পুরুষোত্তম পণ্ডিত, কলকাতা: শর্মাজির হাতের রান্নার সত্যি কোনও জবাব নেই। বাড়ির রান্নায় যে ভালবাসা, যে স্বাদ, আর যে উষ্ণতা মিশে থাকে তাতেই নিজের পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, আর হ্যাঁ... দর্শকদেরও মন জিতে নিয়েছেন শর্মাজি, মানে ব্রিজগোপাল শর্মা। আমাজন প্রাইম ভিডিওয় (Amazon Prime Video) মুক্তি পেয়েছে প্রাইম অরিজিনাল ফিল্ম ‘শর্মাজি নমকিন’ (Sharmaji Namkeen)। ঋষি কপূরের শেষ ছবি এটি।


 


'শর্মাজি নমকিন'-এর প্রেক্ষাপট


 


'শর্মাজি নমকিন' শুধু যে কাহিনি বা প্রেক্ষাপটে স্বতন্ত্র একটি ছবি তাই নয় ছবিটির নির্মাণে এমন এক মৌলিকতা আছে , যা ছবিটিকে অন্য সব ছবির ভিড় থেকে আলাদা করতে পারে। আর সেই ‘আলাদা ছবি’ হয়ে ওঠার কাহিনি শুরুতেই সংক্ষেপে শুনিয়ে দেন রনবীর কপূর। ঋষি কপূর ক্যানসারে ভুগছিলেন। ‘শর্মাজি নমকিন’- এর শ্যুটিং অসমাপ্ত রেখেই তিনি প্রয়াত হন। প্রাথমিকভাবে সেই পরিস্থিতিতে মনে হয়েছিল ছবিটি আর শেষ করা যাবে না। কারন ভিএফএক্স বা প্রস্থেটিক মেকআপে ঋষি কপূরের লুক নিয়েও ছবিটির শ্যুটিং শুরু করা সম্ভব হয়ে উঠছিল না। তখনই এক অভিনব পথে হাঁটলেন ছবির নির্মাতারা। ঋষি কপূরের বাকি রয়ে যাওয়া দৃশ্যগুলিতে অভিনয় করলেন পরেশ রাওয়াল। এক ছবিতে, একই চরিত্রে দেখা গেল দু’জন অভিনেতাকে। এখানেই ‘শর্মাজি নমকিন’-এর সাফল্য।


সিনেমা জীবনের গল্প থেকেই রসদ খোঁজে। এই ছবি তার ব্যতিক্রম নয়। ষাট বছর ছোঁয়ার দু’বছর আগেই ‘ভলেন্টিয়ারি রিটায়ারমেন্ট’-এর চেক ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ব্রিজগোপালের হাতে। কিন্তু তিনি তো চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকার মানুষ নন। কাজ ছাড়া তিনি আর কিছুই বোঝেন না। তাই বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে তার দমবন্ধ লাগে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারতে গিয়ে মনে মনে ঠিক করেন নিজের একটা ‘চাটভাণ্ডার’ খুলবেন। কিন্তু বড় ছেলের অমতে সেই ইচ্ছে পূরণ হয়না। পারিবারিক অনুষ্ঠানে ঘনিষ্ঠরা নতুন কিছু করার আরও অনেক পরামর্শ দেন। কিন্তু সে সব পরামর্শে রাজি হতে পারেননা শর্মাজি। বাড়িতে রান্না করেই অবসরের ‘নুনহীন’ জীবনটায় একটু নতুন স্বাদ দিতে চান।


আরও পড়ুন: সন্তান হওয়ার পরের দিনই সোশ্যাল মিডিয়ায় মজার পোস্ট ভারতীর


এরই মাঝে একদিন বন্ধুর অনুরোধ রাখতে মহিলাদের কিটি পার্টিতে রান্নার দায়িত্ব নিয়ে নেন তিনি। তাঁর হাতের চানা , টিকিয়া আর চাটের জাদুতেই তার নিস্তরঙ্গ জীবন নতুন মোড় নেয়। নতুন বন্ধুদের নিয়ে তাঁর একটি নতুন বৃত্ত তৈরী হয়। আর সেই বৃত্তেই জীবনের আনন্দ খোঁজেন শর্মাজি। নিত্য নতুন পদ রান্না করতে থাকেন, আর সবার মুখে মুখে সেই স্বাদের প্রশংসাই তার জীবনের ইন্ধন হয়ে ওঠে। এইভাবেই এগোয় ছবিটির কাহিনি। দিল্লির মধ্যবিত্ত এক পরিবার, সেই পরিবারের তিন সদস্য, তাদের আলাদা আলাদা স্বপ্নের জগতে ঘুরপাক খায় চিত্রনাট্য। শর্মাজির মনের মতই সরল, স্বাভাবিক এই ছবির বুনোট। তাঁর আবেগ শুধু তাঁর একার নয়, দর্শকদেরও বটে। তাঁর মোটা কাঁচের চশমার ভিতর দিয়ে দেখা দুনিয়া সত্যিই অকৃত্রিম। সেখানে ভালবাসার অঙ্ক সহজ পাটিগণিতের মতই সরল। দুর্বোধ্য, জটিল নয়। ছিমছাম, নমনীয় এক চিত্রনাট্যে ‘শর্মাজি নমকিন’ সত্যিই অন্য স্বাদের গল্প।


 


'শর্মাজি নমকিন'-এর চরিত্রায়ন


 


ব্রিজগোপাল শর্মার চরিত্রে এই ছবিতে ঋষি কপূর আর পরেশ রাওয়াল ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আরও বেশকিছু চরিত্র আছে। যেমন, বীণা মনচান্দার ভূমিকায় জুহি চাওলা। শর্মাজির বড়ছেলে রিঙ্কুর চরিত্রে সুহেল নায়ার। রিঙ্কুর প্রেমিকার ভূমিকায় ইশা তলওয়ার।  শর্মাজির বন্ধ চাড্ডার চরিত্রে সতীশ কৌশিক। শর্মাজির আত্মীয়র চরিত্রে গুফি পেন্টাল। দু’জন আলাদা অভিনেতাকে একই চরিত্রের ছাঁচে ফেলে, ছবিজুড়ে একই লয় বজায় রাখা কঠিন কাজ। তবে এই কাজটি সাফল্যের সঙ্গে করেছেন পরিচালক হিতেশ ভাটিয়া। শর্মাজির চরিত্রে ঋষি কপূর তাঁর অসংখ্য অনুরাগীদের মন ছুঁয়ে যান। উল্টোদিকে সেই একই চরিত্রে পরেশ রাওয়ালের অভিনয়ও অনবদ্য। শর্মাজির বড়ছেলের রিঙ্কুর চরিত্রে সুহেলের অভিনয়ও নজর কাড়ে। জুহি চাওলার অভিনয়ও স্বতস্ফূর্ত। সব মিলিয়ে নানা মশলার পরিমিত ব্যবহারে শর্মাজির রান্নার মতই উপভোগ্য, সুস্বাদু এই ছবি। সিনেমা শেষ হলেও শর্মাজির রান্নার স্বাদ যেন জিভে লেগে থাকে।