কলকাতা: মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়ির বইয়ের আলমারিতে উঁকি দেবেন, অথচ ফেলুদা, ব্যোমকেশ আর শরৎ রচনাবলী চোখে পড়বে না, এমনটা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু, শরৎ রচনাবলীর কোনও চরিত্রের যদি হঠাৎ করে গোয়েন্দা হয়ে যায়? নাহ, নাম এক হলেও এই চরিত্র রবীন্দ্ররচনাবলী থেকে উঠে আসা নয়। ফেলুদা বা ব্যোমকেশের সঙ্গেও এর বিস্তর ফারাক। প্রখর স্মৃতিশক্তি যেখানে গোয়েন্দা হওয়ার অন্যতম শর্ত, সেখানে এই গোয়েন্দার ভুলে যাওয়ার রোগ রয়েছে। বদমেজাজি, মুখরা এই গোয়েন্দা ভীষণ পছন্দ করেন বেসুরো গান গাইতে! এমন এক চরিত্র গল্পের নায়ক! চিত্রনাট্য হাতে পেয়ে ঋত্বিক চক্রবর্তীর (Ritwick Chakraborty) মনে হয়েছিল, 'এমন মানুষকে দর্শকদের ভালোবাসার যোগ্য করে তোলাই তো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ!'
'হইচই'-তে সদ্য মুক্তি পেয়েছে গোরা (Gora)। ঋত্বিক চক্রবর্তী, ইশা সাহা (Isha Saha) অভিনীত এই সিরিজ গোয়েন্দা গল্প শোনাবে। কিন্তু এই সিরিজের নায়ক, অর্থাৎ গোয়েন্দা গোরা ভারি অদ্ভুত। ফেলুদা, ব্যোমকেশ, শার্লক হোমসের মতো গোয়েন্দাদের চেনা ছকের একেবারে উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে এই চরিত্র। কেমন ছিল গোরা হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা? এবিপি লাইভের প্রশ্নের উত্তরে ঋত্বিক বলছেন, 'এই প্রথম কোনও গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করলাম। আমরা বাঙালিরা সব গোয়েন্দাদেরই বেশ পছন্দ করি। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। তবে গোয়েন্দা বলতে মাথায় যে ছবিটা ফুটে ওঠে, সেটার একেবারে উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে এই গোরা। সেইটাই একটা মজা। কিন্তু গোরা মুক্তি পাওয়ার পর মানুষ যেভাবে গোরাকে ভালোবাসছেন, মনে হচ্ছেন কাজ করাটা সার্থক। গোরার কোনও রেফারেন্স ছিল না। গোরার চরিত্রের যে দিকগুলো দেখানো হয়েছে, সেটা বাস্তবে কোনও মানুষের মধ্যে থাকলে তাকে ভালো লাগার কথা নয়। গোরা নাম ভুলে যায়, সে বদমেজাজি, খিটখিটে, মানুষকে অপমান করে... এগুলো তো গুণ নয়, এগুলো দোষ। সেই দোষগুলোকেই ভালোলাগার জিনিস হিসেবে তুলে ধরতে হয়েছে। আমি একটা নির্দিষ্ট গণ্ডি কেটে নিয়েছিলাম, যে এর বাইরে অভিনয় করব না। গোরাকে একটা জায়গায় আটকে রাখা জরুরী ছিল। এর বাইরে গেলে মানুষের খারাপও লাগতে পারে। গোরার মতো একটা খিটখিটে, বদমেজাজি চরিত্রকে দর্শকদের ভালোবাসতে বাধ্য করাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এখন গোরা ভালো প্রতিক্রিয়া পেলে তাই ভালো লাগছে।'
আরও পডুন: গোগ্রাসে খেতে হয়েছে পচা ভাত, কেউটে সাপকে চুম্বন করেছিলেন চান্দ্রেয়ী!
পর্দায় নিজে গোয়েন্দা। কিন্তু বাস্তবে ঋত্বিকের পছন্দের গোয়েন্দা কে? অভিনেতা বললেন, 'যদি বাংলার মধ্যে বলি, আমার সবচেয়ে পছন্দ ব্যোমকেশকে। তবে আমরা সবাই ফেলুদা পড়ে বড় হয়েছি। তাই ফেলুদা নিয়ে একটা নস্ট্যালজিয়া কাজ করে সবসময়।'
গোরা কেবল গোয়েন্দা নয়, আদ্যোপান্ত মজার একটা চরিত্রও বটে। শ্যুটিং সেটে মজা হত? অভিনেতা বলছেন, 'গোরার নাম ভুল বলার অভ্যাস ছিল। ভুল নাম বলতে বলতে এমন অভ্যাস হয়েছিল, একটা সময় আর স্ক্রিপ্ট দেখতাম না। যা নাম মাথায় আসত বলে যেতাম। পরে ডাবিংয়ের সময় দেখেছি, ভুল নাম বলতে বলতে কোথাও কোথাও সঠিক নামই বলে ফেলেছি। আবার বদলাতে হয়েছে। গোরার অনেক মজার মজার ডায়লগও ছিল। শ্যুটিং করার সময় সেগুলো বলতে গিয়ে গোটা সেট হাসত। তখন একটা আত্মবিশ্বাস কাজ করত। মনে হত, দর্শকেও নিশ্চয়ই এই সংলাপ মনে ধরবে।'