নয়াদিল্লি: ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম বড় নাম সলমন খান (Salman Khan)। তাঁর নামেই সিনেমা ব্লকবাস্টার হিট হয়ে যায়, এমনই তাঁর ক্যারিস্মা। আজ বলিউডের 'ভাইজান' সলমন খানের ৫৬ তম জন্মদিন (Happy Birthday Salman Khan)।


যে কোনও ছবির সঙ্গে যদি কোনওভাবে সলমন খানের নাম জড়িয়ে থাকে তাহলে ধরেই নেওয়া হয় যে ছবি সুপারহিট। কারণ তাঁর বিশাল সংখ্যক অনুরাগী শুধু তাঁর নামেই সিনেমা হলে ভিড় জমান। সেটাই তাঁর ইউএসপি (USP)।


এখন সলমন খান মানেই অ্যাকশনে ভরপুর, নাচের গান, মজার সংলাপ, দুর্দান্ত ক্যামেরার কাজ, সবমিলিয়ে 'সল্লু সোয়্যাগ'-এ ভরপুর। 


যদিও কেরিয়ারের শুরু থেকেই সলমন খানের এই অবতার ছিল না। 'রেস ৩' ছবিতে গাড়ি উড়িয়ে দেওয়া বা 'রাধে' ছবিতে ভিলেনদের মারধর করার আগে পর্দায় তাঁকে পরিবারের সাদামাটা ছেলে 'প্রেম' হিসেবেই লোকে চিনত বেশি। কীভাবে পাশের বাড়ির ছেলে থেকে 'দাবাং' সলমন হয়ে উঠলেন তিনি, জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক।


৯০-এর দশকে অ্যাকশন স্টার হিসেবে মানুষ চিনতেন অক্ষয় কুমার, সুনীল শেট্টি, অজয় দেবগণকেই। বলা যায়, প্রত্যেক খানই প্রথমে 'প্রেমিক' হিসেবেই পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন। তাতেই মজেছিলেন দর্শকও।


১৯৮৮ সালে 'বিবি হো তো অ্যাইসি' ছবিতে সহ অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সলমন খান। ২৩ বছর বয়সে সেই ছবিতে নায়কের ভাইয়ের ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে। 


আরও পড়ুন: Salman Khan Birthday: সলমনের জন্মদিনে বিশেষ পোস্ট ক্যাটরিনা কাইফের


বলিউডে প্রথম মুখ্য চরিত্রে তাঁকে দেখা যায় ১৯৮৯ সালে সূরজ বরজাতিয়ার ফ্যামিলি ড্রামা 'ম্যায়নে পেয়ার কিয়া' ছবিতে। সেই বছরের সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করা ছবি ছিল এটি। ছবিটি সেই সময়ে ইংরেজি ও স্প্যানিশে ডাব করা হয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও ভালই ফল করে।


পরবর্তীকালে, ১৯৯১ সালে সলমন তিনটে ছবিতে কাজ করেন। 'পত্থর কে ফুল', 'সনম বেওয়াফা', 'কুরবান'। তিনটেই মোটামুটি ব্যবসা করে। একইসঙ্গে সঞ্জয় দত্ত ও মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে তিনি 'সাজন' ছবিতে কাজ করেন যেটি সুপারহিট ছিল। ১৯৯৪ সালে রাজকুমার সন্তোষির ছবির 'আন্দাজ অপনা অপনা'-এ তাঁকে অভিনয় করতে দেখা যায়। ছবিটি সেই সময়ে দর্শকদের খুশি করতে পারেনি। তবে পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে এই ছবিই সমালোচকদের প্রশংসা পেয়ে 'কাল্ট' তকমা পেয়েছে।


এরপর 'পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া'। সলমনের অন্যতম জনপ্রিয় ছবি। বিনা শার্টে 'ও ও জানে জানা' গান এখনও দর্শকদের মুখে মুখে ঘোরে। এই গানের পর থেকেই 'বেয়ার বডি' অবতার হিরো সলমনের অন্যতম ইউএসপি হয়ে ওঠে।


নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সলমনের পরিচয়ে অনেক বদল আসে। হিট ছবি 'হাম আপকে হ্যায় কৌন'-এ তাঁর অভিনয় তাঁকে বরজাতিয়া দলের অন্যতম সফল অভিনেতা হিসেবে পরিচয় দেয়। এই সময়ে সলমন খান মানেই ছিল শান্ত শিষ্ট প্রেমিক গোছের এক চরিত্র এবং সেটা তিনি বজায়ও রেখেছিলেন।


নব্বই দশকের শেষের দিকে বলিউডেও বিপুল পরিবর্তন আসে। নিজেকে 'নতুন বলিউড'-এ মানিয়ে নিতে খানিক সময়ও নেন অভিনেতা। 'তুমকো না ভুল পায়েঙ্গে', 'ইয়ে হ্যায় জলওয়া', 'কিও কি...', 'লাকি: নো টাইম ফর লভ', 'মেরিগোল্ড' ছবি বক্সঅফিসে মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে। বাকি খানেরা যদিও বলিউডের বদলের সঙ্গে নিজেদের বদলে লাভের মুখ দেখছিলেন।


আরও পড়ুন: Karan Johar Update: 'অডিশন' চলছে খুদে যশ জোহরের, এবার কি বলিউডে ডেবিউ?


বলিউডে খারাপ সময় চললেও তিনি শিরোনামে ছিলেন। পথ দুর্ঘটনা ও হরিণ হত্যা মামলা তাঁকে জনপ্রিয়তার তালিকায় রেখেছিল। এই সময়ে তাঁর ভাগ্য ফেরায় 'তেরে নাম'। ২০০৩ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ছবিতে তাঁকে রাধে মোহনের চরিত্রে দেখা যায়, যে কি না একজন অত্যাচারিত প্রেমিক। এরপর ২০০৪ সালের 'মুঝসে শাদি করোগি' ও ২০০৫ সালের 'নো এন্ট্রি' বক্স অফিসে সাফল্য লাভ করে, যদিও দুটি ছবিতেই একাধিক তারকা ছিলেন।


মনে করা হয়, ২০০৯ সাল তাঁর কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এই সময়ে মুক্তি পায় 'ওয়ান্টেড'। সলমন খান একজন আদ্যন্ত অ্যাকশন স্টার হিসেবে উঠে আসেন। এমনকী ভারতের সবচেয়ে বড় অ্যাকশন স্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। 'বীর' বা 'লন্ডন ড্রিমস'-এর মতো ছবিগুলি না চললেও ২০১০ সালে 'দাবাং' মুক্তির পর ফের বলিউডে নিজের জায়গা পাকা করে নেন ভাইজান। পুলিশ অফিসার চুলবুল পাণ্ডের চরিত্রে সলমন মন জয় করেন দর্শক ও অনুরাগীদের, ব্লকবাস্টার হিট আসে।


'দাবাং'-এর পর একটার পর একটা অ্যাকশন ছবি আসতে থাকে। 'এক থা টাইগার', 'সুলতান', 'রেস ৩' তাঁকে নিরাশ করেনি। মহিলাদের প্রিয় 'প্রেম' থেকে ধীরে ধীরে পুরুষদের ম্যাচো ম্যান হয়ে ওঠেন সলমন। 


বিভিন্ন ছবিতে তাঁর জনপ্রিয় সংলাপও তাঁকে সকলের কাছের করে তোলে। 'দিল মে আতা হুঁ সমঝ মে নেহি', 'একবার জো ম্যায়নে কমিটমেন্ট কর দি', 'মুঝ পর এক এহসান করনা কি মুঝ পর কোই এহসান না করনা' ইত্যাদি সংলাপ দর্শকদের মুখে মুখে ঘুরতে থাকে।


বিগত কয়েক বছরে তিনি 'বজরঙ্গি ভাইজান' ও 'টিউবলাইট'-এর মতো ছবি তৈরি করেছেন যা তাঁর অন্যান্য ছবির থেকে খানিক আলাদা। তবে ছবির সাফল্যের থেকেও বেশি নজর কেড়েছে ছবি মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বিপুল পরিমাণ অনুরাগীদের উচ্ছ্বাস। 


মুক্তির অপেক্ষায় 'টাইগার ৩', ঘোষণা হয়েছে 'বজরঙ্গি ভাইজান'-এর সিক্যুয়েলও। সলমন খানের জন্মদিনে অভিনেতাকে শুভেচ্ছা যেন গুণ্ডাদের মেরে, মিষ্টি প্রেমের কথা বলে, সুন্দর গান উপহার দিয়ে তিনি আরও অজস্র ব্লকবাস্টার হিট ছবি দর্শক ও বলিউডকে উপহার দিতে থাকেন।