কলকাতা: শিল্পী লগ্নজিতা চক্রবর্তীকে হেনস্থার অভিযোগ। লগ্নজিতাকে গান গাইতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তুলছে বিজেপি। তৃণমূল নেতা মেহবুব মল্লিকের বিরুদ্ধে দিকে আঙুল তুলছে তারা। প্রাণ হাতে করে লগ্নজিতাকে কলকাতা ফিরতে হয় বলে অভিযোগ। কেন মেহবুবকে গ্রেফতার করা হবে না, প্রশ্ন তুলছে বিজেপি। লগ্নজিতাকে যৌন হেনস্থা করা হয় বলেও দাবি করছে গেরুয়া শিবির।  (Lagnajita Chakraborty)

Continues below advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরে ভগবানপুরে লগ্নজিতাকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। রবিবার সকালে সেই নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। শঙ্কুদেবের দাবি, লগ্নজিতা নিজে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু ভগবানপুর থানা শুধুমাত্র জেনারেল ডায়েরি করেছে, যেখানকার ওসি শাহজাহান হক। (Lagnajita Chakraborty Assault Allegations)

লগ্নজিতার অভিযোগপত্রের একটি প্রতিলিপিও তুলে ধরেন শঙ্কুদেব। তিনি জানান, 'অ্যাসল্ট' করার চেষ্টা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লগ্নজিতা। সরাসরি আক্রমণ করা হয় তাঁকে। শঙ্কুদেব বলেন, "কে মেহবুব? চিনের কী সংযোগ? কোথা থেকে আসছে এত টাকা? কেন ওখানে বসে এই সাম্প্রদায়িক আচরণ? তৃণমূলের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী?"

Continues below advertisement

শঙ্কুদেব বলেন, "লগ্নজিতা জানিয়েছেন, ৭ নম্বর গানটি ছিল 'জাগো মা'। এর পরই ওই ভদ্রলোক লোকজন নিয়ে মঞ্চে উঠে বলেন, 'অনেক 'জাগো মা'  হয়েছে। এবার একটা সেকুলার গান গা। নইলে পেটাব ধরে'।" লগ্নজিতার অভিযোগে মেহবুবের নামে অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি শঙ্কদেবের। তাঁর বক্তব্য, "সেকুলার গানের কী সংজ্ঞা? কেন এই গান সেকুলার নয়? কেন এমন আক্রমণ করতে হল? তৃণমূল বলে কে কী খাবে, কে কী পরবে, কে কী গাইবে, তার স্বাধীনতা থাকা উচিত! তাহলে লগ্নজিতারও স্বাধীনতা থাকতে হয়? না কি 'জাগো মা'-তে হিন্দুত্ব পেয়েছেন? তাই কোমর বেঁধে নেমে পড়তে হয়েছে এই জিহাদিকে? কেন গ্রেফতার করা হবে না?"

শঙ্কুর দাবি, থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন লগ্নজিতা। প্রথমে জিডি এন্ট্রি করতে চাননি শাহজাহান হক। চাপ দেওয়া হলে তবেই ডিজি দায়ের করেন। কেন এফআইআর হবে না, প্রশ্ন তুলেছেন শঙ্কুদেব। তিনি বলেন, "একজন শিল্পী অভিযোগ করছেন, কেন এফআইআর হবে না? ও জিহাদি বলে, তৃণমূলের নেতা বলে, বেআইনি কারবারি বলে, কোটি কোটি টাকা নয়ছয় করে বলে, থানার সঙ্গে সংযুক্ত বলে, ওসি যুক্ত বলে? কেন এফআইআর হবে না? গতকাল রাতে রীতিমতো প্রাণ হাতে নিয়ে কলকাতায় আসতে হয় লগ্নজিতা এবং তাঁর টিমকে। আমি জানতে চাই, এই সব লোকেদের দিয়ে এই উপদ্রুত অঞ্চল, বাংলাদেশের জিহাদিদের মুক্তাঞ্চল কেন বানাচ্ছে তৃণমূল? এর আগেও লোকটি, তার পরিবারও  লোকেদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ উঠেছে। 'জাগো মা' গানটি কোনও ভাবে ধর্মীয় গোঁড়ামির জায়গায় রয়েছে কি? এটা কি সেকুলার নয়? সেকুলারিজম মানে কী? 'জাগো মা' গেয়েছে বলে শিল্পীকে আক্রমণ করবেন? কোন বাংলায় রয়েছি আমরা। রাজ্য পুলিশ, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই, কেন মেহবুবকে গ্রেফতার না করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে? পুলিশ প্রশাসন কী চায়? এই ধরনের লোককে বসিয়ে রেখে বাংলার সংস্কৃতি, শিল্পকে লাটে তুলতে চান? রাজ্যের শিল্পীমহলকেও বলব, আপনারা বলুন, যাঁরা সেকুলারিজম নিয়ে বড় বড় কথা বলেন, তাঁদের কী বক্তব্য? এরা কারা?"

শঙ্কুদেবের দাবি, লগ্নজিতাকে 'পার্সোনালি হেকল' করা হয়েছে। লোকজন নিয়ে গিয়ে রাত্রিবেলা ঘেরাও করে রাখা হয়। ওসি জানান, দরকার হলে ক্ষমা চাইয়ে দেবেন তিনি। মিটমাট করে নিতে বলেন লগ্নজিতাকে। অনুষ্ঠানের সিসিটিভি ফুটেজ যাদের হাতে ছিল, তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। 

ওসি শাহজাহান হকের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ করা হবে না, প্রশ্ন তোলেন শঙ্কুদেব। তিনি বলেন, "এক নম্বরের কমিউনাল আধিকারিক। কেন ওঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে না? না কি রাজ্যের কাছে এটাই মডেল? শাহজাহানরা আদর্শ? আমি জানি না, লগ্নজিতা সুস্থ আছেন কি না। গতকাল যেভাবে ওঁকে হেনস্থা করা হয়েছে, ওঁর সুস্থতা চাই। 'জাগো মা' যদি সেকুলার গান না হয়, তাহলে মা উড়ালপুলের নাম বদলে দিন মুখ্যমন্ত্রী! গতকাল রাতে হয়েছে, এখনও এফআইআর হয়নি। কেন ওঁর অর্থনীতি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে না? একটা পাবলিক স্কুল, সাউথ পয়েন্টের নাম কপি করে তৈরি। চুল চোর চালাচ্ছে। কোন শিক্ষা দফতর এই ধরনের স্কুল চালানোর অনুমতি দেয়? যেখানে এক শিল্পীকে এই ধরনের হেনস্থার শিকার হতে হয়, সেখানে রাজ্যের শিশুরা নিরাপদ? ২৪ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি জেলা পুলিশকে, রাজ্যকে দিচ্ছি ৪৮ ঘণ্টা। সদর্থক পদক্ষেপ না করলে, এর শেষ দেখব। ওসি শাহজাহান হক তৈরি থাকুন। রিট পিটিশন করব, কোর্টে টানব, জেলে ঢোকাব আপনাকে।"

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়দের কাছেও আবেদন জানান শঙ্কুদেব। তাঁর বক্তব্য, "আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি। শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাছে করজোড়ে আবেদন করছি। প্রসেজজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শ্রাবন্তীদেবীদের কাছে জানতে চাই, এই গান সাম্প্রদায়িক? আপনাদের মনে হয়, মেহবুবদের প্রোমোট করবে পুলিশ, রাতে শিল্পীরা গাইতে গেলে এমন হেনস্থা হতে হবে এবং পুলিশ এফআইআর করবে না, পদক্ষেপ করবে না?" অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে বলেও দাবি করেন শঙ্কুদেব।

লগ্নজিতা এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি এই ঘটনায়। তবে শঙ্কুদেব জানান, কলকাতায় ফিরেছেন লগ্নজিতা। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। অসুস্থ বোধ করছিলেন। থানায় অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। লগ্নজিতা যখন থানা বসে, বাইরে প্রায় ৫০০ লোক নিয়ে মেহবুব হাজির হন, এফআইআর করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন। মীমাংসা করে নিতেও বলেন। ওসি-ও বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেন বলে অভিযোগ। 

লগ্নজিতাকে কি যৌন হেনস্থা করা হয়? উত্তরে শঙ্কুদেব বলেন, "একদম করা হয়েছে। মহিলা গায়িকা গান গাইছে। উঠে পডে বলছেন, 'সেকুলার গান গা'। বাংলা জুড়ে বাংলাদেশ বানিয়ে ফেলেছে জিহাদিরা। কী গান গাইবেন ঠিক করে দিচ্ছেন। এরাই তৃণমূলের মুখ। ব্রাত্য বসুর কাছে জানতে চাই, আপনি তো নাটক করেন। আপনিই বলুন! ৭.৩০টায় ঘটনা ঘটেছে। ৮-৯টায় থানায় যান ওঁরা। ২টো বেজে যাওয়ার পরও অভিযোগ নিচ্ছিল না। থানা ঘিরে বলছে ক্ষমা চাইতে হবে? এটা পশ্চিমবঙ্গ না পাকিস্তান? নাম ধরে বলছি, মেহবুব এবং তার সঙ্গীরা চিনে গ্রেফতার হয়েছিল কি না খবর নিন। চিন এবং অন্য দেশের সংযোগ আছে কি না খবর নিন। বিদেশি অনুদান আছে কি না? চুল ব্যবসার নামে পাকিস্তানের টাকা ঢুকছে কি না, খবর নিন। আমি কোনও ধর্মের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট করে বলতে চাই না। কিন্তু এই সংস্কৃতি কি বাংলার জন্য আদর্শ?"