ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: থামল উদাত্ত কণ্ঠস্বর। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সঙ্গীতশিল্পী উস্তাদ রাশিদ খান (Rashid Khan Demise)। শোকপ্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আজ, দুপুর ৩টে ৪৫ মিনিটে প্রয়াত হন তিনি। 


প্রয়াত রাশিদ খান, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর


ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ২২ নভেম্বর থেকে হাসপাতালে ভর্তি হন শিল্পী। আজ সকাল থেকে অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে তাঁর। ভোররাতেই তাঁকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে পাঠানো হয় বলে জানান চিকিৎসকেরা। কিন্তু তাঁদের সমস্ত চেষ্টা বিফলে পাঠিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।


এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, 'চিকিৎসকরা চেষ্টা করেছেন, কিন্তু এটা বিরাট ক্ষতি। বাংলাকে ভালবাসতেন রাশিদ, তাই বাংলাতেই থেকে গেছেন। আর ওঁর গান আর শুনতে পাব না, খুব খারাপ লাগছে।' শিল্পীর শেষকৃত্যের প্রসঙ্গে বলতে বলতে শোকস্তব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আমি ভাবতে পারছি না রাশিদ আর নেই। খুব খারাপ লাগছে।' 


সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'চিকিৎসকেরা তাঁদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। রাশিদ আলি খান আমার ভাইয়ের মতো। আমি তো গঙ্গাসাগরে ছিলাম। সেখান থেকে জয়নগরে পৌঁছতে কানে কিছুটা এই দুঃখের খবর আসছিল। তারপর নবান্নে পৌঁছনোর পর আমি হাসপাতালে আসি। তখনও আমার কাছে শেষ তথ্য ছিল না। এখানে এসে চিকিৎসক ও ওঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানতে সাধ্যমতো চেষ্টা করা সত্ত্বেও দারুণ ক্ষতি হয়ে গেল। রাশিদ আলি খান বিশ্বখ্যাত এক নাম, তাঁর নতুন করে পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। শিল্পী হিসেবে তাঁকে বলা যেতে পারে 'সঙ্গীত সম্রাট'। উত্তরপ্রদেশ তাঁর জন্মস্থান হলেও বাংলাকে ভালবেসে চিরকাল বঙ্গেই থেকে গেছেন। বিশ্বের এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে তিনি সঙ্গীতের প্রচার করেননি। ওঁর ছেলেও ভীষণ ভাল গান গায়, খুব সুন্দর করে ছেলেকে তৈরি করেছেন। মেয়েরাও খুব ভাল কাজ করেন। কাউকে না কাউকে চলে যেতেই হয়, কিন্তু এত অল্প বয়সে চলে গেল, এটা আমাদের কাছে খুবই দুঃখের।' 


থামল সুরের সফর


থেমে গেল সুরেলা সফর। গত কয়েক বছর ধরেই প্রস্টেট ক্যান্সারে ভুগছিলেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী রাশিদ খান। গত বছরের ২১ নভেম্বর, ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তাঁকে ভর্তি করা হয় পিয়ারলেস হাসপাতালে। সেখানেই আজ তাঁর মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালে উস্তাদ রাশিদ খানের হাতে সঙ্গীতে সেরা বাঙালি সম্মান তুলে দিয়েছিল এবিপি আনন্দ।


আরও পড়ুন: Idan Amedi Injury: গাজায় যুদ্ধে আহত ‘ফওদা’ খ্যাত অভিনেতা, এয়ারলিফ্ট করে নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালে, অবস্থা সঙ্কটজনক


১৯৬৮ সালের ১ জুলাই, উত্তরপ্রদেশের বদায়ুঁতে জন্ম রাশিদ খানের। রাশিদ খানের বাবাও ছিলেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে পারদর্শী। চার বছরের রাশিদকে বাবাই নিয়ে গিয়েছিলেন উস্তাদ নিসার হুসেন খানের কাছে। তাঁর কাছেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রথম নাড়া বাঁধা। অল্প সময়েই সঙ্গীতকে নিজের করে নিয়েছিলেন তিনি। প্রথমবার কনসার্টে গেয়ে তিনি যখন সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১১ বছর। এরপর ১৪ বছর বয়সে কলকাতায় আসেন রাশিদ খান। আইটিসি সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমিতে শুরু হয় সঙ্গীতের পাঠ। তাঁর কণ্ঠের মাধুর্য মুদ্ধ করেছিল গোটা দেশকে। পেয়েছেন পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার। আজ থামল সেই সফর।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।