কলকাতা: 'ছিল, নেই... মাত্র এই'। তাঁর কলমে বার বার ফুটে উঠেছে মৃত্যুর কথা। মৃত্যু তাঁর কাছে সহজ, সহজাত। কিন্তু 'মহামারীর শেষ' দেখা হল না শঙ্খ ঘোষের। করোনা আক্রান্ত হয়ে ৯০ বছর বয়সে প্রয়াত বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় কবি শঙ্খ ঘোষ। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের। কবির প্রয়াণের খবর পেয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ' মাথার ওপর ছাদ সরে গেল'।


৬০ বছরের পরিচয় ছিল তাঁদের। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলছেন, 'আমাদের ২ জনের বাড়ি অনেকটা দূরে ছিল। দেখা হত সভা-সমিতিতে। খুব কম কথা বলতেন শঙ্খদা। হয়ত কোনও সভায় উনি সভাপতি হয়েছেন আর আমি বক্তা। অনেকবার দেখেছি উনি সভাপতির বক্তব্য না রেখেই মঞ্চ ছাড়তেন। গল্প করার সময় মজা করে আমি অনেকবার বলেছি, শঙ্খদা, এমন বোবা সভাপতি কিন্তু আমি কোথাও দেখিনি। খুব নিচু স্বরে কথা বলতেন সবসময়। কখনও মানুষটাকে অহংকার ছুঁতে পারেনি। অথচ এত পড়াশোনা ছিল, জ্ঞান ছিল। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ওনার পড়াশোনা ছিল প্রচুর।'


খাদ্যরসিক ছিলেন না কখনোই। বরং খাবার বিষয়ে চিরকালের জন্য সংযমী ছিলেন শঙ্খ ঘোষ। ধুতি-পাঞ্জাবি ছাড়া আর কিছু পরতেন না কখনও। ব্য়বহার করতেন না মোবাইল ফোনও। অথচ গ্রাম থেকে আসা কবিদের কবিতাও শুনতেন চুপ করে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলছেন, 'দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ওনার। আর অদ্ভুত মানুষ ছিলেন। শুনলেন বঙ্গীয় পরিষদের কর্মীদের অর্থাভাব। নিজের পাওয়া পুরস্কারের ১১ লাখ টাকা বিলিয়ে দিয়েছিলেন কর্মীদের মধ্যে। বয়স বাড়লেও যেটা ওঁর মধ্যে একেবারে একরম ছিল সেটা হল স্মৃতিশক্তি। চট করে কিছু ভুলতেন না।'


শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্য়ায়ের আরও যোগ করলেন, 'মাথার ওপর ছাদ সরে গেল। বললেন, আজ মনটা খুব খারাপ। কিছুদিন আগেই ফোন করেছিলাম। মেয়ে ধরেছিল। শঙ্খদা ফোন ধরতেন না। শঙ্খদা কেমন আছেন জানতে চেয়েছিলাম। একটা আশঙ্কা, দুঃশ্চিন্তা ছিল। এত বয়সে করোনা। ফুসফুসের অসুখ। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল।'