কলকাতা: তাঁর সুরের সফর হঠাৎ থেমে গিয়েছিল এই কল্লোলিনী শহরের বুকেই। যিনি গলার যাদুতে ছুঁয়ে গিয়েছেন আট থেকে আশির মন, আরও অনেক সুর উপহার দেওয়ার আগেই হঠাৎ চলে যেতে হল তাঁকে। রাজার মতোই.. ঠিক যেমন করে চলে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর, তবে এত তাড়াতাড়ি নয়। শেষ গানে তিনি যেন শুনিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন অমোঘ সত্যি... হাম রহে ইয়া না রহে কাল.. কাল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল..'। যে কথা যে ভীষণ সত্যি, তা যেন আরও একবার সত্যি হয়ে মনে পড়ে যায় তাঁর জন্মদিনে। আজ কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ (Krishnakumar Kunnath) ওরফে কেকে (KK)-র জন্মদিন।
মালয়ালি পরিবারের জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই সঙ্গীতশিল্পী। ১৯৬৮ সালের ২৩ অগাস্ট দিল্লির এক মালয়ালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে, বিয়ের পরে দিল্লি থেকে মায়ানগরী মুম্বইতে চলে আসেন তিনি। যে শিল্পী সুরে, গানে জয় করেছেন গোটা দর্শককুলকে, তাঁর নাকি ছিল না কোনও প্রথাগত সুর শিক্ষাই! দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাল কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন কেকে। তাঁর বিষয় ছিল বাণিজ্য। কিন্তু একসময় হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন কেকে। সুরের জগতে তাঁর কেরিয়ার শুরু মূলত তাঁর বিবাহের পরেই।
তবে সরাসরি ছবিতে সুযোগ পাননি কেকে। তাঁর গানের কাজ শুরু হয়েছিল, বিজ্ঞাপনী 'জিঙ্গলস' তৈরি দিয়ে। একাধিক নামি সংস্থার বিজ্ঞাপনের জিঙ্গল বানিয়েছিলেন কেকে। এ আর রহমানের (AR Rahman)-এর গানে প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে প্রথম কাজ করেছিলেন কেকে। এরপরেই তাঁর বিজ্ঞাপনী দুনিয়ায় আসা ও পরবর্তীতে অ্যালবাম মুক্তি। তাঁর প্রথম অ্যালবাম 'পল' (Pal) দর্শকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তাঁর গোটা কেরিয়ারের সেরা দুটি অ্যালবামই ছিল 'পল' ও 'ইয়ারোঁ'।
কেবল হিন্দি বা মালয়ালি নয়, ১১টি ভাষায় সমান দক্ষতায় গান গেয়েছেন কেকে। এর মধ্যে ছিল, মালয়ালি (Malayalam), তামিল (Tamil), তেলুগু (Telugu), হিন্দি (Hindi), কন্নড় (Kannada), বাংলা (Bengali), গুজরাতি (Gujarati) ও অসমিয়া (Assamese)। একবার কেকে তাঁর একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি নিয়ে মালয়ালি হলেও, মাত্র ১টি মালয়ালি গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।
কেকে-কে নিয়ে সবচেয়ে অবাক করার মত তথ্য হল, তাঁর কোনও প্রথাগত শিক্ষা ছিল না সঙ্গীত নিয়ে। ছোটবেলায় একবার তিনি গানের প্রথামাফিক ক্লাসে যোগ দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু বিন্দুমাত্র আকর্ষণ অনুভূত না হওয়ায় ক্লাস যাওয়া ছেড়ে দেন কেকে। একবার একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, 'আমি গান কেবলমাত্র শুনে শুনেই মনে রাখতে পারতাম। শুনে শুনে অনেক গান শিখেছি আমি, আর কিছুটা ভগবানের আশীর্বাদ। পরবর্তীতে আমি শুনেছিলাম, কিশোর কুমারও কখনও গান শেখেননি। আমার সঙ্গীতের ক্লাসে না যাওয়ার আরও একটি কারণ পেয়ে গিয়েছিলাম।'
গান ছাড়াও, কেকে ছিলেন ক্রিকেটের ভক্ত। তাঁর গাওয়া 'জোশ অফ ইন্ডিয়া' গানটিতে দেখানো হয়েছিল ভারতীয় দলকে। বিশ্বকাপের সময় ভারতীয় দলের সমর্থনে এই গানটি তৈরি করেছিলেন তিনি। আজ তাঁর জন্মদিনে, ফিরে দেখা সেই শিল্পীকে.... যিনি ফিকে হয়ে মিলিয়ে যেতে পারেন না কখনও।