃশ্য কেন আজও এত বুকে বেঁধে আমার।'
আরও পড়ুন: Dawshom Awbotaar New Song: অনুপম আর রূপমের যুগলবন্দিতে হাজির 'আগুনখেকো'!