কলকাতা: 'এখন রাস্তায় ওকে দেখলে লোকে ওকে অভিনেতা হিসেবে নয়, অপরাধী হিসেবে দেখবে। ইন্ডাস্ট্রিতে ওর ভবিষ্যৎ অন্ধকার, সবাই ওকে ঘৃণার চোখে দেখবে। এমন মানসিক পরিস্থিতি, আগামী দিনে কিছু না জুটলে মোট বইবে বলছে ও! একদম ভাল নেই সৌগত। ওঁকে মানসিক ভাবে সুস্থ করে তোলাটাই এখন আমার কাছে চ্যালেঞ্জ।'


এক নিশ্বাসে বলে গেলেন অভিনেত্রী নয়না পালিত। যাঁর অন্য পরিচয়, অভিনেতা সৌগত বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী। গত শনিবার দক্ষিণ কলকাতার একটি স্পা থেকে মধুচক্র-যোগ থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় সৌগতকে। রবিবার আলিপুর কোর্টে জামিন পান অভিনেতা। তারপর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সৌগত জানান, তিনি ওই স্পা-এ প্রথমবারই যান। সেখানে ঢোকার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই তোলপাড় হয়ে যায় সবকিছু।

সৌগতর স্ত্রী নয়না এবিপি আনন্দকে যা জানালেন সরাসরি তুলে দেওয়া হল।

সামনেই পুজো। প্রত্যেকের মতোই আমি আর সৌগতও খুঁজছিলাম কোনও পার্লার বা স্পা-এ ভাল অফার চলছে কি না। আমরা তো দুজনেই অভিনয় করি, তাই নিজেদের পরিচর্যা করায় তো আমাদের নজর দিতেই হয়। সেরকমই দেশপ্রিয় পার্ক সংলগ্ন একটা স্পা থেকে একটা ভাল অফার এসেছিল আমাদের কাছে। আমিই সৌগতকে বলেছিলাম 'তুমি আগে খোঁজ নিয়ে এস'। আমার একটা স্ক্রিপ্ট রিডিং ওয়ার্কশপ ছিল শনিবার। সেখানে ড্রপ করে দিয়েই  সৌগত সেখানে যায়।
আমি বিকেলে কাজের জায়গা থেকে বেরিয়ে দেখি, সৌগতর মেসেজ। তখন ও লিখেছিল, এখানে স্পা-এ রেড হচ্ছে। তুমি চিন্তা করো না আমায় ছেড়ে দেবে।

আমি তো চমকেই গিয়েছিলাম। কিন্তু ভাবলাম, যাই হোক ও তো এই প্রথম ওই স্পা-এ গেল, ওর তো কোনও দোষ নেই, ছেড়ে তো দেবেই।  আমি তো জানতামই না সৌগতর সঙ্গে কী কী ঘটে গেছে। আমার কাছে তো বাড়ির চাবিও ছিল না। আমি বাড়ির সামনে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ১ ঘণ্টা, ২ ঘণ্টা, ৩ ঘণ্টা। চিন্তা বাড়তে লাগল। কিন্তু ও কোথায় কিছুই বুঝছি না।

সাড়ে দশটা নাগাদ টালিগঞ্জ থানা থেকে ফোন করল সৌগত। ও জানাল কোথায় কী অবস্থায় আছে। তখন ওর গলায় একটু আশার সুর। বলে, ওকে ওরা ছেড়ে দিতে পারে। তাহলে একসঙ্গেই ফিরে যাব। আমি থানায় যখন পৌঁছাই তখন দেখি থানার গেট লকড। দাঁড়িয়েই আছি,  রাত ১১ টা নাগাদ এক পুলিশকর্মী বাড়ির চাবি দিয়ে চলে গেলেন। বলে গেলেন, বাড়ি চলে যান। রাত সাড়ে ১১ টা নাগাদ আবার সৌগত মেসেজ করে ওকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।  ও লিখল, ওর কাছে ফোন রাখতে দেওয়া হচ্ছে না। উকিলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলল।

ভাবলাম, আরও একটু দাঁড়াই, যদি ওকে ছাড়া হয়।  রাত ২ টো অবধি অপেক্ষা করি রাস্তাতেই । একা। আশেপাশে আরও কয়েকটি পরিবারের লোকজন। তারপর আড়াইটে নাগাদ বাড়ি ফিরে গেলাম। কী করব কিছুই বুঝতে পারলাম না।

বাড়ি ফিরলাম। ভোর রাতে একবার এক মিনিটের জন্য ফোন। বলল, আলিপুর সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওকে। ১২ টা নাগাদ আলিপুর কোর্টে তোলা হবে, বলে ও। উকিলের নম্বর মেসেজ করে । সকালে উকিলের সঙ্গে কথা হয়। তারপর পরের দিন জামিন হয়। জানেন, একটা মানুষ যিনি একটা অফারের খবর পেয়ে গিয়েছিলেন স্পা-এ সার্ভিস নিতে, তাকে কি না বন্দির পোশাকও পরতে হল। আজ ওর সততা, ইমেজ সব প্রশ্নের মুখে। একদিনের খবরে এতজনের মন থেকে সব বিশ্বাস ভেঙে গেল! কী করে সুস্থ করব ওকে বলতে পারেন? সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তদন্ত হোক, তাহলেই সব তথ্য সামনে আসবে।

এবিপি আনন্দকে সৌগত বন্দ্যোপাধ্যায় যা জানালেন, তাও তুলে দেওয়া হল হুবহু।

আমরা বিভিন্ন পার্লার ও স্পা-এ ট্রিটমেন্ট নিতে যাই-ই। আর পাঁচজন মধ্যবিত্তের মতো ভাল অফারের জন্য অপেক্ষাও করি। সেদিনও একই রকম ঘটনা ঘটে। দেশপ্রিয় পার্কের কাছে স্পা। দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ পৌঁছাই।  ৩০ সেকেন্ডও অতিবাহিত হয়নি।
বেশ কিছু লোকজন ঢুকে এল। অশ্রাব্য গালিগালাজ শুরু করে তারা। আমার কাছ থেকে ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।

বলি, বাড়িতে মা অসুস্থ, স্ত্রী  অপেক্ষা করছেন। তখন আরও খারাপ গালিগালাজ। সিসিটিভি ফুটেজে নিশ্চয় সবটুকুই থাকবে। সেটা দেখলেই তো সব প্রমাণ হয়ে যায়!

আমাকে চিনে কেউ একজন ছবি তুলে নিলেন। সেই ছবিই দেখলাম সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হল। আমি বুঝতেই পারলাম না কোথা থেকে কী হয়ে গেল!

কী রাত ছিল সেটা। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। স্ত্রী নয়, ইন্ডাস্ট্রির কারও সঙ্গে নয়। মনে হল আঁধার নেমে আসছে। রাতারাতি মিডিয়ায় বের হতে শুরু করে আমি ওই স্পা-এ রোজই যাই। আমার চরিত্র খারাপ। একবার খোঁজ নিয়ে দেখুন তো কোনও সহ-অভিনেত্রীকে কোনওদিন কুপ্রস্তাব দিয়েছি কি না! আমি তো মফঃস্বলের ছেলে। অভিনয় করতে কলকাতায় আসা। আমরা অভিনেতা বলে কি, পরিবার, স্ত্রী, বাবা-মা, সম্মান কিচ্ছু নেই? একদিনে আমার জীবনটা মুচমুচে সিনেমা হয়ে গেল? বন্দির উর্দি পর্যন্ত পরতে হল?