পার্থপ্রতিম ঘোষ ও রঞ্জিত সাউ, কলকাতা: পকেটমারির অভিযোগে বলিউডের অভিনেত্রীকে গ্রেফতারির ঘটনায় আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়ল পুলিশি তদন্ত প্রক্রিয়া। কেন অভিনেত্রীর সঙ্গে থাকা ব্যাগ সিজ করা হয়নি, সেই প্রশ্ন তোলেন বিচারক। আদালত সূত্রে খবর, সরকারি আইনজীবী দাবি করেন, অভিনেত্রীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ব্যাগ থেকে অন্য এক ব্যক্তির আধারকার্ড মিলেছে।
পকেটমারির অভিযোগে কলকাতা বইমেলা চত্বর থেকে শনিবার পাকড়াও করা হয় বলিউডের অভিনেত্রীকে। রবিবার বিধাননগর মহকুমা আদালতে রূপা দত্তকে তোলা হলে, বিচারক একদিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু, এদিন আদালতে এই ঘটনায় পুলিশি তদন্ত প্রক্রিয়া প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আদালত সূত্রের খবর, পুলিশের সিজার লিস্টে সাক্ষী হিসেবে ২ জনের নাম রয়েছে। যাঁরা হলেন বিধাননগর উত্তর থানার এক মহিলা কনস্টেবল ও ঘটনার সময় মেলায় উপস্থিত এক মহিলা।
আরও পড়ুন: গুজরাত, হরিয়ানা এবং মধ্যপ্রদেশে করমুক্ত হল 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস'
বিধাননগর মহকুমা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায় পুলিশের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, মহিলা সাক্ষীর গোপন জবানবন্দির আবেদন কেন করা হয়নি? এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে, শুনানি চলাকালীনই কান্নায় ভেঙে পড়েন রূপা দত্ত। আদালত সূত্রে খবর, অভিযুক্ত অভিনত্রী জানান, মেলায় ঠান্ডা পানীয় খেয়ে তিনি ডাস্টবিনে বোতল ফেলতে গেছিলেন। তখন ডাস্টবিনে একটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে তুলে নেন। সেই সময় কিছু লোক তাঁকে ঘিরে ধরে। তারপরই গ্রেফতার করে পুলিশ। একথা শুনে বিচারক অভিনেত্রীকে প্রশ্ন করেন, এত বড় বড় জায়গায় অভিনয় করেছেন, অথচ ডাস্টবিনে পড়ে থাকা ব্যাগ তুলে নিলেন? তদন্তকারী অফিসার জানান, ওই মহিলা পরপর পার্স চুরি করছিলেন। পরে সুযোগ বুঝে তা নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেই ডাস্টবিনে ফেলে দেন।
তখনই অভিনেত্রীর আইনজীবী পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, এত জনের পার্স খোয়া গিয়ে থাকলে কেউ অভিযোগ করলেন না কেন? এরপর অভিনেত্রীর ব্যাগ কেন সিজ করা হয়নি, সেই প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশ। আদালত সূত্রে খবর, বিচারক অভিনেত্রীকে জিজ্ঞাসা করেন, তাঁর কাছে কোনও ব্যাগ ছিল কিনা? অভিনেত্রী জানান, ব্যাগ ছিল। তার মধ্যে ছোট ছোট কয়েকটি পার্স রেখেছিলেন তিনি। বিচারক তখন পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেন, অভিনেত্রীর কাছে যে ব্যাগ ছিল, তা সিজ করা হয়েছে? পুলিশ জানায়, অভিনেত্রী যে ব্যাগ তুলেছিলেন, তা সিজ করা হয়েছে। তবে তাঁর সঙ্গের ব্যাগটি সিজ করা হয়নি। তখনই বিচারক প্রশ্ন করেন, কেন তরুণীর সঙ্গের ব্যাগ সিজ করা হয়নি? সরকারি আইনজীবী দাবি করেন, অভিনেত্রীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ব্যাগ থেকে অন্য একজনের আধারকার্ড পাওয়া গেছে। বিচারক জানতে চান, যাঁর আধার কার্ড মিলেছে, তাঁর বিষয়ে পুলিশ খোঁজ নিয়েছে? পুলিশের তরফে জানানো হয়, খোঁজ নেওয়া হয়নি। এরপর বিচারক মন্তব্য করেন, একজন মহিলাকে গ্রেফতার করা হল, মামলা হল, অথচ বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
তদন্তকারী অফিসার ঠিকমতো জবাব দিতে না পারায় তড়িঘড়ি ডেকে পাঠানো হয় অভিযোগকারী পুলিশ অফিসারকে। সেই পুলিশ অফিসার এসে ব্যাখ্যা দেওয়ার পর ধৃতের জামিনের আবেদন নাকচ করে এক দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।