মুম্বই : আজ ২২ অক্টোবর। জন্মদিন প্রয়াত অভিনেতা এবং চিত্রনাট্যকার কাদের খানের (Kader Khan)। বেঁচে থাকলে মানুষটার আজ বয়স হত ৮৪ বছর। আজ তাঁর জন্মদিনে বরং একটু জেনে নেওয়া যাক যে, কীভাবে বলিউডের অন্যতম সেরা ডায়লগ রাইটার হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কমেডি ছবিতে অভিনয়ের পিছনের গল্পই বা কী। তাঁর আর গোবিন্দার জুটির কথা এ দেশের দর্শক কখনও ভুলবে না। কিন্তু, তারও আগে থেকে কাদের খান একজন চিত্রনাট্য লেখক এবং ডায়লগ রাইটার। কিন্তু, কীভাবে তিনি এলেন এই পেশায়। ২০১২ সালে কাদের খান এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, তাঁর ছবিতে ডায়লগ লিখতে চলে আসাটা ছিল হঠাত্ করে। তেমন কোনও চেষ্টা তিনি করেননি। কিন্তু, সুযোগটা এসেছিল। কাদের খান তখন নিজের লেখা নাটকে অভিনয় করেন। এরকম করতে করতেই একটি প্রতিযোগিতায় জেতেন কাদের খান। আর তখন বলিউডের এক প্রযোজক তাঁকে প্রস্তাব দেন তাঁর ছবিতে ডায়লগ লেখার জন্য। কাদের খান বলেন, তিনি কখনও এমন কাজ করেননি। তবে, দেখিয়ে দিলে লিখে দিতে পারেন। বলা বাহুল্য সেই ছবির নাম ছিল 'জওয়ানি দিওয়ানি'। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রণধীর কপূর এবং জয়া ভাদুড়ি। আর এই ছবিতে চিত্রনাট্য লেখার জন্য কাদের খান পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন মাত্র ১৫০০ টাকা। 


আরও পড়ুন - Bunty Aur Babli 2 Teaser: মুক্তি পেলো টিজার, 'বান্টি অউর বাবলি টু' দিয়ে বারো বছর পর ফের একসঙ্গে সেফ-রানি


এই ছিল কাদের খানের বলিউডে আবির্ভাবের গল্প। দ্বিতীয় ছবির কাজ পেতে অবশ্য দেরি করতে হয়নি কাদের খানকে। দ্বিতীয় ছবি তিনি লেখেন ঋষি কপূর, নীতু সিংহ, রাকেশ রোশন অভিনীত 'খেল খেল মে'। এই ছবি সুপার ডুপার হিট হয়। আর এই ছবির জন্য কাদের খানের পারিশ্রমিকও ১৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হয় ২১ হাজার টাকা। এরপর আর কাদের খানকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কারণ, এরপরই কাদের খানের সঙ্গে সাক্ষাত্ হয় মনমোহন দেশাইয়ের। বদলে যায় কাদের খানের জীবন। কারণ, মনমোহন দেশাই তাঁকে 'রোটি' ছবির চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্ব দেন। আর কথা দেন, যদি তাঁর দু-চারটে স্যাম্পল ডায়লগ শুনে পছন্দ হয়, তবেই তিনি কাদের খানকে ডায়লগ লেখার দায়িত্ব দেবেন। এরপরে কাদের খানের মুখেই শুনুন। কাদের খান বেঁচে থাকাকালীন সাক্ষাত্কারে বলে গিয়েছিলেন, 'মনমোহন দেশাই আমার বাড়িতে এসে ডায়লগ শোনাতে বলেন। আমি শোনাই। তিনি এত খুশি হন যে, বলেন একটু পরেই আসছি। তারপর তিনি একটি ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট বড় টিভি এনে আমায় উপহার দেন। সঙ্গে একটা সোনার ব্রেসলেটও উপহার দেন। আর বলেন, তোমার আগের ছবির পারিশ্রমিকের থেকে ১ লক্ষ টাকা বেশি পারিশ্রমিক দেবো। এই বলে আমার হাতে অগ্রিম ২০ হাজার টাকা দিয়ে যান। আর এই ছবির জন্য আমি ১ লক্ষ ২১ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলাম। আগের ছবির পারিশ্রমিক ছিল ২১ হাজার টাকা। তাই মনমোহন দেশাইয়ের কথা অনুযায়ী ২১ হাজার যোগ ১ লক্ষ টাকা, মোট ১ লক্ষ ২১ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পাই।' এমন পুরস্কারের বিনময়ে এরপর 'অমর আকবর অ্যান্টনি', 'ইয়ারানা', 'লাওয়ারিশ', 'রফু চক্কর', 'পরবরীশ', একের পর এক ছবিতে লিখেওছিলেন কাদের খান মন উজাড় করে। 'মুকাদ্দার কি সিকান্দার' ছবির বিখ্যাত ডায়লগ আজও মানুষ মনে রেখেছে, 'জিন্দেগি মে লোগ মোহব্বত কে সাহারে জিতে হ্যায়। ম্যায় আপকি নফরত কে সাহারে জিয়ুঙ্গা।' তাঁর লেখা ডায়লগ পর্দায় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বলতেন, আর দর্শক সিনেমাহলে সিটি কিংবা হাততালি দিত, এমনটাই ছিল বাস্তব।


আরও পড়ুন - Sudha Chandran Appeals: কৃত্রিম পা খুলে দেখাতে হয় প্রতিবার! সুধা চন্দ্রনের মানবিক আর্তি প্রধানমন্ত্রীর কাছে


বুঝতে পারছেন, কাদের খানের জীবনও ছিল কত ইন্টারেস্টিং। এবার আসা যাক, কাদের খানের অভিনয় জীবনের প্রসঙ্গে। একটি সাক্ষাত্কারে কাদের খান বলেছিলেন, 'ডেভিড ধবনের সঙ্গে কাজ করাটা খুবই উপভোগ করি। বাকি ক্ষেত্রে যেকোনও ছবির গোটা চিত্রনাট্যটাই আমায় লিখতে হতো। কিন্তু ডেভিড ধবনের ছবিগুলোর সবটাই লিখতেন রুমি জাফরি। আমি শুধু আমার আর গোবিন্দার ডায়লগটাই আমাকে লিখতে হত। এটা একটু অসুবিধের যেমন। সুবিধার হল, তাতে অভিনয়ের জন্য সামান্য সময় বাড়তি পেতাম।' আজ জন্মদিনে বলিউডের প্রায় সকল শিল্পীই মনে করছেন সদাহাসিমুখের কাদের খানকে।