কলকাতা: ঠিক এক বছর আগে আজকের দিনে থেমে গিয়েছিল বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এক কিংবদন্তির পদচারণা। বার বার যে মানুষের প্রেমে পড়েছে আট থেকে আশি, তাঁর মৃত্যুতে যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল কলকাতা। টিভির পর্দায় নিমতলা শ্মশানে শেষ বিদায়ের সেই দৃশ্য দেখতে দেখতে চোখ ভিজে এসেছিল অনেকের। বাবার কপালে শেষবারের জন্য চুম্বন এঁকে দিয়েছিলেন মেয়ে পৌলমী বসু। বছর ঘুরেছে কিন্তু তাঁর শূন্যতা বাঙালি অনুভব করেছে প্রতিটা দিন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আজ তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। 


তিনি সকলের সৌমিত্র জ্যেঠু.. কাকু.. কিন্তু একজন মানুষের কাছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সহযোদ্ধা.. সহকর্মী.. সর্বোপরি একজন বাবা। পৌলমী বসু। গতকাল রাতে মঞ্চে নাটক উপস্থাপনা ছিল, টানা অনুশীলনও চলছে। আজ, একটা দিন ছুটি। বাড়িতে রয়েছেন তিনি। এবিপি লাইভের পক্ষ থেকে ফোন করা হয়েছিল কিংবদন্তি কন্যাকে। পৌলমী বললেন, 'তিথি মেনে বাবার মৃত্যুবার্ষিকীর কাজ হয়ে গিয়েছে ৪ তারিখ। আজ দিনটা আমরা পরিবারের সবাই ওঁকে নিজের মত করে স্মরণ করব, একসঙ্গে থাকব।'


বাবা তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছেন প্রতি মুহূর্তে। পৌলমী বলছেন, 'বাকি পৃথিবীর কাছে উনি একজন বাইরের মানুষ। কারও সঙ্গে হয়ত ওনার একবার-দুবার দেখা হয়েছে। তখন উনি কিছু বলেছেন, সেটাই তাঁরা মনে রেখেছেন সারা জীবন। কিন্তু আমার কাছে উনি আমার বাবা। সারা জীবন উনি আমার পাশে থেকেছেন, জীবনের প্রতিটা পদে আমার বন্ধু হয়েছেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আমার কাছে একজন অসাধারণ বাবা আর একজন ভীষণ ভালো বন্ধু। ৩৬ বছর একসঙ্গে কাজ করেছি আমরা। বাবা আমার সহযোদ্ধা.. সহকর্মী.. আর একজন অত্যন্ত সংবেদনশীল মানুষ। উনি যেভাবে জীবন যাপন করতেন, সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় একটা শিক্ষা। নাটকের মঞ্চে সবসময় ওনার না থাকাটা মনে হয়। যাঁর সঙ্গে মঞ্চে এতদিনের রসায়ন, পার্টনারশিপ, সে চলে গেলে তো একটা বিশাল বড় শূন্যতা তৈরি হয়।'


কাজ করতে ভালোবাসতেন সৌমিত্রবাবু, ভালোবাসতেন বাঁচতেও। পৌলমী বলছেন, 'যখনই মৃত্যু নিয়ে আমাদের কথা হত, উনি বলতেন, মৃত্যু নিয়ে আমি ভাবি না। যতদিন বাঁচব, বাঁচাটাকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে হবে। মৃত্যুর পর কি হল আমি দেখতে আসব না। কিন্তু যতদিন আমি বাঁচব আমার জীবনটা যেন অর্থপূর্ণ হয়.. সেখানে ভালোবাসা থাকবে, সৃজনশীলতা থাকবে। মৃত্যু যেদিন আসবে সেদিন আমায় যেতে হবে। কিন্তু যতদিন আছি, সুন্দর করে বাঁচব।'