মুম্বই: নয় নয় করে পাঁচ বছর অতিক্রান্ত। সুশান্ত সিংহ রাজপুত নেই। কিন্তু তাঁকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই আজও। এত বছর ধরে টানাপোড়েনের পর সুশান্তের মৃত্যুতে ক্লিনচিট পেলেন অভিনেতার প্রাক্তন প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা CBI জানাল, সুশান্তকে আত্মহত্যায় কোনও প্ররোচনা জোগাননি রিয়া। সুশান্তের টাকাও সরাননি, কোনও কারসাজি করেননি। যদিও সুশান্তের পরিবার CBI-এর এই রিপোর্ট মানতে নারাজ। (Sushant Singh Rajput)

Continues below advertisement

সুশান্তের মৃত্যুর পর জেলে যেতে হয়েছিল রিয়াকে। তাঁর ভাই শৌভিক চক্রবর্তীকেও জেলে যেতে হয়। ভাই-বোন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করলেও, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিটি পোস্টে এখনও রিয়াকে কটাক্ষে বিদ্ধ করেন নেটিজেনদের একাংশ। কিন্তু সুশান্তের মৃত্যুতে CBI যে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতে রিয়াকে ক্লিনচিটই দেওয়া হয়েছে। রিয়াকে নিয়ে যে মুখরোচক কাহিনি ছড়িয়েছিল, তাও খারিজ করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। (Rhea Chakraborty)

CBI জানিয়েছে, রিয়া কোনও কারসাজিতে জড়িত ছিলেন না। আত্মহত্যায় কোনও রকম ভাবে প্ররোচনাও জোগাননি সুশান্তকে। রিয়া বা মামলায় নাম জড়ানো কেউ সুশান্তকে বেআইনি ভাবে আটকেও রাখেননি, হুমকিও দেননি, প্ররোচনাও দেননি আত্মহত্যায়। সুশান্তের বাবা কেকে সিংহ যদিও আত্মহত্যায় প্ররোচনা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, আর্থিক তছরুপের অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু তেমন কিছু পায়নি CBI. 

Continues below advertisement

CBI জানিয়েছে-

১)  ২০২০ সালের ১৪ জুন বান্দ্রার ফ্ল্যাটে সুশান্তের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। কিন্তু তার ছ’দিন আগে, ৮ জুন ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে বেরিয়ে যান রিয়া এবং শৌভিক। এর পর সুশান্তের সঙ্গে দেখাও করতে যাননি তাঁরা। ৮ থেকে ১৪ জুনের মধ্যে রিয়া বা শৌভিক, দু’জনের কেউই সুশান্তের সঙ্গে ছিলেন না। ফ্ল্যাট ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর সুশান্তের সঙ্গে কোনও কথা হয়নি রিয়ার। একবার শুধু শৌভিকের সঙ্গে কথা হয় হোয়াটসঅ্যাপে, তাও ১০ জুন। 

২) ৮ থেকে ১২ জুন সুশান্তের সঙ্গে ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন তাঁর দিদি মীতু সিংহ। সুশান্তের ম্যানেজার শ্রুতি মোদির নাম ছিল এফআইআর-এ। কিন্তু পায়ে চোট পাওয়ায় ওই বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সুশান্তের ফ্ল্যাটে যাননি শ্রুতি। 

৩) সুশান্তের টাকা চুরি বা আত্মসাত করা হয়নি। রিয়া সুশান্তের কিছু আত্মসাত করেননি। শুধু নিজের Apple ল্যাপটপ এবং একটি হাতঘড়ি নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন রিয়া, যা সুশান্তই উপহার দিয়েছিলেন তাঁকে। CBI-এর রিপোর্ট বলছে, ‘অসৎভাবে কোনও সম্পত্তি হরণ করা হয়েছে, যা সুশান্ত জানতেন না, এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি।’

৪) রিয়াকে নিজের ‘পরিবারের অংশ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন সুশান্ত। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে ‘লিভ ইন’ সম্পর্কে ছিলেন তাঁরা। রিয়ার জন্য যে টাকাই খরচ করেন সুশান্ত, তাঁর অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং আইনজীবীর পরামর্শ মতোই করেছেন। ফলত, তা প্রতারণা বা অর্থনৈতিক তছরুপ, হাতিয়ে নেওয়া বলে গণ্য হয় না। CBI রিপোর্ট বলছে, ‘ছলনাপূর্ণ ভাবে সুশান্তের কাছ থেকে কোনও অস্থাবর সম্পত্তি রিয়ার কাছে গিয়েছে বলে প্রমাণ মেলেনি’।

৫) রিয়া সুশান্তকে হুমকি দেন বা আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেন বলে যে অভিযোগ উঠছিল, তা খারিজ করে দিয়েছে CBI. বলা হয়েছে, ‘রিয়া সুশান্তের মেডিক্যাল রেকর্ডস প্রকাশের হুমকি দিয়েছিলেন বলে যে দাবি ওঠে, তা গুজবের মধ্যে পড়ে’। তাৎক্ষণিক ভাবে সুশান্তকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা বা উস্কানি জোগানো হয়নি। বেআইনি ভাবে তাঁকে আটকে রাখা হয়নি, কোনও ভাবে নিয়ন্ত্রণও করা হচ্ছিল না তাঁকে। 

কিন্তু CBI-এর চূড়ান্ত রিপোর্ট মানতে রাজি নয় সুশান্তের পরিবার। তাঁদের আইনজীবী বরুণ সিংহ ওই রিপোর্টির বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তদন্তকারীরা কথোপকথন, প্রযুক্তিগত রেকর্ডস সাক্ষীদের বয়ান, মেডিক্যাল রেকর্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথি পেশ করেনি বলে দাবি করেছেন তিনি। এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।