কলকাতা: পাঁচ মাস বয়সে মাকে হারিয়েছিলেন। জ্ঞান হওয়ার আগেই মাতৃহারা হয়েছিলেন ছোট্ট 'মোহন'। একরত্তি ছেলের দায়িত্ব কে নেবে এমনই সাত পাঁচ ভেবে বাবা তাঁকে রেখে এলেন পিসতুতো এক বোনের কাছে। সেই বাড়িতে এসেই নাম বদলে গেল তাঁর। দিদা বললেন, 'আমার পরাণের ধন।' সেই থেকেই নাম হল পরাণ। দিদাকে ডাকতেন 'দাদু' বলে, আর মা? সেই পিসিকে। সম্পর্ককে স্বীকার করেননি কখনও আমৃত্যু তিনিই পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'মা'। 'দস্য়ি' পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Paran Banerjee) কখনও তিনি শাসন করেছেন, কখনও বেঁধেছেন স্নেহে, আদরে। মাতৃদিবসের আগে এবিপি লাইভকে সেই মায়ের কথা বলতে গিয়ে কখনও আবেগে গলা বুজে এল অভিনেতার, কখনও মুখে ফুটে উঠল স্মৃতিমাখা হাসি। 


আরও পড়ুন: Paran Banerjee Exclusive: লাঠি দিয়ে মারার পর পিঠে সেঁক দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা


একটা ঘটনার কথা এখনও মনে পড়ে যায় পড়ে যায় পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বললেন, 'একদিন রান্নাঘরে নারকেল কোরানো হচ্ছে। আমি ভাবছি.. যদি একটা নারকেলের মালা পেতাম, খেতাম। হঠাৎ একটা মালা গড়িয়ে আমার দিকে আসতেই আমি তুলে নিয়ে ছুট্টে চলে গেলাম আড়ালে। তখনও জানি না, মা আমার নারকেল চুরিটা দেখতে পেয়েছেন। নারকেল খাচ্ছি, তথন মা বেরিয়ে এলেন। টেনে উঠোনে এনে ঠিক শিরদাঁড়ার ওপর মারলেন জাঁতা ঘোরানোর লাঠির বাড়ি। আমি বেঁকে গেলাম। 'দাদু'-র চোখে পড়ায় সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসে আমায় তখনকার মত মারের হাত থেকে রক্ষা করলেন। তারপর সন্ধেবেলা.. বারন্দায় লন্ঠন জ্বলছে.. মা আমায় ডাকলেন। কোলে উপুড় করে শুইয়ে কাপড় দিয়ে সেঁক দিতে লাগলেন পিঠে। হঠাৎ পিঠে গরম জলের ফোঁটা পড়ল। মুখ ফিরিয়ে দেখলাম, মা কাঁদছে।'


মৃত্যুর সময় মাকে শেষবারের মতো দেখতে যাননি পরাণ। বললেন, 'আমার বোকার মতো একটা অনুভূতি, আবেগ রয়েছে। যা আমি দেখিনি তা আমি বিশ্বাস করি না। আমি মায়ের মৃত্যু দেখিনি। তাঁর আগের দৃশ্যটুুকু আমার কাছে জীবন্ত। আমি এখনও বিশ্বাস করি মা আছেন, এই বিশ্বাস নিয়েই আমি বাকি জীবনটা বেঁচে থাকব।'