সুদীপ্ত আচার্য, কলকাতা: অভিনয়ে তিনি বরাবরই উজ্জ্বল। সারল্যে আর রসবোধে আরও আকর্ষণীয়। বাঙালির চিরকালীন ম্যাটিনি আইডল সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে (Sabitri Chatterjee) নিয়ে কলকাতার রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠিত হল বৈঠকী আড্ডা। বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর স্মৃতিকথায় উঠে এল নানা অজানা সম্পদ।


সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় মঞ্চে উঠছেন, ব্যাকগ্রাউন্ডে উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি হচ্ছে। মঞ্চে উঠে মাইক হাতে নিয়ে একটু ধীর কন্ঠে সাবিত্রী বলে চললেন, 'সাধারণত পুজো বিয়ে জন্মের পরের অনুষ্ঠান, এসবেই উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি দেওয়া হয়। আমি তো বিয়ে করিনি। আর ৯ বোনের পর যখন জন্মেছিলাম বাড়িতে কান্নার রোল পড়েছিল। প্রতিবেশীরাও তাতে যোগ দিল। সবাই ভেবেছিল ছেলে হবে। বাবা বলল, আমার মেয়েকে আমি মানুষ করব, তোমাদের কী!'


বাঙালির অন্যতম ম্যাটিনি আইডল তিনি। উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বহু বড় তারকার সঙ্গে অভিনয় করেছেন সাবিত্রী। পেয়েছেন পদ্মশ্রী, বঙ্গবিভূষণ-এর মত সম্মান। সেই সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে রবিবার একটি বৈঠকী আড্ডা অনুষ্ঠিত হল কলকাতার রবীন্দ্র সদনে। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ও প্রয়াস সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানের নাম 'বৈঠকী আড্ডায় আমি সাবিত্রী।' ৮৫ বছরের শিল্পী মঞ্চে বসে শোনালেন তাঁর জীবনপথের নানা অভিজ্ঞতার কথা। 


১৯৩৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বাংলার কুমিল্লায় সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম। দেশভাগের পর ওপার বাংলা থেকে এবার বাংলার টালিগঞ্জে এক কামরার ঘরে এসে উঠেছিলেন সাবিত্রী। তারপর প্রায় পাঁচ দশকের বেশি অভিনয় জীবন... উদ্বাস্তু জীবনে লড়াইটা যে সহজ ছিল না, রসিকতার ছলেই সেকথা জানিয়েছেন তিনি।


সাবিত্রী বলছেন, 'এক্সট্রা বা নাচের চরিত্রে অভিনয় করে ১০-১৫ টাকা পেতাম। সিনেমা দেখার শখ ছিল, কিন্তু সিনেমা দেখার টাকা ছিল না। পরিচিতদের পাকা চুল তুলে দিতাম। বিনিময়ে পয়সা মিলত। পয়সা বাড়াতে কয়েকটা কাঁচা চুলও তুলে দিতাম।'


বসু পরিবার, অবাক পৃথিবী, নিশিপদ্ম, ধন্যি মেয়ে ছবির নায়িকার সঙ্গে বৈঠকী আড্ডায় হাজির ছিলেন বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, বালির বিধায়ক রানা চট্টোপাধ্যায় ও অভিনেত্রী দেবিকা মুখোপাধ্যায়ের মতো অতিথিরা। 


আরও পড়ুন: Top Entertainment News Today: 'কণ্ঠ' ছবির মালয়লম রিমেক, ইউটিউব থেকে মোছা হল সিধু মুসেওয়ালার শেষ গান, বিনোদনের সারাদিন


বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক  সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতিচারণায় বলেন, 'ওনার সঙ্গে অনেক দিনের পরিচয়। লাস্ট যে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগান খেলা হয়েছে তা নিয়ে খুব সুন্দর লিখেছিলেন। ইস্টবেঙ্গল জিতলে সাবিত্রীদেবী মোহনবাগান সমর্থক উত্তম কুমারকে ইলিশ রেঁধে খাওয়াতেন।'


চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, 'সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় একজন নক্ষত্র। একটা অহঙ্কারের নাম। আজ নারী স্বাধীনতা নিয়ে অনেক কথা বলি। তিনি সেই সময়ে দেখিয়েছেন নারী স্বাধীনতা কী!'


এদিনের অনুষ্ঠানে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ছায়াছবির বিভিন্ন গান পরিবেশন করেন সঙ্গীতশিল্পী সৈকত মিত্র ও শম্পা কুণ্ডু।