কলকাতা: সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট ফেলুদা-র দুটি গল্প নিয়ে চলছে ওয়েব সিরিজের কাজ। একটি ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’ এবং অন্যটি ‘যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে’।লকডাউনে কি কাজ আটকে গিয়েছে, জানতে চাওয়ায় পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘সৌভাগ্যবশত আমাদের শ্যুটিং লকডাউনের আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে। যা যা বাড়িতে বসা করা সম্ভব সেগুলো আমরা করেছি, কিন্তু স্টুডিও গিয়ে যে কাজগুলো করার সেগুলো লকডাউনের পরে আমরা শুরু করেছি। শিথিল গতিতে হলেও কাজ চলছে।‘
‘ছিন্নমস্তা’র কালার কারেকশন আর গ্রাফিক্স বাদে সব হয়ে গিয়েছে। ‘কঠমান্ডু’-র এখন ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরিং চলছে। আশা করছি পুজোর আগেই দেখতে পাওয়া যাবে। এই মাসে ‘ছিন্নমস্তা’ হয়ে যাবে, ‘কাঠমান্ডু’ হয়ে যাবে সেপ্টেম্বরে’, আশ্বাস দিলেন সৃজিত।
এই দুটো গল্প নেওয়ার আলাদা করে কোনও কারণ রয়েছে কী? সৃজিতের ব্যাখ্যা, ‘আমার প্রিয় টপ-ফাইভ ফেলুদার গল্পের মধ্যে এই দুটো গল্পই সবার উপরে।এর মধ্যে ‘ছিন্নমস্তা’ আগে কখনও হয়নি, সেটা অবশ্যই একটা অ্যাডেড অ্যাট্রাকশন। ‘কাঠমান্ডু’ তো বহুবার হয়েছে। সব মিলিয়ে সকলের ভালো লাগবে আশা করি।‘




এটা সত্যজিৎ রায়ের শতবর্ষ। সে কথা মাথায় রেখেই কি ফেলুদা ওয়েব সিরিজ বানানোর পরিকল্পনা নেওয়া হল? তেমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে সৃজিত বলছেন, ‘না তেমন নয়। এটা একেবারেই কাকতালীয় ঘটনা। কেমনভাবে হল বলছি। একদিন আমি প্রযোজক নিশপাল সিং রানের কাছে গিয়েছিলাম অন্য একটি সিনেমা নিয়ে আলোচনা করতে। রানে আড্ডা টাইমসের মালিক। রানে আমায় বলেন যে তিনি ফেলুদা, ব্যোমকেশ নিয়ে ওয়েব সিরিজ তৈরি করার কথা ভাবছেন। শুনেই আমি সিনেমার কথা বাদ দিয়ে বলে দিই আমি ফেলুদা ওয়েব সিরিজে করতে চাই। এবার ঘটনাক্রমে বিষয়টা যে সত্যজিত রায়ের জন্মশতবর্ষে ঘটছে এতে অবশ্যই আনন্দিত আমি।‘
এ ব্যাপারে সৃজিতের আরও সংযোজন, ‘আমি ফেলুদার বিরাট ভক্ত। ফেলুদা নিয়ে আমি অনেকদিন ধরেই সিনেমা করতে চেয়েছিলাম। আমি যখন অনেক বছর আগে নাটক করতাম তখন আমার প্রথম নাট্য প্রযোজনাও ছিল ‘ফেলুদা ফেরত’। আমি নাটকটা লিখেছি, পরিচালনা করেছি, এমনকি অভিনয়ও করেছি।এবার যখন আমি ফেলুদা নিয়ে ওয়েব সিরিজ করার সুযোগ এল তখন তো করতেই হবে। ঝাঁপিয়ে পড়লাম বলা যায়।‘
টোটা রায়চৌধুরীকে ফেলুদা হিসেবে বেছে নেওয়ার প্রসঙ্গে সৃজিত বলছেন, ‘আমি বাবুদার (সন্দীপ রায়) ‘টিনটোরেটোর যিশু’ দেখার পর প্রিয়া সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে টোটার সঙ্গে দেখা। ও ওই ছবিটায় একটা অন্য চরিত্র করেছিল। ওকে সেদিন বলেছিলাম আমি যদি কোনও দিন ফেলুদা করি তোমায় নেব।‘
কারণ জানতে চাওয়ায় সৃজিত বলছেন, ‘সত্যজিত রায়ের যে ফেলুদার স্কেচ তার সঙ্গে টোটার মুখের মারাত্মক মিল। আমরা যদি সমস্ত নস্টালজিয়া, ব্যক্তিগত ভালোলাগা সরিয়ে অবজেক্টিভলি দেখি, তাহলে মানিক বাবুর স্কেচের সঙ্গে টোটার মুখের মিল ম্যাক্সিমাম। তাছাড়া টোটাকে আমার খুব আন্ডার রেটেড অ্যাক্টর বলে আমার মনে হয়।খুব পরিশ্রমী অভিনেতা।আর ঋতুদার দুটো কাজ করার পর আমি ভেবেছিলাম ও আরও অনেক কাজ করবে। ‘চোখের বালি’-র বিহারী, আর ‘শুভ মহরৎ’-এর পুলিশ অফিসার দেখার পর আমার মনে হয়েছিল ইন্ডাস্ট্রি টোটাকে আরেকটু বেটার ইউটিলাইজ করতে পারতো।‘
টোটা এমন প্রস্তাব কেমনভাবে গ্রহণ করলেন জানার ইচ্ছা হল পরিচালকের কাছে।
‘ফেলুদা ওর ড্রিম রোল। প্রিয়া সিনেমার সামনে কথার পর অনেকদিন ওর সঙ্গে কথা হয়নি। কাজ করা হয়নি। হারিয়ে গিয়েছিল প্রসঙ্গটা। কিন্তু রানের সঙ্গে কথা হওয়ার পর আমি যখন ওকে ফোন করলাম, জানালাম, তারপর ও যখন এল আমার মনে হল ও দিনের পর দিন নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রস্তুত করেছেন ফেলুদা হিসেবে। ডিরেক্টর অবশ্যই বুঝিয়ে দেন, কিন্তু অভিনেতাকেও তো এক্সিকিউট করতে হয়। টোটা অনেকখানি প্রস্তুত হয়েই এসেছিল ফেলুদা হিসেবে।‘
‘জটায়ুর কাস্টিং আমায় করতে হয়নি। একেনবাবু দেখার পর গোটা বাংলাই জটায়ু হিসেবে অনির্বাণ চক্রবর্তীকে বেছে নিয়েছিল। এটা বরং ইজিয়েস্ট কাস্টিং ছিল। দ্বিতীয়বার ভাবা-চিন্তার ব্যাপারই ছিল না।আর তোপসে করেছে কল্পন মিত্র। ওকে আমি একটি বিস্কুটের বিজ্ঞাপনে প্রথম দেখি। মনে হয়েছিল ও ভাল তোপসে হতে পারে। পরে অডিশন দেওয়ার পর সিলেক্টেড হয়’, জানালেন সৃজিত।

সৃজিত বরাবরই বড়পর্দার কাজ করেছেন।বক্স অফিস সাফল্য থেকে জাতীয় পুরস্কার, সবই এসেছে বড়াপর্দার জন্য। পর্দা বনাম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বিষয়টি তোলায় বললেন, ‘সিনেমার হল আর ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। এই সহাবস্থান যথেষ্টই সম্ভব। আমার কাজ করতেও কোনও সমস্যা হয়নি। করোনার জন্য সিনেমা হল সাফার করছে সত্যি। কিন্তু আগামী বছরের মধ্যে ভ্যাকসিন বেরিয়ে যাবে শোনা যাচ্ছে। তারপর থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলেই আমার ধারণা।ভাষাগত দিক থেকে সিনেমার সঙ্গে ওয়েবসিরিজের মিল আছে, আবার কিছু জায়গায় তফাৎও আছে। আমি নানা প্ল্যাটফর্মে, নানা ভাষায় বহু ওয়েব সিরিজ দেখে ভাষাটা শেখার চেষ্টা করেছি।ফেলুদা-য় অ্যাপ্লাই করেছি।‘
তাই আপাতত অপেক্ষা স্মার্টফোন চালু করে ফেলুদা সিরিজ দেখার। পুজোর আগেই নয়া অবতারে উপস্থিত হতে চলেছেন বাঙালির প্রিয় গোয়েন্দা!