কলকাতা: ছোটবেল থেকেই তাঁর ভাল লাগত না ছকে বাঁধা জীবন। বাড়ির ছোট ছেলেকে নিয়ে ভীষণ চিন্তা করতেন বাবা। আর মা, তিনি ছেলেকে বাঁচাতেন সব বকুনি থেকে। একদিন বাবা তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন.. বড় হয়ে কী হতে চান তিনি? উত্তরে কলেজ পড়ুয়া সেই ছেলে বলেছিলেন... উত্তরটা জেনে নেওয়া যাক তাঁর থেকেই। কলেজ পড়ুয়া, ছন্নছাড়া সেই ছেলেটি এখন খ্যাতির শীর্ষে। তিনি নচিকেতা চক্রবর্তী (Nachiketa Chakraborty)। এবিপি লাইভকে (ABP Live)-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, শিল্পী উজাড় করে দিলেন তাঁর মনের কথা। স্মৃতি হাতড়ালেন .. ভাসলেন, ডুবলেন আবেগে।
সবচেয়ে ছোট বলে, মায়ের স্নেহ পেয়েছেন সবচেয়ে বেশি। পড়াশোনা ভাল লাগত না কোনোদিনই। নচিকেতা বলছেন, 'বাড়ির শাসন নিয়ে একটা খুব মজার গল্প মনে পড়ে। তখন আমি পড়াশোনাই করছি, কিন্তু বুঝতে পারছি, এটা আমার জন্য নয়। আর্কিমিডিস, অ্যারিস্টটল কী বলল সেটা জেনে আমি কি করব! ভীষণ অবসাদে চলে যাচ্ছি। একটা সময় আমি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। বাড়িতে থাকি না, বন্ধুুদের বাড়িতে রাত কাটিয়ে আসি। বাবা বুঝলেন, খুব খারাপ হচ্ছে বিষয়টা। বাড়িতে মিটিং ডাকা হল। মা চুপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে, আর আছে বাকি সদস্যরা। অনেকে অনেক কথা বলছে। শেষে বাবা অমলেশ পুরীর মতো বললেন, 'তোমারে আমি ঠিক বুঝি না। তুমি কী করতে চাও জীবনে? কী হইতে চাও?' তারপরে আশ্চর্য্য ঘটনা। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঢুলছিলাম। হঠাৎ বললাম.. 'ইতিহাস'। বাবার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর, 'বাইরাইয়া যাও। আমার বাড়িতে ধূসর ইতিহাসের কোনও স্থান নাই।' কথাটা বলেই হো হো করে হেসে উঠলেন নচিকেতা।
প্রতিবাদ রয়েছে, সাফল্য রয়েছে... আর আছে প্রেম। কিন্তু নচিকেতার জীবনে কি কোনও আফশোস রয়েছে? শিল্পী বলছেন, 'প্রচুর। এই আফশোসগুলোর জন্যই তো বেঁচে থাকা। যেগুলো হারিয়ে গেল... যেগুলো লেন্সে ধরা পড়ল না সেগুলো যদি আবার ফিরে পাওয়া যেত। মানুষের জীবনে তো সবচেয়ে বড় মহাকাল সময়। সেটাই তো বালির মতো বেরিয়ে যাচ্ছে হাত থেকে। মাকে আমার অনেক কিছু দেখানোর ছিল। ওঁর ক্যানসার হয়েছিল। মা আমার জন্য এত কষ্ট করেছেন, এত সহ্য করেছেন। আমি সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে গান করতে চলে আসি, পরিবারের সবাই কটু কথা বলত মাকে। উনি সেই সবটা অবলীলায় ধারণ করেছেন আর বাজপাখির মতো আমায় ডানা মেলে আগলে রেখেছেন। অথচ আমার যখন সময় এল, মা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। উনি সব দেখেছেন। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম মায়ের মাথাটা আকাশে ছুঁইয়ে দেব। সেটা পারলাম না। বাবাও আমায় নিয়ে ভীষণ টেনশন করতেন। কখনও পুরনো সময় ফিরে পেলে মাকে, বাবাকে সরি বলতে চাই। আমার অনেককে সরি বলার আছে।'
আরও পড়ুন: Nachiketa Exclusive: সরকারি চাকরি ছেড়েছি, বাবাকে বলেছিলাম, 'ইতিহাস হতে চাই' ABP Ananda Live