পুরুষোত্তম পণ্ডিত, কলকাতা: ‘গোলমাল হ্যায় ভাই সব গোলমাল হ্যায়।’ প্রিয়দর্শনের পরিচালনায় নতুন ছবি ‘হাঙ্গামা টু’ দেখতে বসে এই কথাই ঘুরে ফিরে আসবে মাথায়। ডিজনি প্লাস হটস্টারে শুক্রবার মুক্তি পেল ‘হাঙ্গামা টু’। দু’টো আলাদা আলাদা প্লটে এই ছবির কাহিনি এগিয়েছে। একদিকে রয়েছে আকাশ আর বাণী, অন্যদিকে রাধে তিওয়ারি আর তাঁর স্ত্রী অঞ্জলি।


বলিউডের বিনোদনের চেনা মশলায় ছবিটি বানিয়েছেন প্রিয়দর্শন। পুরোনো কাহিনি, নতুন প্যাকেজিং। বিত্তশালী পরিবারের ছেলে আকাশ কপূর। হঠাৎই একদিন তাঁর কলেজের এক সহপাঠী বাণী তাঁদের বাড়িতে হাজির হয়ে জানায়, আকাশ তাঁর মেয়ের বাবা। আকাশ অস্বীকার করে পুরো বিষয়টি। ঘটনার সত্যতা জানতে ডাক্তারি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন আকাশের বাবা। এরপরই নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে ‘কমেডি অফ এররস’-এর সূত্র ধরে এগিয়ে চলে কাহিনি। অন্যদিকে রাধে তিওয়ারি পেশায় উকিল। তিনি সন্দেহ করেন তাঁর স্ত্রী অঞ্জলিকে। রাধের ধারণা, আকাশ আর অঞ্জলির মধ্যে গোপন সম্পর্ক রয়েছে এবং অঞ্জলি আকাশের সন্তানের মা হতে চলেছে। বলাই বাহুল্য, এও এক চূড়ান্ত ভুল ধারণা। একের পর এক ভুলের ভুল-ভুলাইয়ার মধ্যে দিয়ে ‘হাঙ্গামা টু’ হাসির খোরাক দিতে চেয়েছে দর্শকদের।


ছবিতে আকাশের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মিজান জাফরি। বাণীর ভূমিকায় প্রণীতা সুভাষ। অন্যদিকে রাধে তিওয়ারির ভূমিকায় রয়েছেন পরেশ রাওয়াল এবং অঞ্জলির ভূমিকায় শিল্পা শেঠী। ‘হাঙ্গামা টু’-এর হাত ধরেই ১৪ বছর বাদে আবার সিনেমায় ফিরলেন শিল্পা।  ‘হাঙ্গামা টু’-এর তারকা তালিকা বেশ দীর্ঘ। আশুতোষ রাণা এই ছবিতে মিজানের বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। অক্ষয় খন্নার ক্যামিও চরিত্রের পাশাপাশি রয়েছেন জনি লিভারও। এছাড়াও আছেন টিকু তালসানিয়া, রাজপাল যাদব, মনোজ যোশী। প্রিয়দর্শনের পুরোনো কমেডি ছবিগুলির নিয়ম মেনেই ‘হাঙ্গামা টু’-এর কাহিনিও এক কেন্দ্রিক নয়। ছবির সবক’টি চরিত্রের উপরে যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করতে চেয়েছেন প্রিয়দর্শন। তবে অভিনয়ের দিক থেকে কমেডি টাইমিং মেলানো ছাড়া আর খুব বেশি কিছু করার সুযোগ পাননি অভিনেতারা।


‘হাঙ্গামা টু’ দু’ঘন্টা ৩৬ মিনিটের সিনেমা। আট আর নয়ের দশকে যে ধরণের কমেডিতে মজে থাকতেন দর্শকেরা, ২০২১-এ এসে তেমনই কমেডি কি দর্শকদের বিনোদন দিতে পারবে? এই প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। বাড়ির দুরন্ত বাচ্চাদের সামলানোর জন্য আশুতোষ রাণার চরিত্রটি যে ভাবে একের পর এক শিক্ষক বদলান, শিক্ষকের ভূমিকায় জনি লিভার যে ধরণের অতিনাটকীয় সুরাহা নিয়ে হাজির হন, তা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত বাসি। অঞ্জলির উপরে সন্দেহের বশে রাধে তিওয়ারি যে ভাবে বাড়িতে ক্যামেরা লাগিয়ে নজরদারি চালাতে চান, যে ভাবে টেবিলের নীচে ঢুকে লাল মোজার খোঁজ করেন, তা একেবারেই ক্লিশে। শিল্পা শেঠী আর মিজান জাফরিকে নিয়ে ‘হাঙ্গামা টু’-তে ‘ম্যায় খিলাড়ি তু আনাড়ি’-র বিখ্যাত গান ‘চুরাকে দিল মেরা’ পুননির্মাণ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নতুন গানটি পুরোনো গানের জাদু ফিরিয়ে আনতে পারেনি। অঞ্জলি, আকাশ, বাণী, আর আকাশের বাবাকে ঘিরে সকলের ভুল বোঝাবুঝির সীমা অতিক্রম করে গিয়ে ছবিটি জোর করেই যেন এক গোলকধাঁধায় ঢুকে পড়ে।  


ক্লাইম্যাক্সে সিরিয়াল পরিচালকের ভূমিকায় অক্ষয় খন্না আকাশ আর বাণীর সম্পর্কের সুতো গিঁট বাঁধেন নাটকীয় ভঙ্গীতে। বলাই যায় প্রিয়দর্শনের এই ছবিটির বুনোট আরও আঁটোসাঁটো হতে পারত। অনাবশ্যক হইচই তৈরি করার তাগিদে কাহিনিকে জোর করে টেনে বড় করার কোনও প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয় না।