কলকাতা: ২০১৪ সালের ২২ অগস্ট রিলিজ করেছিল প্রথম ‘মরদানি’। গত বছর এসেছে ‘মরদানি-টু’। অর্থাৎ এই ফ্র্যাঞ্চাইজির ছয় বছর হয়ে গেল দেখতে দেখতে। রানি মুখোপাধ্যায়কে শিবানী শিবাজী রাও হিসেবে চিনে গিয়েছেন আপামর ভারতবাসী। মুম্বইয়ে রানি-র সাফল্য নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় তাঁর কামব্যাক নিয়ে অবশ্যই বলার আছে। রানি বলিউডে এর আগে যতবার সফল হয়েছেন, নরম-সরম প্রেমিকার ভূমিকাতেই অভিনয় করেছেন। তা সে ‘গুলাম’ ছবিতে আমির খানের বিপরীতে হোক, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এ শাহরুখের সঙ্গে কিংবা ‘বান্টি অর বাবলি’-তে অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে। মাঝে কয়েকটা বছর কাজ থেকে খানিক দূরে থেকেছেন। তারপর ফিরে এসে চকোলেট-মিষ্টি ইমেজ ছেড়ে সুপার-কপের রোলে নিজেকে ফিট করাটা অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল এবং সেই চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গে উতরে গিয়েছেন রানি। একটা ছবি সফল হওয়া একটা ব্যাপার, কিন্তু একই ছবির সিকোয়েলও যখন সফল হয়ে যায়, তখন সেটাকে আর অ্যাক্সিডেন্টাল হিট বলা যায় না। বরং তৃতীয় সিকোয়েল তৈরি হলে হিটের হ্যাট্রিক হয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন অনেক ফিল্ম-বোদ্ধা।
‘মর্দানি’ ছবির ষষ্ঠ বর্ষপূর্তিতে উচ্ছ্বসিত ছবির কাহিনিকার গোপী পুথরান, যিনি ঘটনাক্রমে ‘মর্দানি-২’ ছবির নির্দেশকও বটে। তাঁর এই সফল সফরের কথা বলতে গিয়ে গোপী জানান, ‘মর্দানি’ ছবির সাফল্য লুকিয়ে আছে দুটি উপাদানের উপর। এক, মহিলা কেন্দ্রিক গল্প, আর দুই, পর্দায় রানি-ম্যাজিক। মহিলাদের জীবন নির্ভর গল্পের একটা ঘাটতি আছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। বলা যায়, মহিলা সুপার-কপের গল্প বলার শুরুটা আমার হাত দিয়েই হল বলিউডে।‘



এ যাবৎ বলিউডে গোপীর ফিল্মি সফর বেশ মসৃণই ছিল । ‘লফঙ্গে পরিন্দে’ ছবির সূত্রেই তাঁর যশরাজ ফিল্মস-এ পদার্পন। সেখান থেকেই একসময় ‘মর্দানি’-র কাহিনিকার ও সহ-নির্দেশনা এবং পর্যায়ক্রমে ‘মর্দানি-২’ ছবিতে নির্দেশকের দায়িত্ব পালন। আদিত্য চোপড়ার সঙ্গে গত ১০ বছর ধরে কাজ করছেন তিনি এবং মহিলা পুলিশ অফিসারের কাহিনি নির্ভর পরপর হিট ছবি দেওয়ার কৃতিত্ব তাঁরই প্রাপ্য। প্রথম ‘মর্দানি’-তে দেখা গিয়েছিল কিশোরী ও শিশুকন্যা পাচার, সেক্স-স্লেভ তৈরির ভয়াবহ চক্রের কথা। এক অনাথ আশ্রম থেকে রাতারাতি উধাও হয়ে যাওয়া এক কিশোরের খোঁজ শুরু করতে গিয়ে সে চক্রের সন্ধান পান শিবানী। ‘মর্দানি-২’ আবার আরেক রকম। সেখানে রয়েছে এক সিরিয়াল কিলার, যে যুবতীদের ভয়াবহ অত্যাচারপূর্বক ধর্ষণ ও খুন করে। সেই হত্যাকারীর খোঁজে নেমে আবার দেখা যায় তাকে ভাড়া করেন রাজনীতিকরা। ভীষণ রকমের ডার্ক এক দুনিয়ায় সন্ধান আমরা পাই শিবানীর সঙ্গে চলে।
‘মর্দানি’-র এখনও পর্যন্ত জোড়া সাফল্য সম্পর্কে গোপী বলেন, ‘রানির সঙ্গে আমার একটা অসম্ভব ভালো ইকোয়েশন আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি সেই আদান-প্রদানটারই ফসল এ ছবির সাফল্য। পর্দায় সেই ম্যাজিকই দেখেছেন দর্শকরা। রানি ওর জীবনবোধ এবং মন প্রাণ ঢেলে দিয়েছিল এই শিবাণী শিবাজী রাও চরিত্রে। এত গভীরতা ও যোগ করেছে চরিত্রটাতে যে স্বাভাবিক কারণেই সেটা জীবন্ত হয়ে উঠেছে। একজন কাহিনীকার ও নির্দেশক হিসাবে এটা আমায় বেশ তৃপ্তি দিয়েছে। অ্যাকশনের অংশ গুলিতে রানি অত্যন্ত ন্যাচারাল থেকেছে। একইসঙ্গে অসহায় ভাব আর চারিত্রিক দৃঢ়তা, দুই-ই খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে।‘
মহিলাদের উপর অত্যাচার ও তার সমাধানে মহিলা পুলিশ অফিসারের ঝাঁপিয়ে পড়া বিষয়টা ছবির মধ্যে চলে আসা এবং তা দেখতে মানুষের হলে আসা সম্পর্কে গোপীর মত, ‘দর্শকরা চান মহিলাদের জীবন ভিত্তিক ছবি দেখতে। কারণ মহিলাদের জীবনের অন্ধকার দিকগুলো খুব কমই ছবিতে উঠে আসে। এই ছবিতে যেহেতু তাদের সমস্যা ও জার্নির একটা নিশ্চিৎ দিকনির্দেশ ছিল, তাই এই পুরুষ শাসিত সমাজে ‘মর্দানি’, নারী-মনের সেই অন্তঃস্থলকে স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা যে বিষয়ের উপর জোর দিয়েছি তা হল, প্রতি পদক্ষেপে যেখানে আপোষ করাই প্রত্যাশিত, সেখানে একটি মেয়ের মাথা না নোয়ানোর লড়াই।‘
মুম্বইয়ের অন্যতম বড় প্রযোজনা সংস্থা যশরাজ ফিল্মস–এর সঙ্গে তাঁর এই সুসম্পর্কের অন্যতম কারণ হিসাবে গোপী বলেন আদিত্য চোপড়ার কথা- ‘এই দশটা বছরে আদিত্য চোপড়ার সঙ্গে একটা আত্মিক যোগাযোগ গড়ে উঠেছে আমার, যার ফলে আমার মননশীলতাকে আমি সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পেরেছি। আমি যা করতে চেয়েছি, যেভাবে করতে চেয়েছি আদি এর কোনওটাতে বাধা দেননি। এই ফ্লেক্সিবিলিটি সবার থাকে না। প্রযোজক স্বাধীনতা দিলে পরিচালকের কাজ করতে অনেক সুবিধা হয়।‘
‘মর্দানি’-র প্রথম ছবিতে কাহিনিকার এবং অ্যাসিস্টান্ট ডিরেক্টর ছিলেন গোপী। সে ছবির পরিচালক প্রদীপ সরকারের সঙ্গে কাজের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লাফাঙ্গে পরিন্দে করার সময় থেকেই প্রদীপদার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক। সেই রিলেশনটাই বয়ে এসেছিল মর্দানি পর্যন্ত। দাদাকে সাহায্য করার জন্য আমি এডি হয়ে যাই ছবির। আমি বরাবরই কাহিনি লেখার পাশাপাশি ছবি পরিচালনাও করতে চেয়েছি। মর্দানি-র প্রথম ছবিতে এডি হিসেবে থাকাটা আমায় মর্দানি-২ পরিচালনা করতে সাহায্য করেছে।‘
মর্দানি-তে পুলিশ অফিসার শিবানী শিবাজী রাও হিসেবে রানি মুখোপাধ্যায়কে পুরোপুরি গ্রহণ করে নিয়েছেন দেশের মানুষ। এহেন সাফল্য ছবির তৃতীয় সিকোয়েল তৈরির পথ প্রশস্ত করছে বলেই মনে করছেন ফিল্ম-বাফ, বক্স অফিস বিশেষজ্ঞরা। আবারও পুলিশ অফিসার শিবানী হিসেবে পাওয়া যাবে কি রানি মুখোপাধ্যায়কে?গোপী অবশ্য এ ব্যাপারে এখনই মুখ খোলেননি।