কলকাতা: বিবাহ-বিতর্কে নুসরতকে জবাব দিলেন নিখিল জৈন। এদিন আইনজীবী মারফত বিবৃতি জারি করে নিখিল বলেছেন, ২০১৯-র জুনে তুরস্কে গিয়ে নুসরতকে বিয়ে করেছিলাম। নুসরতের সঙ্গে বিয়ের পরে কলকাতায় রিসেপশন হয়। স্বামী-স্ত্রীর হিসেবেই আমরা একসঙ্গে ছিলাম। সমাজে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়েই আমরা একসঙ্গে থাকতাম। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই নুসরতের আচরণ বদলে গিয়েছিল। ২০২০-র অগাস্টে একটি ফিল্মের শ্যুটিংয়ের সময় আচরণ বদল লক্ষ্য করি। কেন হঠাৎ আমার প্রতি আচরণ বদলে যায়, বলতে পারবে নুসরতই। নিখিলের অভিযোগ, বারবার বলা সত্ত্বেও বিয়ের রেজিস্ট্রেশন এড়িয়ে গিয়েছিল নুসরত।
ওই বিবৃতিতে নিখিল আরও উল্লেখ করেছেন, খুশি মনেই বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন নুসরত। সেই মতোই আমরা বিয়ে করি। কিন্তু নুসরতের বাইরে যাওয়া নিয়ে নানা তথ্য সামনে আসতে শুরু করে। নুসরত সম্পর্কে নানা খবর আসার পরেই নিজেকে প্রতারিত মনে হতে থাকে। ২০২০-র ৫ নভেম্বর সমস্ত জিনিস নিয়ে বেরিয়ে যায় নুসরত। সমস্ত জিনিস, কাগজপত্র নিয়ে বালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে চলে যায় নুসরত। তারপর থেকে আমরা আর একসঙ্গে থাকিনি।
নুসরতের সাত পয়েন্টের বিবৃতির পাল্টা এদিন নয় পয়েন্টের বিবৃতি জারি করেন নিখিল। এদিকে গতকাল তৃণমূলের সাংসদ-অভিনেত্রী নুসরত জাহান অভিযোগ করেন, পারিবারিক গয়না, পোশাক বেআইনিভাবে নিখিলের পরিবার আটকে রেখেছে। নুসরতের অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা নিখিল জৈনের দাবি বিয়ের পর বিপুল পরিমাণ গৃহঋণের ভার এড়াতে পারিবারিক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা দিয়েছিলাম নুসরতকে। সেই টাকার অনেকটা এখনও বকেয়া আছে। টাকা, গয়না নিয়ে যা অভিযোগ করেছেন নুসরত, তা অসত্য বলে দাবি নিখিলের।
নিখিল জৈনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে গতকালই মুখ খুলেছেন তৃণমূল সাংসদ-অভিনেত্রী নুসরত জাহান। বিবৃতি দিয়ে তিনি দাবি করেছেন, নিখিলের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে নয়, ছিলেন লিভ-ইন রিলেশনে। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রশ্নই ওঠে না। তুরস্কে বিয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নুসরত জাহান দাবি করেছেন, ওদেশের বিবাহ আইন অনুযায়ী ওই অনুষ্ঠানের কোনও বৈধতা নেই। যেহেতু এটা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ে, তাই ভারতে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন ছিল, সেটা করা হয়নি। আইনের চোখে এটা বিয়েই নয়। বহুদিন ধরে আমরা বিচ্ছিন্ন। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রকাশ্যে বলতে চাইনি। বিবৃতিতে জানান নুসরত জাহান।
গত কয়েকদিন ধরেই নুসরত জাহান এবং নিখিল জৈন সংবাদের শিরোনামে। তা নিয়ে ট্যুইটারে কটাক্ষ থেকে পাল্টা কটাক্ষ বিজেপি এবং তৃণমূলের। এবার বিয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ট্যুইটারে তৃণমূল সাংসদকে কটাক্ষ করলেন অমিত মালব্য। তাঁর বক্তব্য়, সংসদের নথিতে নিজেকে বিবাহিত বলে উল্লেখ করেছেন নুসরত জাহান। প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ তুলে বিজেপিকে পাল্টা খোঁচা কুণাল ঘোষের।
সাংসদ পদে শপথগ্রহণের সময়েও নিজের নাম বলেছিলেন, নুসরত জাহান রুহি জৈন। সংসদের দেওয়া নথি অনুযায়ী, লোকসভার ওয়েবসাইটের তথ্যও বলছে তিনি বিবাহিত। স্বামীর নাম নিখিল জৈন। বিয়ের তারিখ ২০১৯-এর ১৯ জুন। কিন্তু আচমকা একটা বিবৃতিতেই দানা বেঁধেছে বিতর্ক। সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েন এবং বিবাহ বিতর্কের মধ্যে, বুধবার এক বিবৃতিতে অভিনেত্রী-সাংসদ দাবি করেন, অনেক আগেই আমরা আলাদা হয়ে গেছি। ব্যক্তিগত জীবনকে আড়ালে রাখতে চাই বলে আমি এনিয়ে কিছু বলিনি। যাকে বিয়ে বলে দাবি করা হচ্ছে, তা আইনি এবং বৈধ নয়। আইনের চোখে এটা বিয়েই নয়। উল্লেখ্য, গত বছরের শেষ থেকেই আলাদা থাকছিলেন নিখিল জৈন এবং নুসরত জাহান। এরই মধ্যে অভিনেতা যশ দাশগুপ্তের সঙ্গে নুসরতের সম্পর্কের জল্পনা শুরু হয়। কয়েকদিন আগে সামনে আসে নুসরতের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর। এই প্রেক্ষিতে বুধবার প্রকাশ্যে আসে তৃণমূল সাংসদের এই বিবৃতি।
এর পরই বৃহস্পতিবার আসরে নেমেছে বিজেপি। ট্যুইট করে করে খোঁচা দিয়েছেন অমিত মালব্য। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান লেখেন, “তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান রুহি জৈনের ব্যক্তিগত জীবন, তিনি কাকে বিয়ে করেছেন বা কার সঙ্গে থাকছেন, তা নিয়ে কারও মাথা ব্যথা থাকা উচিত নয়। কিন্তু তিনি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সংসদের রেকর্ডে নিখিল জৈনকে তাঁর স্বামী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে কি তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যা বলেছিলেন?”
দলীয় সাংসদের ব্যক্তিগত জীবনকে রাজনীতির আঙিনায় টেনে আনায় বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। যুক্তি হিসেবে গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রধানমন্ত্রীর হলফনামা প্রসঙ্গ তুলে পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে তারা। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, কাচের ঘরে বসে বিজেপি যেন ঢিল না ছোড়ে। গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দুটো হলফনামা দেখে যেন এসব ট্যুইট করে। বাংলা দখলের যুদ্ধ শেষ। এই পরিস্থিতিতে অভিনেত্রী-সাংসদের ব্যক্তি জীবনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে নতুন যুদ্ধ শুরু হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।