কলকাতা: ছোটবেলার নববর্ষ মানেই ছিল নতুন জামার গন্ধ, বাড়ির পুজো আর দেদার আইক্রিম, মিষ্টি খাওয়ার ছাড়। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী.. সবার মধ্যের সেই ভালবাসার উষ্ণতা, অনাবিল আনন্দ যেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। শত ব্যস্ততার মধ্যে এখনও নববর্ষের দিনটা নতুন জামা পরা তাঁর চাইই চাই... আর? নববর্ষের একাল সেকাল, এবিপি লাইভের সঙ্গে স্মৃতি হাতড়ালেন জি বাংলার ধারাবাহিক 'নিম ফুলের মধু'-র পর্ণা ওরফে পল্লবী শর্মা (Pallavi Sharma)।


ছোটবেলায় নববর্ষ মানেই বাড়িতে পুজোর আয়োজন, অতিথি সমাগম। পল্লবী বলছেন, 'আমাদের ব্যবসায়ী পরিবার বলে নববর্ষের দিনটা বাড়িতে পুজো হত। আগেরদিন থেকে মায়েরা নাড়ু, মোয়া তৈরি করতে বসতেন, বাড়ি সাজানো হত... প্রচুর আত্মীয়রা আসতেন। তারপর, নববর্ষের দিন সকাল সকাল স্নান করে নতুন জামা পরে পুজোয় বসে পড়তাম। অনেকের বাড়িতে এই দিনটা পাঁঠার মাংস হত দুপুরের মেনুতে। তবে বাড়িতে পুজো বলে আমাদের মেনু ছিল নিরামিষ। বিকেলে বাবার হাত ধরে বেরিয়ে পড়তাম দোকানে, হালখাতা করতে। বাবার দোকান, বাবার বন্ধুদের দোকান... বছরের এই একটা দিন আইসক্রিম খাওয়ায় ছিল দেদার ছাড় । বাড়ির ফ্রিজে প্রচুর মিষ্টি জমত। ছোটবেলার নববর্ষ বললে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলা যায় অনেক অনেক স্মৃতির কথা।'


সত্যি সত্যিই এক নিঃশ্বাসে স্মৃতির কথা শোনাচ্ছিলেন পল্লবী। এখন ধারাবাহিকের ব্যস্ততা, কাজে জীবনের অনেকটা বদলে গিয়েছে তাঁর। তবে এখনও নববর্ষে নতুন জামা পরাটা বদলায়নি। অভিনেত্রী বলছেন, 'আগে বাবা প্রত্যেক বছর নতুন জামা কিনে দিতেন। এখন দাদা কিনে দেন, না কিনতে পারলে টাকা পাঠিয়ে দেন। নিজে কিনলেও নববর্ষে নতুন জামা পরার প্রথাটা বজায় রেখেছি এখনও। এত বছরের কেরিয়ারে আমার নববর্ষে শ্যুটিং করতে হয়নি কখনও। এই দিনটা বাড়িতেই থাকি, ঘরদোর পরিষ্কার করি.. বিছানায় নতুন চাদর পাতি.. ঠিক যেমন রীতি থাকে আর পাঁচটা বাঙালি বাড়িতে। তবে এখন নববর্ষে শাড়ি পরে ফেসবুকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের চলটাই বেশি। আগের মতো সেই আত্মী, প্রতিবেশীদের বাড়িতে প্রসাদ দিতে যাওয়া, প্রণাম করা.. ব্যক্তিগত ছোঁয়াটুকু হারিয়ে যাচ্ছে। আগে নববর্ষ মানে বাড়িতে প্রিয়জনের আসা, সেই আতিথেয়তা, ভালবাসার জায়গাগুলো ভীষণ মনে পড়ে এখন। নিউ ইয়ারের ভিড়ে আমরা বাংলা নববর্ষটা ভুলতেই বসেছি যেন।'


ছোটবেলায় বাবা পোশাক কিনে দিতেন পল্লবীকে, তবে নিজের উপার্জনে বাবা-মাকে নববর্ষে নতুন পোশাক দেওয়ার আনন্দ অধরাই থেকে গিয়েছে তাঁর। পল্লবী বলছেন, 'আমি যখন ক্লাস ২, তখন মা মারা যান। বাবা মারা যান দশম শ্রেণীতে। তখনও এতটা প্রতিষ্ঠিত হতে পারিনি আমি। নিজের উপার্জনে বাবা-মাকে নতুন পোশাক দেওয়ার আনন্দটা আর পাওয়া হল না আমার। এই আফশোসটা থেকে যাবে।'


রেজোলিউশন মানেই তো নিউ ইয়ার। আর নববর্ষে নিজের কাছে নিজে কোনও সংকল্প করতে হলে? পল্লবী বলছেন, 'চারিদিকে এত নেতিবাচক চিন্তাভাবনা, এত কাজের চাপ... আমার মনে হয় নিজেকে ভাল রাখাটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজের কাছে নিজের শপথ... ভাল থাকব, ভাল রাখ।'