কলকাতা: পেঁয়াজ কাটবেন অথচ কাঁদবেন না। শুনে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না? এমনটাই সত্যি! এমন একধরনের পেঁয়াজ এটি যার ইংরেজি নাম- 'No Cry Onion'। অর্থাৎ এই পেঁয়াজটি কাটলেও চোখের জলে নাকের জলে হবেন না।
যদিও এই পেঁয়াজটির ট্রায়াল চলছে। গত বছরেই বাজারে আনার পরিকল্পনাও উঠেছিল। জানা গিয়েছে, BASF ভেজিটেবল সিডস এটি তৈরি করেছে। এই পেঁয়াজের বিশেষত্ব হল ঝাঁঝ অনেক কম। তবে অন্যান্য পেঁয়াজের তুলনায় বেশ মিষ্টি এটি। এই পেঁয়াজটির নাম হল- Sunions, SUN এবং (on)IONS এর মেলবন্ধন।
কীভাবে তৈরি হল এই পেঁয়াজ? কী এর রাসায়ানিক গঠন?
১৯৮০ এর শেষের দিকে বিজ্ঞানীরা পেঁয়াজের বিভিন্ন স্ট্রেইনের ক্রস-ব্রিডিং শুরু করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল একটাই-পেঁয়াজ কাটলেও যাতে চোখে জল না আসে। পেঁয়াজে থাকে ল্যাক্রিমেটরি ফ্যাক্টর (LF)। যার জন্যই ঝাঁঝ বৃদ্ধি হয়। সিন-প্রোপেনথিয়াল-এস-অক্সাইড থাকে এই ল্যাক্রিমেটরি ফ্যাক্টরের মধ্যে। রাসায়নিকভাবে এটি একটি উদ্বায়ী তরল পদার্থ। যা বায়ুকণায় এয়ারোসলের আকারে মিশে যায়। এটি চোখে অকিউলোমোটর এবং নাকের অলফ্যাক্টরি নার্ভকে উদ্দীপিত করে। যার জেরে পেঁয়াজ কাটার সময় চোখে জল আসে।
এছাড়াও ল্যাক্রিমেটরি ফ্যাক্টরের মধ্যে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড সালফক্সাইড ভেঙে সালফেনিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এই প্রোপেন সালফেনিক অ্যাসিড দ্রুত ল্যাক্রিমেটরি ফ্যাক্টর তৈরি করে যা সিন-প্রোপেনথিয়াল-এস-অক্সাইড তৈরি করে, যা সংবেদনশীল নিউরনগুলিকে (চোখে) সক্রিয় করে তোলে।
কোথায় পাওয়া যায়?
২০১৮ সাল থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই পেঁয়াজটি পাওয়া যায়। প্রথমে নেভাদা এবং ওয়াশিংটনে বিক্রি করা হয়েছিল। ২০২০ তে ইউরোপেও এই পেঁয়াজটি বাণিজ্যিকভাবে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০২২ এ খুচরো পণ্য বিক্রেতা Waitrose ব্রিটেনের বাজারে এই পেঁয়াজ বিক্রি করা শুরু করে। এটির দাম সাধারণ পেঁয়াজের তুলনায় প্রায় ৩গুণ বেশি রাখা হয়েছিল।
বেয়ার সেন্সরি ল্যাব এবং ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি সেন্সরি ইভালুয়েশন সেন্টার এই পেঁয়াজের খাদ্য গুণাগুণ পরীক্ষা করে বাজারে বিক্রি করার ছাড়পত্র দেয়। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং ইউরোপের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এই পেঁয়াজকে পছন্দ করে। স্বাদে কিছুটা বদল হলেও খেতে এই পেঁয়াজ খারাপ নয় একেবারেই। হয়তো সেই ঝাঁঝ নেই, তবে পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে কান্নাকাটি করতে যাঁরা চান না, তাঁদের জন্য এই পেঁয়াজ একেবারেই আদর্শ।
আরও পড়ুন, ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই বেড টি চলে এল, খারাপ না ভাল ?