চেন্নাই: আজ রজনীকান্তের জন্মদিন। ৬৬ বছরে পা দিলেন দেশের তর্কাতীতভাবে সবথেকে জনপ্রিয় অভিনেতা। রজনী ভক্তরা তাঁকে শুধু ভালবাসেন না, প্রকৃতপক্ষেই পুজো করেন। কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা স্টাইল ও অসামান্য অভিনয়গুণে কোটি কোটি মানুষের মন জিতে নেওয়া রজনী এত বড় তারকা হওয়া সত্ত্বেও মাটির সঙ্গে সম্পর্ক কোনওদিন ছাড়েননি। তাই টাক মাথা, মেকআপহীন বয়স্ক চেহারা নিয়ে তাঁর সাধারণের সামনে বার হতে কোনও অসুবিধে হয় না।


জন্ম ১২ ডিসেম্বর, ১৯৫০, বেঙ্গালুরুতে। প্রথমে তাঁর নাম ছিল শিবাজি রাও গায়কোয়াড়। বাবা রামোজি রাও গায়কোয়াড় হাবিলদার ছিলেন। মা জিজাবাঈয়ের মৃত্যুর পর চার ভাইবোনের সবথেকে ছোট রজনীকান্ত বুঝতে পারেন, সংসারের অবস্থা ভাল নয়। পরিবারকে সাহায্য করতে একটা সময় কুলির কাজও করেন তিনি।

প্রথম জীবনে বেঙ্গালুরু পরিবহণ সেবা বা বিটিএসের বাস কন্ডাক্টর ছিলেন। সে সময় টিকিট বিক্রির সময় তাঁর অসামান্য স্টাইল কোনও ফিল্মস্টারের থেকে কম ছিল না। বাস থামানো বা চালু করার সিগন্যাল দিতে তাঁর সিটি বাজানোও যাত্রী ও অন্যান্য কন্ডাক্টরদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় হয়।

মঞ্চাভিনয়ে অভ্যস্ত থাকায় ছবির জগতে জায়গা পাওয়ারও ইচ্ছে জাগে তাঁর মনে। পরে তাই হয়ে দাঁড়ায় সংকল্প। কন্ডাক্টরের কাজ ছেড়ে চেন্নাইয়ের আদিয়ার ফিল্ম ইনস্টিটিউটে নাম লেখান তিনি। সেখানে একটি নাটকে অভিনয় করার সময় তিনি নজরে পড়ে যান বিখ্যাত পরিচালক বালাচন্দ্রের। তিনিই রজনীকে দেন প্রথম ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব।

১৯৭৫-এ মুক্তি পায় রজনীর প্রথম তামিল ছবি, বালাচন্দ্র নির্দেশিত অপূর্বা রাগঙ্গাল। ছবিতে তিনি ভিলেনের রোল করেন। তারপর থেকে তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ধারে ভারে দেশের একনম্বর স্টার হয়েও প্রথম ছবিতে কাজ দেওয়া বালাচন্দ্রকে আজও গুরু মানেন তিনি।

কলেজ পত্রিকার জন্য তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে আসা কলেজছাত্রী লতাকে বিয়ে করেন রজনী। ৮১-র ২৬ ফেব্রুয়ারি তিরুপতি মন্দিরে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। রজনী-লতার দুই মেয়ে-ঐশ্বর্যা ও সৌন্দর্যা। লতা দ্য আশ্রম নামে একটি স্কুল চালান।

কেরিয়ারের শুরুতে তামিল ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় কাজ করতেন রজনী। ধীরে ধীরে নায়ক হিসেবে নিজের পরিচয় তৈরি করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই তামিল সিনেমার মহানায়ক হিসেবে পরিচিত হন তিনি, তাঁকে টপকাতে পারে এমন কেউ এখনও আসেনি দক্ষিণী ছবিতে।

বলিউডেও অনেক ছবিতে কাজ করেছেন রজনী। মেরি আদালত, জন জনি জনার্দন, ভগবান দাদা, ইনসাফ কওন করেগা, চালবাজ-ইত্যাদি নানা ছবিতে তাঁকে সাদরে গ্রহণ করে বলিউড। অন্য দেশের ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি, করেছেন মার্কিনি ছবিও।

২০০০ সালে পদ্মভূষণ পান রজনীকান্ত। ২০১৪-য় ৪৫তম ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়ায় তাঁকে ভূষিত করা হয় সেন্টেনারি অ্যাওয়ার্ড ফর ইন্ডিয়ান ফিল্ম পার্সোনালিটি অফ দ্য ইয়ার পুরস্কারে।