কলকাতা: করোনা আতঙ্কে গোটা দেশের সঙ্গে কাঁপছে কলকাতাও। থমকে জনজীবন। ‘লাইটস-ক্যামেরা-অ্যাকশন’ শুনে অভ্যস্ত টালিগঞ্জে বন্ধ সমস্ত শ্যুটিং। ঘরবন্দি হয়ে দিন কাটছে তারকাদের। ব্যতিক্রমী নন ওঁরাও। বাংলা সিনেমা ও ওয়েবসিরিজের তিন গোয়েন্দা – পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্যায় ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য। লকডাউনে কেউ পড়ছেন গল্পের বই, কেউ মগ্ন ওয়েব সিরিজে, কারও আবার দিন কাটছে সঙ্গীত নিয়ে। তারকা ত্রয়ীর খোঁজ নিল এবিপি আনন্দ।

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়

সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় তিনি ছিলেন ফেলুদার সহকারী, তোপসে। পরে ওয়েব প্ল্যাটফর্মে অবশ্য তিনি খোদ ফেলু মিত্তির। সম্প্রতি দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ সিনেমায় অভিজিৎ পাকড়াশীর চরিত্রে। তিনি পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। লকডাউনে বাড়িতে বসে মন দিয়েছেন নিজের পুরনো শখ - মিউজিকে। কখনও বা বসে পড়ছেন অসমাপ্ত চিত্রনাট্যের কাজ শেষ করতে। মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে পরমব্রত বললেন, ‘কাজের চাপে শখের গান-বাজনা নিয়ে বসাই হতো না। এখন গিটার বাজাচ্ছি। অনেকগুলো চিত্রনাট্য অর্ধসমাপ্ত ছিল। সেটা লিখছি।’







লকডাউনের প্রথম দিকে বাড়িতে থাকা বেশ উপভোগই করছিলেন পরমব্রত। দেখে ফেলেছেন ‘লা কাসা দে পাপেল সিজন ৪’ থেকে শুরু ‘বিকামিং চ্যাম্পিয়নস’-সহ ১০টিরও বেশি ওয়েবসিরিজ। পড়ে ফেলেছেন দুটো বইও। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সময় কাটাতে ঘোর আপত্তি অভিনেতার। বললেন, ‘সারা দিনে বড় জোর এক ঘণ্টা সময় কাটাই সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর এই পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে বিভ্রান্ত করে এই সমস্ত মাধ্যম।’

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছেন বহু প্রিয়জন। টেলিফোন ছাড়া তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের উপায় নেই। দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পরমব্রত। উদ্বেগ করোনা পরবর্তী ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা আর কাজের চাপ নিয়েও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজে ফিরতে চান। অনুরাগীদের উদ্দেশে পরমব্রতর বার্তা, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় যতটা সম্ভব কম সময় কাটান। নিজেদের পছন্দের কাজ করুন। পরিবারের সঙ্গে সময় থাকুন।’

আবীর চট্টোপাধ্যায়

সত্যজিৎ রায় থেকে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধায়, গোয়েন্দা চরিত্রে তাঁর বিচরণ অবাধ। বর্তমান প্রজন্মের কাছে তিনিই ফেলুদা, তিনিই ব্যোমকেশ আবার তিনিই সোনাদা। তিনি টলিপাড়ার অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক আবীর চট্টোপাধ্যায়। লকডাউনে বাড়িতে বসে কী করছেন, কী ভাবছেন তিনি?



এবিপি আনন্দকে হোয়াটসঅ্যাপ মারফত আবীর বললেন, ‘আমরা সকলেই একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।’ এই মুহূর্তে টলিউডের অন্যতম সফল নায়ক। সারা বছরই শ্যুটিংয়ের ব্যস্ততা। আপাতত স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি। কেমন কাটছে লকডাউন? আবীর হোয়াটসঅ্যাপে বললেন, ‘আমরা তবু অনেক সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছি। তাই আমি যেভাবে লকডাউন কাটাতে পারছি সকলের পক্ষে তা সম্ভব নাও হতে পারে।’ লকডাউনে ছন্দ হারিয়েছে মানুষের রোজনামচা। তাঁর ভক্তদেরও ঘরবন্দি হয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। অনুরাগীদের কী বলবেন?  আবীর বললেন, ‘অপেক্ষা করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। আশা করছি পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সকলে ভালো থাকুন, নিজেদের খেয়াল রাখুন।’

অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য

নাটক-থিয়েটারের মঞ্চ হোক বা রুপোলি পর্দা, তাঁর অভিনয় সর্বত্র প্রশংসিত। ওয়েব সিরিজে ব্যোমকেশ চরিত্রেও মন জয় করেছেন দর্শকদের। তিনি অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য। লকডাউনে কলকাতায় নিজের বাড়িতেই সময় কাটছে। কখনও সঙ্গী বই, কখনও সিনেমা। কখনও আবার ব্যস্ত থাকছেন ছবি আঁকায় বা বাড়ির কাজে। সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। কেন? ‘লকডাউনে নিজের রোজনামচার আপডেট সোশ্যাল মিডিয়ায় দিতে আগ্রহী নই,’ মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে বললেন অনির্বাণ।



করোনা পরবর্তী সময়ে কী প্রভাব পড়তে পারে থিয়েটার, সিনেমাজগতে, তা ভাবাচ্ছে অভিনেতাকে। অনির্বাণ বলছেন, ‘এতদিন ধরে আমাদের সাফল্য ব্যর্থতা দিয়ে যে বাক্সটা তৈরি করেছি, একটা ছোট্ট ভাইরাস এসে তার বিভিন্ন স্তরে একটা বহুমাত্রিক থাপ্পড় মেরেছে। মানুষ এই থাপ্পড়টা স্বীকার করবে, বদল আনবে জীবনধারায়, নাকি ভুলে যাবে অন্য সমস্ত ছোট বড় ঘটনার মতো, সেটাই দেখতে উদগ্রীব হয়ে রয়েছি।’

ভক্তদের কী বলবেন?  অনির্বাণ বলছেন, ‘যদি মনে হয় লকডাউনে একঘেয়েমি গ্রাস করছে, বিরক্ত হয়ে উঠেছো, তাহলে তাই হও। অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করো। এরকম পরিস্থিতি দেড়শো-দুশো বছরে একবার আসে। আমরা সবাই ইতিহাসের সাক্ষী হচ্ছি। তোমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বলে যেতে পারবে, এমন একটা সময় পেরিয়ে এসেছি যা বহু বছর পৃথিবীকে দেখতে হয়নি। ভবিষ্যতেও হয়তো দেখতে হবে না।’

আপাতত বন্ধ সমস্ত কাজ। অনির্বাণের উপলব্ধি, ‘সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিজের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে। তা হতে দিচ্ছে না একটা ছোট্ট ভাইরাস। বিশ্বের এত দেশের কাছে এত শক্তি-ক্ষমতা, এত অস্ত্র আছে। অথচ এই অতিমারীর সামনে সবাই অসহায়। সবাই এক সারিতে দাঁড়িয়ে।’ সেই সঙ্গে অনির্বাণের প্রশ্ন, ‘এই থাপ্পড়টা সবাই মেনে নিয়ে মনে রাখবেন তো?’