কলকাতা: লাল্টুকে মনে আছে আপনাদের? ঠোঁটের ওপর ঝুপসি গোঁফ আর তাতে ঝুলে থাকা অমায়িক হাসি। তার জীবনযাত্রাটাও তাঁর হাসির মতোই সহজ-সরল। লাল্টু বিশেষ ঘোরপ্যাঁচ করে ভাবতে পারে না কিছু, চায় ও না। সংসার আর চাকরি বা ব্যবসা নিয়েই দিব্যি সংসার কেটে যায় তার। কিন্তু বিক্রম? চরিত্রগতভাবেই হোক বা লুক.. লাল্টুর থেকে সে এক্কেবারে আলাদা। আর এই দুই আলাদা মানুষকে নিজের মধ্যে ধারণ করা তো সহজ কথা নয়। একাধিক ছবিতে লাল্টুর ভূমিকায় অভিনয় করে চরিত্রটা বেশ স্বভাবযাতই হয়ে গিয়েছিল তাঁর। তবে বিক্রম? 'বহুরূপী'-র (Bohurupi) জন্য বিক্রম হয়ে ওঠা ততটা সহজ ছিল না শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের (Shiboproshad Mukherjee)-র কাছে। সেই গল্পই এবিপি লাইভকে (ABP Live) শোনালেন বিক্রম ওরফে শিবপ্রসাদ। 


'বহুরূপী'-র পরিচালক অভিনেতা এই ছবিতে তাঁর চরিত্র নিয়ে বলছেন, 'লাল্টু আর বিক্রমের মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় যেমন মিল রয়েছে, অমিলও রয়েছে বিস্তর। তবে যেটা সবচেয়ে বড় মিল, সেটা হল এই দুটো চরিত্রই সাধারণ মানুষের। সমাজের মধ্যেই আপনি খুঁজে পাবেন লাল্টু বা বিক্রমকে। লাল্টুর চরিত্রের প্রথম প্রস্তুতি ছিল প্রচুর খাওয়া। যেমন ধরুন সেই সময়ে প্রচুর ভাত খেতাম। বেশিরভাগই ঘি দিয়ে। ভুঁড়িটা বাড়াতে হত আর কি। সেই সময়ে আমি গোঁফ রেখেছিলাম। মেক আপে গোঁফ করলে মনে হয়েছিল সেটা বিশ্বাসযোগ্য লাগবে না। আরেকটা জিনিস আমায় মাথায় রাখতে হত, সেটা হল লাল্টুর ব্লাডপ্রেশার খুব হাই। এখনও মনে আছে, 'রামধনু'-র শ্যুটিং করছি তখন, আমার ক্যামেরাম্যান ছিল শীর্ষ। একটা শট ছিল আমি প্যান্টটা পরে লাফিয়ে উঠে জুতোটা খুঁজব। শটটা দেওয়ার পরে বুঝলাম, এত মোটা হয়ে গিয়েছি যে ওইটুকু শট দিতেই হাঁফিয়ে যাচ্ছি। লাল্টুর চরিত্রে অভিনয় করার সময় শারীরিক পরিবর্তনগুলোও ভয়ঙ্করভাবে চোখে পড়ত। আমার ট্রাইগ্লিসারিন, ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গিয়েছিল। ওজন তো বেড়েছিলই। অনেক সময়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করলেও নিঃশ্বাসের কষ্ট হল। লাল্টুর চরিত্রের জন্য এই শারীরিক পরিবর্তনও সহজ ছিল না।'


আর বিক্রম? শিবপ্রসাদ বলছেন, 'বিক্রমের ক্ষেত্রে সমীকরণটা এক্কেবারে পাল্টে গেল। এই চরিত্রটা করার জন্য আমায় একটা কঠিন ডায়েটের মধ্যে আসতে হল। লাল্টুর চরিত্রে অভিনয় করার সময় ওজন ছিল প্রায় ৭৮ কেজি। বিক্রমের চরিত্রের জন্য সেই ওজনটাকে কমিয়ে করতে হল ৬৫ কেজি। বারো কেজি ওজন কমানো সহজ নয়। সকালে ওটসের রুটি দিয়ে সবজি সিদ্ধ খেতাম। কোনও তেল ছাড়া। দুপুরেও পাতে কোনও কার্ব থাকত না। ডালসিদ্ধ খেতাম। বিকেলে কোনও খাবার খেতে দেওয়া হত না আমায়। খুব খিদে পেলে ড্রাইফুড-ই ভরসা। রাত ৮টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নিতে হত। সেখানেও কোনও কার্ব নেই। সালার্ড আর সবজি সিদ্ধ খেতাম। কালে কাঠবাদাম আর চা। আমি মুড়ি ভীষণ ভালবাসি। আর এই ডায়েটের জন্য আমার বিস্কিট, মুড়ি, ভাত সব বন্ধ হয়ে গেল। আমার ডাবল চিন ছিল, সেটা বিক্রমের চরিত্রের জন্য ঢাকতে হবে। আমি বলেছিলাম কোনও প্রস্থেটিকের সাহায্য নেব না, যা করব বাস্তবে। সেটাই চেষ্টা করেছি। সত্যিই আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। তবে হ্যাঁ, এখন আমার অনেক বেশি ঝরঝরে লাগছে। ওজন করে গিয়েছে। অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও আর নেই। তবে লাল্টুকে ভীষণ মিস করি আমি। আশা করব বিক্রমকে দর্শকদের ভাল লাগবে। 


আরও পড়ুন: Nachiketa Chakraborty: মহানায়ক পুরস্কার পাওয়ার জন্য আমায় অভিনেতাই হতে হবে এটা কোথায় লেখা আছে? প্রশ্ন নচিকেতার


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।