কলকাতা: তাঁর চিরকালই পরিচয় রয়েছে সুবক্তা আর স্পষ্টবাদী হিসেবে। নিজের মনের কথা সবসময়েই বলতে পারেন তিনি। কিন্তু নিজের জীবনের সব ওঠাপড়ার মুহূর্ত কী সবার সামনে তুলে ধরা খুব সহজ? বোধহয় নয়। আর সেটা বোধহয় আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যখন সেই মানুষটা একজন অভিনেত্রী হন! অভিনেত্রী বলতেই আমাদের মনে হয়, তিনি এক্কেবারে নিখুঁত এক সুন্দরী। কিন্তু সেই নিখুঁত সৌন্দর্য্যের পিছনের অজানা গল্প, কঠিন লড়াইয়ের কথা অনেকেই বলতে পারেন না প্রকাশ্যে। বিভিন্ন অসুস্থতা সামলে, কখনও ছবির প্রয়োজনে চেহারা আমূল বদলে ফেলেও কতটা কঠিন নিজেকে তন্বী রাখা? খোলা চিঠিতে লিখলেন ঋতাভরী চক্রবর্তী (Ritabhari Chakraborty)।
মে মাসে মুক্তি পাবে ঋতাভরীর নতুন ছবি 'ফাটাফাটি' (Fatafati)। এক প্লাস সাইজ মডেলের গল্পই বলবে এই ছবি। নিজের শর্তে বাঁচার গল্পই বলবে এই ছবি। কিন্তু তন্বী সুন্দরী ঋতাভরী ঠিক কিভাবে হয়ে উঠেছিলেন প্লাস সাইজ মডেল?সেই গল্পই লিখলেন নায়িকা। সদ্য মুক্তি পেয়েছে ছবির নতুন গান 'জানি অকারণ'। সেই গানে প্রশংসিত হয়েছে ঋতাভরী ও আবিরের সমীকরণ। গানটি পছন্দ করার জন্য প্রথমেই দর্শকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঋতাভরী।
তারপরে নায়িকা লিখছেন, 'এই প্রথম একটা ছবিতে অভিনয় করার জন্য আমি বিশাল একটা শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেলাম। এক বছরে আমার একাধিক অস্ত্রোপচার হয়। ৬ মাস বিছানায় শয্যাশায়ী ছিলাম। সেইসময় আমার ৭ কিলো ওজন বেড়ে যায়। সুস্থ হয়ে আমি ওজন কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম কারণ এমন ২টো চিত্রনাট্য হাতে এসেছিল যার জন্য জরুরি ছিল আবার আগের চেহারায় ফিরে যাওয়া। কিন্তু তারপরেই আমি 'ফাটাফাটি' ছবিটার অফার পাই। এরপর সব বদলে গেল। চিত্রনাট্যটা শুনে বুঝলাম, চরিত্রটা সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে গেলে আমায় আরও ১৫ থেকে ২০ কিলো ওজন বাড়াতে হবে। যার অর্থ ছিল আমায় অন্যান্য ছবিগুলি ছেড়ে দিতে হবে কারণ আমার আগের চেহারায় ফিরে যাওয়া ছাড়া সেগুলোতে অভিনয় করা সম্ভব নয়। এমনকি হয়তো আর অভিনয়ের সুযোগই পাব না। কিন্তু কিছু গল্প এমন হয়, যার জন্য কষ্ট সহ্য করতে, কঠিন কাজ করতেও ভাল লাগে। বডি শেমিং বা চেহারা নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করার বিরুদ্ধে আমি সবসময় কথা বলে এসেছি। আর এই ছবিটা সেই কথাই আরও বেশি নারী ও পুরুষের কাছে পৌঁছনোর সুযোগ করে দেবে। আমার অস্ত্রোপচারের পর আমি যেন বেশি করে অনুভব করেছিলাম এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন।'
ঋতাভরী আরও লিখছেন, 'আমার শরীর বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। তবে আমি বিশ্বাস করি আমার শরীর, আমার নিয়ম। এই শরীর, চেহারা এগুলো বইয়ের মলাট। ভিতরের ঋতাভরী, মানুষ ঋতাভরী অপরিবর্তিত রয়েছে, থাকবে। আমায় কেমন দেখতে লাগল তা কখনও আমার পরিচয় হতে পারে না।'
ঋতাভরীর এই সফরনামার প্রশংসায় পঞ্চমুখ টলিউডের একাধিক অভিনেত্রী। মধুমিতা সরকার ছবিতে মন্তব্য করেছেন, 'তুমি অনুপ্রেরণা।' শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, 'লক্ষ্যে অটুট'। দিদি চিত্রাঙ্গদা ছোট বোনের উদ্দেশে দেখেন, 'My unstoppable firecracker'