মুম্বই: ভালো গায়ক বা গায়িকা হয়ে ওঠার জন্য, সুন্দর কণ্ঠ, সুর-তাল-ছন্দ সম্পর্কে সম্মক ধারণা তো অবশ্যই থাকতে হয়। আর যেটা খুব বেশি দরকার তা হল স্পষ্ট উচ্চারণ। শুধু একটা ভাষাতেই তো হলে চলবে না, সব ভাষাতেই সমান দখল থাকতে হবে। এই বিষয়ে লতা মঙ্গেশকরকে সেরা পরামর্শটা দিয়েছিলেন বলিউডের ট্র্যাজিক নায়ক দিলীপ কুমার। লতা মঙ্গেশকর এবং দিলীপ কুমারের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। মুম্বইয়ের একটি লোকাল ট্রেনে দিলীপ কুমারের সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের পরিচয় করিয়ে দেন সুরকার অনিল বিশ্বাস। দিলীপ কুমারের আত্মজীবনীতে লতা মঙ্গেশকরের কিছু অজানা কথা উল্লেখ করা রয়েছে। সেই প্রথম পরিচয়ের সময় কথপোকথন ছিল এরকম- সুরকার অনিল বিশ্বাস দিলীপ কুমারকে বলছেন, 'ও হচ্ছে লতা। খুব ভালো গান গায়।' সেটা শুনে দিলীপ কুমার জিজ্ঞাসা করেন, 'তাই নাকি! কোথায় থাকে?' তখন অনিল বিশ্বাস লতা মঙ্গেশকরের সম্পর্কে বাকিটা বলেন। সব শুনে দিলীপ কুমার বলেন, 'ও তার মানে লতা মরাঠী। মরাঠী হলে তো হিন্দিটা চলে গেলেও উর্দু উচ্চারণে সমস্যা হতে পারে। তাই লতার ভালো গায়িকা হয়ে ওঠার জন্য, শীঘ্রই উর্দু শেখার ব্যবস্থা করা উচিত। বিশেষ করে তাঁদের কথা ভেবে, যাঁরা গানের সুরের পাশাপাশি গানের কথাও খুব মন দিয়ে শোনেন।'


আরও পড়ুন - Lata Mangeshkar Passes Away: 'বাকি জীবনটা লতাজি-র কণ্ঠস্বর আর সঙ্গে কাটানো স্মৃতি নিয়ে বাঁচব', বললেন 'বিধ্বস্ত' অলকা ইয়াগনিক


লতা মঙ্গেশকর এমন পরামর্শ পেয়ে বলেছিলেন, 'বড় ভালো পরামর্শ দিয়েছিলেন কুমার সাব। সত্যি কোনও বিষয়ে উন্নতি করার জন্য সেই বিষয়টায় দক্ষতার সঙ্গে শেখা উচিত। তাই আমি বাড়ি গেলাম। এবং আমার এক আত্মীয়তে বললাম যে কার থেকে ভালো উর্দু শেখা যায়? এরপরই আমি মৌলানা সফি ইমামের কাছে উর্দু শেখা শুরু করলাম। এরপর আমার উর্দু উচ্চারণ অনেক ুন্নত হয়। ফলও পাই হাতেনাতে। 'মুঘল-এ-আজম' তো বটেই, 'পাকিজা' ছবির 'মৌসম হ্যায় আশিকানা' গানটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। সে গানের উর্দু উচ্চারণ বড় নিখুঁত।' ওই বইতে লেখা রয়েছে যে, দিলীপ কুমারের সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ থাকলে, লতা মঙ্গেশকর কিছুতেই সেউ সুযোগ হারাতেন না। লতা বলেছিলেন, 'সেই সময় তো অত বেশি দেখা হত না, তবে মাঝেমধ্যেই আমার রেকর্ডিং থাকত মেহবুব স্টুডিওতে। যদি জানতাম কুমার সাব কাছাকাছি কোথাও শ্যুটিং করছেন, তখনই তাঁকে ফোন করতাম। সেসময়ে দিলীপ কুমার ছিলেন সুপারস্টার। আমি প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে স্ট্রাগল করছি। অথচ কুমার সাব একেবারে সাধারণভাবে আমার সঙ্গে মিশতেন, বড় দাদার মতো পরামর্শ দিতেন।'


আর একটা মজার কথা দিলীপ কুমারের আত্মজীবনীতে শেয়ার করেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। বলেছিলেন, 'একবার কল্যানজির বাড়িতে আমরা সকলে যাই। স্ন্যাকস খাওয়ার পর আমি দেখলাম সেখানে কিছু পান রাখা রয়েছে। আমি বেশ আবদার করে ইউসুফ ভাইকে বলি একটা পান খাবেন নাকি! মুহূর্তে কুমার সাবের মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায়। তিনি বলেন, এটা একেবারেই তোমায় মানায় না। ভবিষ্যতে আর কখনও এমন কাজ কোরো না। আমি বুঝতে পারি, সত্যিই তো, একজন ভদ্রমহিলার একজন সুপারস্টারকে এরকম প্রস্তাব দেওয়া কিছুটা চক্ষুলজ্জার।'


প্রসঙ্গত, গত ২৭ জানুয়ারি করোনা আক্রান্ত হয়ে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হন কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর। সঙ্গে ছিল নিউমোনিয়ার সমস্যাও। বেশ কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসা হওয়ার পরও শেষ রক্ষা হল না। আজ সকালে প্রয়াত হন সুর সম্রাজ্ঞী। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া দেশজুড়ে।