কলকাতা: 'যেটুকু চিকিৎসা চলছে তাই যথেষ্ট। আমার পুত্র ও কন্যা যেন কিছুতেই আমায় হাসপাতালে ভর্তি না করে আমার কষ্টবৃদ্ধি না করে। কোনওরকম আসুরিক চিকিৎসার পক্ষপাতী আমি নই।' তিনি হয়ত মৃত্যু বুঝতে পেরেছিলেন। তাহলে কেনই বা লিখে যাবেন এই কথা! কেনই বা লিখে যাবেন 'ফুলভারের প্রয়োজন নেই। সামান্যভাবে সাধারণের অগোচরে যেন আমার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।' শাঁওলি মিত্রের ইচ্ছাপত্রের শেষ ইচ্ছা মেনেই সম্পন্ন হল তাঁর শেষকৃত্য। সিরিটি শ্মশানে। বাবা শম্ভু মিত্রেরও (Shambhoo Mitra) ইচ্ছা ছিল এভাবেই চলে যাওয়া। তাই হয়েছিল! সিরিটি শ্মশানে সবার অলক্ষ্যে পঞ্চভূতে বিলীন হয়েছিলেন তিনি। শাঁওলি মিত্র লিখেছিলেন, আমার একান্ত ইচ্ছা আমার পিতাকে অনুসরত করেই, মৃত্যুর পর যত দ্রুত সম্ভব আমার সৎকার সম্পন্ন করা হয়।' আজ বিকেলে চলে গিয়েছেন তিনি। অক্ষরে অক্ষরে শেষ ইচ্ছা পালনের পর প্রকাশ কর হল তাঁর প্রয়াণের খবর।


ফুরলো জীবনের সব ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’। প্রয়াত বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব শাঁওলি মিত্র (Shaoli Mitra)। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্রের কন্যা শাঁওলি মিত্র। আজ বিকেলে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।


তাঁর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী, অনাড়ম্বর ভাবে আজ বিকেলেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে সিরিটি শ্মশানে। তিনি অভিনয় করেছেন, ঋত্বিক ঘটকের ছবি ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ ছবিতে। এছাড়াও তাঁর অভিনয় প্রতিভবার স্বাক্ষর রেখেছেন অসংখ্য নাটকে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, বিতত বীতংশ, নাথবতী অনাথবত্‍, পুতুলখেলা, একটি রাজনৈতিক হত্যা, হযবরল, পাখি, গ্যালিলিওর জীবন, ডাকঘর, যদি আর এক বার। ২০০৩ সালে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান শাঁওলি মিত্র, ২০০৯ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন তিনি। ২০১২ সালে অভিনয়ে জীবনব্যাপী অবদানের জন্য পান ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান।


আজ মৃত্যুর পর প্রকাশ পেয়েছে আইনি কাগজে নথিভুক্ত হওয়া তাঁর শেষ ইচ্ছা। কী লেখা সেখানে? বয়ানে লেখা রয়েছে, 'আমি শাঁঁওলি মিত্র। ২০২০ সালে আমার ৭২ বছর বয়স পূর্ণ হয়েছে। পরিণত বয়সে, পরিণত মনে ও সম্পূর্ণ সজ্ঞানে আমি এই ইচ্ছাপত্র রচনা করছি।'


আরও পড়ুন: লতা মঙ্গেশকরের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, জানালেন মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী


এরপর ইচ্ছাপত্রের একাংশে তিনি লিখেছেন, 'যেটুকু চিকিৎসা চলছে তাই যথেষ্ট। আমার পুত্র ও কন্যা যেন কিছুতেই আমায় হাসপাতালে ভর্তি না করে আমার কষ্টবৃদ্ধি না করে। কোনওরকম আসুরিক চিকিৎসার পক্ষপাতী আমি নই।' এরপর আরও একটি অংশে শাঁওলি মিত্র লিখছেন, 'আমার একান্ত ইচ্ছা আমার পিতাকে অনুসরত করেই, মৃত্যুর পর যত দ্রুত সম্ভব আমার সৎকার সম্পন্ন করা হয়। এই শরীরটিকে প্রদর্শন করায় আমার নিতান্ত সংকোচ। ফুলভারের কোনও প্রয়োজন নেই। সামান্যভাবে সাধারণের অগোচরে যেন আমার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।'


শাঁওলি মিত্র নিজের ইচ্ছাপত্রের শেষাংশে লিখেছেন, 'প্রচুর মিথ্যা আমায় উদ্দেশ করে বর্ষিত হওয়া সত্ত্বেও আমি আমার দর্শকের কাছে, আমার পাঠকের কাছে, বহু সাধারণ মানুষের কাছে অসীম শ্রদ্ধা ভালোবাসা পেয়েছি। যা পেয়েছি, যত পরিমানে পেয়েছি তার যোগ্য আমি কিনা তা জানি না। তবে তা পেয়েছি বলেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিবিধ কর্ম করবার প্রেরণা পেয়েছি। আমার অন্তরে সেই ভালোবাসা আমার একান্ত আপন।'


শাঁওলি মিত্রের ইচ্ছা অনুসারে, আজ তাঁর মৃত্যুর পর কার্যত সবার অলক্ষ্যে সিরিটি শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য করা হয়। প্রসঙ্গত, শম্ভু