কলকাতা: বছর তিনেক আগের কথা। কলকাতায় সেই সময়টা তোলপাড় ফেলেছিল ভাগাড়কাণ্ড। কলকাতা ও আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় তখন চলছে বিভিন্ন খাবারের মান পরীক্ষা। খাবারে ভাগাড়ের মাংস মেশানোর গুরুতর অভিযোগ উঠছে একের পর এক রেস্তোরাঁয়। এবার সেই ঘটনাকেই সেলুলয়েডে মুড়তে চলেছেন পরিচালক রাজদীপ ঘোষ (Rajdeep Ghosh)।
এই গল্পের মুখ্যভূমিকায় দেখা যাবে ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরীকে (Sabyasachi Chowdhury)। গল্পে তাঁর নাম পরেশ (Paresh)। এটি তাঁর প্রথম ওয়েব সিরিজ। সব্যসাচী থেকে পরেশ হয়ে ওঠার সফরটা কেমন ছিল? এবিপি লাইভকে সব্যসাচী বলছেন, 'প্রথমেই বলব, এই গল্পটি ভিন্ন স্বাদের নয়। আমাদের আশেপাশে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁরা হয়ত জীবন কাটাচ্ছেন, হেঁটে চলে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু ভিতর ভিতর মরে গিয়েছে তাঁরা। পরেশ ঠিক এমনই একটা চরিত্র। পরেশ একটা ভীতু, বোকা, শিরদাঁড়াহীন মানুষ। সে ভয় পায়, পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা-দ্বন্ধে ভোগে। সামান্য সামর্থের মধ্যেই সংসারটা চালানোর চেষ্টা করে পরেশ। তার স্ত্রীর তাকে হেয় করে, কথা শোনায়। এমনকি তার স্ত্রীর অন্য একজনের সঙ্গে সম্পর্কও রয়েছে। সেটা জেনেও পরেশ কোনও পদক্ষেপ নিতে পারে না। ভিতর ভিতর ক্ষইতে ক্ষইতে পরেশ ঠিক করে, সে আত্মহত্যা করবে।'
পরেশের এই চরিত্রের সঙ্গে ভাগাড়কাণ্ডের যোগ কোথায়? সব্যসাচী বলছেন, 'গল্পে দেখানো হয়েছে, পরেশের একটি ছোট্ট মেয়ে ছিল। সে একদিন বিরিয়ানি খেতে চায়। পরেশ তাকে বিরিয়ানি এনে খাওয়ায়। সেই বিরিয়ানির মাংস ছিল ভাগাড়ের। বাচ্চা মেয়েটি সেটা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে ও মারা যায়। তারপর থেকেই যেন আরও গুটিয়ে যায় পরেশ। বার বার আত্মহত্যা করতে চেয়েও সে পারে না। এমন সময়ে হঠাৎ তার চোখে পড়ে খবরের কাগজের একটা প্রতিবেদন। ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একজন এক খুনিকে সুপারি দিয়েছে খুন করার জন্য। কিন্তু খুনটা করতে হবে সেই ব্যক্তিকেই। পরেশ ঠিক করে, কেউ তাকে খুন করলে নিজেকে আর মানসিক চাপ নিতে হবে না। সেখান থেকেই গল্পের মোড় ঘুরে যায়।'
আরও পড়ুন: Tollywood News: স্মার্টফোন নিয়ে জেরবার ভুবনবাবু, ২ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাবে পরাণ-খরাজের নতুন ছবি
এর আগে দীর্ঘদিন ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন সব্যসাচী। ওয়েব সিরিজ আর ধারাবাহিকে অভিনয়ের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? সব্যসাচী বলছেন, 'ধারাবাহিকে আমরা স্টোরিলাইন পাই। সেটা সময় অনুযায়ী বদলে যেতে থাকে। কিন্তু ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে একটা সম্পূর্ণ গল্প পাই। ফলে নিজেকে তৈরি করতে, চরিত্রটা নিয়ে ভাবতে অনেকটা সুবিধা হয়।'
এই সিরিজেই দেখা যাবে ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma)-কেও। একসঙ্গে ক্যামেরা শেয়ার করেছেন ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচী? অভিনেতা বলছেন, 'গল্প বোনার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়নি তাঁর। এই গল্পে একজন ইউটিউবারের চরিত্র রয়েছে। যে ভাগাড়কাণ্ডের জাল চক্রকে ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কোথাও গিয়ে মিলে যায় পরেশ ও এই ইউটিউবারের পথ। ঐন্দ্রিলা তাঁর প্রেমিকার ভূমিকায় অভিনয় করছে।'
গোটা সিরিজের শ্যুটিং হয়েছে মাত্র ৮-৯ দিনে। সব্যসাচী বলছেন, 'ব্যান্ডেল, বারাসাতের বিভিন্ন জায়গায় শ্যুটিং হয়েছে। বাইরে শ্যুটিং মানেই সবাই মিলে একসঙ্গে গিয়ে থাকা, খাওয়া। খুব ভালো অভিজ্ঞতা। একটা দৃশ্যের কথা মনে আছে, সেটা রেললাইনে শ্যুটিং। খুব ঝুঁকি নিয়ে দৃশ্যটা শ্যুটিং করা হয়েছে। একেবারে কাছাকাছি ট্রেন চলে এসেছিল। তবে দৃশ্যটা দেখার পরে মনে হল, খুব ভালো হয়েছে। আশা করি দর্শকদের ভালো লাগবে।'