কলকাতা: সঙ্গীতের কোনও ভাষা নেই, দেশ নেই। ধর্ম, সংস্কৃতিও সুরের আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। সেটা ফের প্রমাণ করে দিলেন সুরকার জয় সরকার। তিনি লকডাউনের মধ্যে বাড়িতে বসেই ইজরায়েলের সুরকার আক্রম আবদুলফতেহর সঙ্গে মিলে যন্ত্রসঙ্গীতে ফুটিয়ে তুললেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘বাজে করুণ সুরে’।


এ বিষয়ে জয় জানিয়েছেন, ‘আক্রম কর্ণাটকী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখতে ভারতে আসে। কলকাতায় যখন ও এসেছিল, তখন আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে ওর সঙ্গে আলাপ হয়। ও খুব ভাল ভায়োলিন বাজায়। ‘বাজে করুণ সুরে’ গানটার সঙ্গে আরবের সুরের মিল আছে। সেই কারণে আমি আক্রমকে এই গানটার কথা বলি। ওর অংশটা ও বাজিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিল। তারপর আমি আমার অংশটা যুক্ত করি।’



যন্ত্রের মাধ্যমে তো রবীন্দ্রসঙ্গীত ফুটিয়ে তুলেছেন, কিন্তু বিশ্বকবি সম্পর্কে জানেন আক্রম? এ প্রসঙ্গে জয় জানালেন, ‘সত্যি কথা বলতে, ও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে কিছুই জানত না। শুধু এটুকু জানত, ভারতীয় সঙ্গীত অত্যন্ত প্রাচীন ও সমৃদ্ধশালী। আমি ওকে রবীন্দ্রনাথের কথা বলি।’

লকডাউন পর্ব পেরিয়ে এখন আনলকের চতুর্থ পর্ব চলছে। পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। করোনা আবহে কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন জয়? এ বিষয়ে তিনি জানালেন, ‘লকডাউন যখন জারি হয়, তখন আমার হাতে প্রচুর কাজ ছিল। সেসব বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমার মনে হয়েছিল, কিছুদিন বিশ্রাম নেওয়া যাবে। বেশ হাল্কা লাগছিল। অবসর পেয়ে অনেক বই পড়েছি, ভিডিও শ্যুট করা শিখেছি। আমার মনে হয়েছিল, কয়েক সপ্তাহ পরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পরেই বুঝলাম, এটা আমাদের হাতে নেই। তখন ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মে কাজ শুরু হল। আমার বাড়ির পাশেই স্টুডিও। ফলে সুবিধা হয়েছে। কাজের ধারা বদলেছে। তার সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছি। লকডাউনে লোপার (স্ত্রী, সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র) সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। এটা একটা ভাল দিক। কারণ, আমরা দু’জনই সবসময় ব্যস্ত থাকি। ফলে বাড়িতে একসঙ্গে সেভাবে থাকা হয় না। তবে বাবা-মার সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারছি না। এটা খারাপ লাগছে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাও মিস করছি।’

করোনা সংক্রমণ রোখার লক্ষ্যে নানা বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। এর জেরে লাইভ অনুষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ। সঙ্গীতক্ষেত্র এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মত জয়ের। তবে তিনি আশাবাদী, কিছুদিন পরেই হয়তো আবার লাইভ অনুষ্ঠান শুরু হবে। তাঁর মতে, এবার দুর্গাপুজো কীভাবে হবে, তার উপর অনুষ্ঠানগুলি নির্ভর করবে। তিনি এখন সেদিকেই তাকিয়ে। তার মধ্যেই ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ওয়েব সিরিজের জন্যও কাজ করছেন। ভবিষ্যতের পরিকল্পনাও তৈরি।