মুম্বই:অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পর স্বজনপোষণ ও পক্ষপাতিত্বর অভিযোগ ঘিরে উত্তাল বলিউড। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতেও এ ধরনেই বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন জনপ্রিয় গায়ক সোনু নিগম। এরপর অনেকেই মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে ক্ষমতার খেলার কালচার ও কীভাবে নতুন গায়করা পর্যাপ্ত সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তা নিয়ে সরব হয়েছেন। আর এই বিতর্কের মধ্যেই অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে, স্বজনপোষন ও পক্ষপাতিত্বে এই ধারা আগেও ছিল, নাকি তা একেবারেই সাম্প্রতিক কালেই হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে গায়ক অভিজিত ভট্টাচার্য বলেছেন, এখন এটা খুব বেশি হচ্ছে। ৯০-এর দশকে এমনটা ছিল না। ওই সময় এমনটা ভাবা যেত না। একটা গান এক শিল্পীর থেকে অন্য শিল্পীকে দিয়ে গাওয়ানোর ঘটনা তখনও ঘটত। কিন্তু কারণবশত তা ঘটত, এখনকার মতো নয়। তখন এত নোংরামি ছিল না। সিনেমার পরিচালক বা সুরকার গায়ক কে হবেন, কোনও কোম্পানি বা অভিনেতা তা স্থির করতেন না।
বহিরাগত লোকজনদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে অভিজিত্ বলেছেন, এখন সলমন খান কে, যে যিনি ঠিক করবেন কোন গান কোন শিল্পী গাইবেন? কোনও এক শিল্পীর থেকে গান নিয়ে তা নিজে গাওয়ার মতো সলমন কে? এটা স্পষ্টভাবে পক্ষপাতের ঘটনা।
গায়িকা কবিতা কৃষ্ণমূর্তিও মনে করছেন, এটা একেবারেই নতুন আমদানি। তিনি বলেছেন, আমার সময় স্বজনপোষণ ছিল না। তখন শিবির ও পছন্দ ছিল, কিন্তু এতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হত না। একজন প্রযোজক কখনও সুরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করতেন না। তাঁদের আরডি বর্মন, খৈয়াম সাব বা ওপি নায়ার বা রবীন্দ্র জৈনের মতো ব্যক্তিত্বদের বিশেষ কোনও গায়ককে দিয়ে গাওয়ানোর কথা বলার সাহস ছিল না। তাঁরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতেন। কোনও বিশেষ গান কোনও এক শিল্পীর গলার অনুকূল না হলে তাঁরা আলাদা টিউন তৈরি করে নিতেন।
"তু চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত মস্ত" গায়িকা আরও বলেছেন, এই সময় একটাই মাপকাঠি ছিল, গলা মানানসই হতে হবে। সুরকাররা অলকা ইয়াগনিক, অনুরাধা পড়োয়াল ও তাঁর মতো শিল্পীদের ভিন্ন ভিন্ন গলার জন্য গান তৈরি করতেন।
"চোলি কে পিছে ক্যায়া হ্যায়"-এর মতো গানের শিল্পী ইলা অরুণ সঙ্গীত শিল্পের হর্তাকর্তাদের ধান্দাবাজির খেলার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। ৬৬ বছরের গায়িকা বলেছেন, তদবির ও স্বজনপোষণের জন্য যতই পরিশ্রম করুন না কেন, একজন ভাল সুরকার এখন সফল হতে পারেন না।
তাঁর আক্ষেপ, মাফিয়া রাজ চলছে। এটা কারুর কেরিয়ার খতম করার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চেষ্টা। এখনও ভালো ও প্রতিভাবান শিল্পী রয়েছেন। কিন্তু আগে সব কিছুই খোলামেলা ও স্বাস্থ্যকর ছিল। এখন তো ৫ বা ছয় সুরকারের নামই ঘোরাফেরা করে। এটার কারণ, গুণ্ডা সংস্কৃতি।
এই বিতর্কে অবশ্য কোনও রকম মন্তব্য থেকে দূরে থেকেছেন উদিত নারায়ণ। কারণ তিনি মনে করেন, লোকে ভাবতে পারে যে, আমি কাজ পাচ্ছি না, তাই এত কথা বলছি।
চার দশক ধরে বলিউডে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করা শিল্পী স্বীকার করেছেন যে, সাম্প্রতিককালে পক্ষপাতিত্ব ও স্বজনপোষণ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। উদিত বলেছেন, ৯০-এর দশক ছিল সোনালী যুগ। এখনকার গান ও কথায় কিছুর অভাব রয়েছে। এখনকার প্রজন্মও খুবই প্রতিভাবান। কিন্তু সমস্যা হল যে, সবাই রাতারাতি তারকা হয়ে যেতে চায়। তাই তাৎক্ষণিক সাফল্যের পথে হাঁটতে চায়। আর এটাই এত বেশি রিমিক্সের কারণ।