‘ইচ্ছা করে বাংলা ভাষায় হিন্দায়ণ করা হচ্ছে’ বলছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
কলকাতা: ‘বাংলা ভাষার শত্রুর সংখ্যা বড় বেড়ে গিয়েছে।’ মাতৃভাষা দিবসে প্রথম এই কথাটাই বললেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। নির্বাচনী প্রচারে অনবরত ভুল বাংলা, পোস্টারে পোস্টারে ভুল বানানের ছড়াছড়ি। এমনকি সরকারি বাস, দেওয়াল লিখনেও চোখে পড়ে ভুল বাংলা। স্কুল ফেরত পড়ুয়াদের মুখে হামেশাই শোনা যায় হিন্দি-ইংরাজী মেশানো বাংলা। কোথায় দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা?
বাংলা ভাষার বর্তমান অবস্থার কথা বলতে গিয়ে শীর্ষেন্দু বলছেন, ‘বাংলা ভাষার অবনতির প্রধান কারণ মূলত ২টো। রাজনীতি ও পশ্চিম ভারতের প্রভাব। যাঁরা রাজনীতি করছেন তাঁরা ভাষা সম্পর্কে যথেষ্ট যত্নশীল নন। মঞ্চে বা অন্যান্য বক্তৃতা জায়গায় তাঁরাই যদি বিকৃত বাংলা প্রয়োগ করেন তাহলে সাধারণ মানুষ কী শিখবে?’ লেখক আরও বলেন, ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বাংলা ভাষার হিন্দায়ণ করা হচ্ছে। বাংলা বলার সময় অনেক অপ্রয়োজনীয় হিন্দি কথা ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেগুলি বাংলা নয়, বহিরাগত শব্দ।’
শুধু বাংলা কেন যে কোনও ভাষাই পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে বাংলা লেখার, বলারও। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘ভাষার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তবে ভাষাকে জোর করে বদলাতে গেলেই বিভ্রাট। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাষা আপনা আপনিই সময়োপযোগী হয়ে ওঠে। বাংলায় বিভিন্ন সময়ে যাঁরা এসেছেন, রাজত্ব করেছেন তাঁদের কিছু শব্দও মিশে গিয়েছে বাংলায়। ঠিক একইরকম ভাবে অন্যান্য অনেক ভাষার মধ্যেও মিশে আছে অনেক বাংলা শব্দ। এই বদল স্বাভাবিক।’
এ তো গেল রাজনীতি আর রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের কথা। কিন্তু সাধারণ মানুষ? তাঁদের ভাবনা? উত্তর দিতে গিয়ে শীর্ষেন্দুর গলায় ক্ষোভ। বললেন, ‘বাঙালির অস্মিতা চলে যাচ্ছে। অস্মিতা মানে অহংকার নয়, বাঙালি হওয়ার মর্যাদাবোধ। বাংলা তো নিতান্ত ফেলে দেওয়ার ভাষা নয়। ইউনেসকোর মতে, বাংলা সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা। এখনকার মা-বাবারা শিশুদের বাধ্য করছেন শুধুই ইংরাজি বলতে, লিখতে। এর ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বাঙালিরা। আমরা আমাদের পরবর্তি প্রজন্মকে যদি বাংলাকে সম্মান করতে না শেখাতে পারি, তাহলে বাংলার ভাষার বিপদ অপেক্ষা করছে।’