কলকাতা: যত কাণ্ড গুপি বাঘার সেই যাদু জুতো ঘিরে। সেই জুতো পায়ে গলিয়ে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যেত পাহাড় থেকে সমুদ্র, মরুভূমি থেকে জঙ্গল। কিন্তু সে তো বইয়ের পাতায় অথবা রুপোলি পর্দায়। বাস্তবে কোনও ম্যাজিক ছাড়াই পর্দার ম্যাজিককে ফুটিয়ে তোলাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তাঁর কাছে। কেমন করে সত্যজিৎ রায় (Satyajit Roy) গুপি-বাঘাকে নিয়ে গিয়েছিলেন হুণ্ডী, ঝুণ্ডী, শুণ্ডী? বাঙালির মণিমাণিক্য.. মানিকের জন্মদিনের আগে 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'-এর এবিপি লাইভ তুলে ধরল 'শ্যুটিংয়ের পাঁচালি'।


কুফরির বরফে হারাল যাদু জুতো


যাদু জুতো পায়ে পরে হাততালি দিয়ে জায়গার নাম বললেই পৌঁছে যাওয়া যাবে সেখানে। কিন্তু সেই নাম যদি ভুল হয়ে যায়? তাহলে গুপী-বাঘা গিয়ে পড়ে বরফে কিম্বা মরুভূমিতে। শুণ্ডী বলতে গিয়ে ঝুণ্ডি বলায়, মানিকজোড় পৌঁছেছিল বরফের পাহাড়ে। সিমলার কুফরি বলে একটি জায়গায় শ্যুটিং হয়েছিল এই পাহাড় ও বরফের দৃশ্যটির। এখন অবশ্য এই জায়গাটা পর্যটকদের কাছে দিব্যি পরিচিত। কিন্তু সেইসময়ে কুফরি কার্যত একটা গ্রাম ছিল। তখন গ্রীষ্মকাল। চিত্রনাট্য অনুযায়ী যে বরফ দরকার, তা পেতে উঠতে হবে পাহাড়ের অনেকটা ওপরে। কিন্তু শ্যুটিংয়ের সামগ্রী নিয়ে সেটা অসম্ভব। বরফ পেতে হবে রাস্তার ধারেই। কিছুটা যেতেই শুরু হয়ে গেল তুষারপাত। আর তারমধ্যেই খুঁজে পাওয়া গেল প্ল্যাটফর্মের মতো একটা জায়গা। সেখানেই হল শ্যুটিং। তবে গ্রামের সাধারণ ধুতি-ফতুয়ায় দুই অভিনেতাকে বরফে শ্যুটিং অনুমতি দেননি পরিচালক। ধুতি ফতুয়ার নিচে পরানো হয়েছিল শীতপোশাক। সেভাবেই শ্যুটিং হয়েছিল পাহাড়ের দৃশ্যটি। তবে বরফের গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ার দৃশ্যটি শ্যুট করতে গিয়েই বাঁধল বিপত্তি। লাফাতে গিয়ে বরফে ডুবে হারিয়ে গেল গুপী বাঘার যাদু জুতো। অনেক বরফ সরিয়েও খোঁজ মিলল না যাদু জুতোর। বরফ না গলা পর্যন্ত সেই জুতো পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। কাজেই বাড়তি জুতো জোড়া দিয়ে করা হল বাকি শ্যুটিং। পরিচালক অবশ্য পরে ভেবেছিলেন, বরফ গললে অমন ভূতের চোখ আঁকা যাদু জুতো পেয়ে ঠিক কতটা অবাক হবেন গ্রামের মানুষেরা...


জয়সলমীরের মরুভূমিতে মরীচিকা


ভারতের একমাত্র মরুভূমি বলতে, পশ্চিম রাজস্থানের থর। হাল্লা রাজ্যের কিছুটা অংশ, শুণ্ডী আর গুপি বাঘার গরমের দেশ হুণ্ডী.. এই সবেরই শ্যুটিং হয়েছে জয়সলমীরের আশেপাশের অঞ্চলে। হাল্লা ও শুণ্ডীর শ্যুটিং করার জন্য বাছা হয়েছিল যথাক্রমে বুঁদি ও জয়সলমীরকে। স্থানীয় মানুষদের কথা শুনে সত্যজিৎ রায় সিদ্ধান্ত নেন, মোহনগড় বলে একটি জায়গা পেরিয়ে শ্যুটিং হবে গুপী-বাঘার গরমের রাজ্যে এসে পৌঁছনোর দৃশ্য। কিন্তু দিক নির্দেশ ভুল হওয়ায় এক অদ্ভুত রুক্ষ জায়গায় এসে পৌঁছয় গোটা শ্যুটিংয়ের টিম। সেখানে যেমন ঘর-বাড়ি নেই, তেমন নেই বিন্দুমাত্র বালির চিহ্নও। গোটাটা যেন নুড়ি আর খোলামকুচির রাজ্য। মোহনগড় পৌঁছতেই বোঝা গেল ভুলটা। অতঃপর? সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, আরও কিছুটা পশ্চিমে গিয়ে শেষ চেষ্টা একবার করে দেখা হবে। সেখানেও যদি বালি না পাওয়া যায়, তবে ফিরে যাওয়া হবে জয়সলমীরে। কয়েক মাইল গিয়ে একটা জায়গা পাওয়া গেল বটে, তবে সেখানকার বালি মরুভূমির মতো ঢেউ খেলানো নয়। পা দিলে বোঝা যায় ভিতরটা জোলো। তবে ক্যামেরার কাজে সেখানকার মরুভূমিই হয়ে উঠে থর, আঁচ করে নিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। তবে গাড়ি থেকে মেনে পশ্চিমে তাকিয়ে ফের অবাক হওয়ার পালা। মরুভূমির বুকে এত বড় হ্রদ! সারা পশ্চিম দিক জুড়ে স্পষ্ট বালির রেখা। কিছুক্ষণ পরে সবাই বোঝেন... হ্রদ নয়, এটা মরীচিকা। গুপী বাঘার দেড় মিনিটের দৃশ্য শ্যুট করে জয়সলমীরে ফিরে এসেছিলেন সবাই। পরে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছিল, কেমন মানুষ কেন, পশুপাখী পর্যন্ত রাজস্থানের ওই বিশেষ অঞ্চলে মরীচিকা দেখে বিভ্রান্ত হয়।


 


তথ্যসূত্র: 'একেই বলে শ্যুটিং'


লেখক: সত্যজিৎ রায়


 


আরও পড়ুন: No Cry Onion: এই পেঁয়াজ কাটলেও চোখে আসে না জল! রয়েছে আরও গুণ, জেনে নিন কী কী?