কলকাতা: সকালে ঘুম ভাঙতেই ছুটোছুটি, অফিস বেরনোর তাড়া। ছুটে চলা লক্ষ্যের পিছনে। পরিবার নাকি কর্মজীবন, জরুরি কোনটা? সত্যিই কি সমানভাবে পালন করা যায় অফিস আর সন্তানের সমস্ত দায়িত্ব? কমবেশি প্রত্যেক বাবা-মাকেই তাড়িয়ে বেড়ায় এই দুই প্রশ্ন।

সকাল হতেই কাজে বেরিয়ে যান মা-বাবা। সারাদিন বাড়িতে একা থাকে খুদেটি। সঙ্গী? মোবাইল! নিউক্লিয়ার পরিবারের এই চেনা ছবিটাকেই রুপোলি পর্দায় তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ চক্রবর্তী। নিজেদের জন্য কিছুুটা সময় বের করে নিতেই বাবা-মা সন্তানের হাতে হামেশাই তুলে দেন মোবাইল। তারপর? মোবাইল আর অনলাইন গেমিং আসক্তিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে রাজের নতুন ছবি 'হাবজি-গাবজি'-র গল্প। মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।



মোবাইল আসক্তি আমাদের সবারই কমবেশি রয়েছে। বিশেষ করে ছোটদের তো বটেই! এই বিষয়টাকে ছবির মধ্যে দিয়ে তুলে ধরার ভাবনাটা এল কী করে? এবিপি আনন্দর প্রশ্নের উত্তরে রাজ বলছেন, 'আমাদের সঙ্গে আমার ভাগ্নি থাকে। কয়েকবছর আগেও ওর প্রচণ্ড মোবাইল গেমে আসক্তি ছিল। আমি রোজ রাতে ইন্টারনেট অফ করে শুয়ে পড়তাম, সকালে উঠে দেখতাম নেট অন রয়েছে। একদিন শুভশ্রী আবিষ্কার করল, আমার ভাগ্নি রোজ মাঝরাতে উঠে ইন্টারনেট অন করে দেয়। তারপর সারারাত পাবজি খেলে। এমনকী সবার সঙ্গে বসে কথা বলার সময়ও দেখতাম ও মোবাইল গেমে মগ্ন হয়ে থাকে। আমি বারণ করাতে ও আমায় এড়িয়ে যেতে থাকে। ওকে দেখেই প্রথম এই ছবির পরিকল্পনা মাথায় আসে। তারপর আমার অনেক সহকর্মীর সঙ্গে গল্প করতে করতে শুনি, বেশিরভাগ বাড়ির ছোটদের নেশাই মোবাইল গেম।'



'হাবজি-গাবজি'র ট্রেলারই গল্পের আভাস দিয়ে যায় কিছুটা। অফিস নিয়ে ব্যস্ত মিস্টার আর মিসেস বসু ছোট্ট ছেলের হাতে উপহার হিসাবে তুলে দেয় মোবাইল। ধীরে ধীরে সেই মোবাইলই সঙ্গী হয়ে ওঠে অনীশের। সেই নেশা ছাড়ানোর চেষ্টা করলেই শুরু হয় সমস্যা, অশান্তি। তছনছ হয়ে যায় একটা ছোট্ট সুখী পরিবার।



সদ্য মা-বাবা হয়েছেন নিজেরাই। সবে ২ মাস বয়স 'রাজশ্রী'-র আদরের ইউভানের। কর্মজীবন নিয়ে ব্যস্ত দুজনেই। ছবির মত ইউভানেও মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়লে? রাজ বলছেন, এই সমস্যা আসতে পারে। ইউভান বড় হতে হতে আমরা ২০৩০-এর দিকে এগিয়ে যাব। এইসময় মোবাইল ছাড়া কেউ থাকবে এটা ভাবা অনর্থক। তবে আমাদের তৈরি থাকতে হবে। মোবাইলের পাশাপাশি খেলাধূলা, আঁকা, গান শোনা বা বই পড়ার আগ্রহ তৈরি করার চেষ্টা করব ওর মধ্যে। মোবাইলের আসক্তির জন্য কিন্তু পরোক্ষভাবে মা-বাবাই দায়ী থাকে। সমসময়ই চেষ্টা করব ইউভান কোনও ভুল করলে শুধরে দিতে।' মোবাইল গেমিং-এর সমস্যা তো ঘরে ঘরে। দর্শকদের মনে কি ভয় ধরাবে 'হাবজি-গাবজি'? 'এই ছবিটা দেখে সবাই নড়ে বসবে! হাবজি-গাবজির গল্প যে কোনও মা-বাবার মনে ভয় ধরাতে বাধ্য।' উত্তর রাজের।



কেবল ছবির গল্প নয়, শ্যুটিং সেটেও নাকি ঢুকে পড়েছিল পাবজি! রাজ বলছেন, 'আমাদের সেটে এমন অনেকে ছিল যারা পাবজি খেলত। গল্পের মতো আমরা সত্যিই এমন একটা জোনে শ্যুটিং করতে গিয়েছিলাম যেখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক ছিল না। দেখছিলাম, সবাই পাগলের মত করছিল! সেটাও একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।'



১২ লাখেরও বেশি মানুষ ইতিমধ্যেই ছবির ট্রেলার দেখে ফেলেছেন। শীতের শেষে রূপোলি পর্দায় মুক্তির অপেক্ষায় 'হাবজি-গাবজি'।