চৈতালি চক্রবর্তী, কলকাতা: শুক্রবার নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে  ‘হে সিনামিকা’। দুলকর সলমনের বিপরীতে অভিনয় করেছেন অদিতি রাও হায়দারি। তামিল রম-কম এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছে হিন্দি,তামিল, তেলুগু ও মলয়ালমে।


পুষ্পা থেকে আর আর আর। বক্স অফিসে দু-তিনশো কোটির ক্লাবে ঢোকা যে কোনও ব্যাপার না তা প্রমাণ করেছেন বারবার দক্ষিণের তারকা থেকে পরিচালকরা। কেজিএফ চ্যাপ্টার টু এর জন্য অলরেডি অপেক্ষায় কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপের দর্শক। অনেকে তো রসিকতা করে বলছেন দক্ষিণী সিনেমার আসমুদ্র হিমাচলে সাফল্য যেন দ্রাবিড়ের আর্যজয়ের উপাখ্যান। আর এই জয়গাঁথা লেখা থাকবে ভারতের চলচ্চিত্র ইতিহাসে। শুধু বিগ স্ক্রিন নয়, ওটিটিতে বলিউডকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলছেন কখনও মালায়লম স্টার ফাওয়াদ ফাজি(Z)ল, রোশান ম্যাথু, কখনও মিন্নাল মুরলির মত দেশি সুপারহিরো। পরিসংখ্যান বলছে তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালায়ালম ওটিটির দর্শক পঞ্চাশ শতাংশ সেই প্রদেশের বাইরে থাকেন। সারা পৃথিবীর কুড়ি শতাংশ দর্শক দক্ষিণের সিমেনা বা সিরিজ দেখেন নিয়মিত। আবার দক্ষিণ ভারতের ডাবড সিনেমা ও সিরিজের চাহিদা আন্তর্জাতিক বাজারে টক্কর দিচ্ছে কোরিয়া, জাপানকে। এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার অন্যতম কারণ বলে ওটিটির কনটেন্ট প্রোডিউসাররা মনে করছেন, গল্প, চরিত্র উঠে আসছে সেই প্রদেশের মাটি থেকে যার সঠিক চিত্রায়ণ ও সুচিন্তিত চিত্রনাট্য ও অভিনেতা নির্বাচন সাফল্যের চাবিকাঠি।


আরও পড়ুন: 'নববর্ষ মানে সুতির পোশাক, প্লাস্টিকের গ্লাসে কোল্ড ড্রিঙ্কস'


 


ত্রিকোণ প্রেমের গল্পে 'হে সিনামিকা'


সদ্য নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে মামুটিপুত্র দুলকর সলমন অভিনীত হে সিনামিকা (Hey Sinamika)। পরিচালক ব্রিন্দার এটি প্রথম ছবি। দুলকরের বিপরীতে অভিনয় করেছেন অদিতি রাও হায়দরী (Aditi Rao Hydari) ও কাজল আগরওয়াল (Kajal Agarwal)। এই তামিল রোম্যান্টিক কমিডি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলেও বক্স অফিসে বিশেষ সাফল্য পায়নি। তবে ওটিটি মুক্তির এক সপ্তাহের মধ্যে দর্শকদের পছন্দের তালিকায় ঢুকে গেছে হে সিনামিকা। অদিতি রাও হয়দারী একজন আবহাওয়াবিদ। নাম মোনা। প্রথম দর্শনে দুলকর সলমন অর্থাৎ যশন আর মোনার প্রেম হয়। বিয়ের দুবছরের মধ্যে মোনা, জশনের হাউস হাসবেন্ড হিসাবে যত্নআত্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। স্বামীর থেকে দূরে থাকতে চেন্নাইয়ে পোস্টিং নিয়ে চলে যায়। কিন্তু তাতেও নিস্তার নেই। স্বামী পৌঁছে যায় স্ত্রীর কাছে, ঘর সংসারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করাই তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। জশন সারাক্ষণ বকবক করে। মোনার একেবারেই নাপসন্দ। কিছুটা রেহাই পেতেই রেডিওজকি বন্ধুদের সাহায্যে জশনকে লোকাল এফএম চ্যানেলে জকি বানিয়ে দেয় মোনা। জকির চাকরিতে সত্তরহাজার টাকা বেতন দাবী করে যশন। সেই টাকার যোগানও মোনাই দেয়। যে চাকরি এইরকম একটা সাজানো ঘটনা সেই কাজেই রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে যায় জশন। মনবিদ ডক্টর মালার সাহায্য নিতে তার চেম্বারে যায় মোনা, যে কিনা দাম্পত্য জীবন জোড়ার বদলে ভাঙায় সিদ্ধহস্ত। মোনাকে সাহায্য করার জন্য জশনের কাছাকাছি আসতে শুরু করে মালা। এরপর গল্পে আসে ত্রিকোণ প্রেম। চিরাচরিত গল্প থেকে বেরোতে পারে না 'হে সিনামিকা'। ক্লাইমেক্সে সেই নায়িকা পায়ে পড়ে যায় নায়কের যাতে বিবাহবিচ্ছেদ না হয়। নায়কও ক্ষমা করে দিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করতে চলে যান জীবনের প্রথম ও একমাত্র প্রেম মোনার সঙ্গে। তাঁদের জীবনে একটি কন্যা সন্তানও আসে যেটা ছবির শেষে ক্রেডিটের সঙ্গে দেখা যায়। শুরুতে মনে হতেই পারে যে এই সিনেমাও স্টিরিওটাইপ ব্রেক করবে, কারণ প্রতিষ্ঠিত মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হল এক বেকার যুবকের যে কিনা ঘর সংসারে মনোযোগী।


কিন্তু না, তারপর সে পেশাদার রেডিওজকি হিসাবে প্রথম দিন থেকেই সফল। ত্রিকোণ প্রেমে কাজল আগরওয়ালের একতরফা প্রেমই নায়ককে সৎপাত্র হওয়ার প্রমাণ। সফল স্ত্রী পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইলেন আর উদার স্বামী ক্ষমা করে দিলেন। দেখতে দেখতে কবীর সিং ওর সঙ্গে দর্শক মিল খুঁজে পেতেই পারেন যা ছিল অর্জুন রেড্ডির হিন্দি রিমেক। শাহীদ কপূর অভিনয় করেছিলেন বিজয় দেবরকুন্ডা অভিনীত চরিত্রে। বক্স অফিসে তেলেগু আর হিন্দি দুই সফল হয়েছিল। এই ছবির ক্ষেত্রে হঠাৎ হঠাৎ গানের অবতারনা দর্শকের খাপছাড়া লাগতেই পারে কিন্তু একটা আদ্যন্ত রোম্যান্টিক কমেডির দৃশ্যায়ন থেকে মিউজিক, আবহ সঙ্গীত থেকে সিনেমাটোগ্রাফি - সমস্ত ডিপার্টমেন্টের কাজের প্রতি যত্ন চোখে পড়ার মত। 


আগামীতে প্যান ইন্ডিয়া রিলিজের তালিকায় আছে কেজিএফ চ্যাপ্টর টু, বিজয় দেওয়ারকুন্ডা অভিনীত লাইগর, প্রভাস ও শ্রুতি হাসান অভিনীত সালার, মনিরত্নম পরিচালিত এপিক ড্রামা পন্নিইয়ান সেলভান, যেখানে দক্ষিণী অভিনেতাদের পাশাপাশি দেখা যাবে অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বর্য রাই বচ্চনকে। ২০২৩ এ মুক্তি পাবে রামায়ণ নির্ভর থ্রিডি ফিল্ম ওম রাউতের আদিপুরুষ। অভিনয় করছেন প্রভাস, সেফ আলি খান, কৃতি শ্যানন। তালিকায় আছে কমল হাসান, কাজল আগরওয়াল, সিদ্ধার্থ, রকুলপ্রীত সিং অভিনীত ইন্ডিয়ান টু। ১৯৯৬ এ ইন্ডিয়ান বল্কবাস্টারের তকমা পাওয়ার ২৭বছর পর পরিচালক শঙ্কর দর্শকদের উপহার দিতে চলেছেন সিকুয়্যালটি। থাকছে প্রভাস ও দীপিকা পাডুকোন অভিনীত নাগ অশ্বীন পরিচালিত প্রজেক্ট কে। তাই বলাই যায়, পুনে থেকে পাটনা, পাটিয়ালা থেকে পডুচেরি - দক্ষিণের সিনেমার আগামীর রোডম্যাপ তৈরি।