কলকাতা: ঢাকে কাঠি পড়তে আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা। শহর কলকাতা সাজছে পুজোর রঙে, মণ্ডপে মণ্ডপে তুঙ্গে প্রস্তুতি (Durga Puja 2023)। তবে খানিক মন খারাপ গায়িকা অদিতি মুন্সির (Aditi Munshi)। এবারের দুর্গাপুজোয় তাঁর থাকা হবে না কলকাতায়। বিদেশে অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছেন তিনি। তবে পুজো মানেই হইহুল্লোড়, খাওয়াদাওয়া, উচ্ছ্বাস আনন্দ, একরাশ ভাল লাগা আর একগুচ্ছ স্মৃতি ভিড় করে আসা মনের চিলেকোঠায়। সেই সবকিছুই তিনি ভাগ করে নিলেন এবিপি লাইভের (ABP Live) সঙ্গে।
অদিতির এবারের পুজো প্ল্যানিং
২০২৩ সালের পুজোর 'প্ল্যানিং খানিক উল্টে গেছে', জিজ্ঞেস করতেই খানিক থেমে উত্তর শিল্পীর। এবার তাহলে কোথায় থাকবেন তিনি? অদিতি মুন্সি বলেন, 'এত বছর ধরে আমার পুজো কলকাতাতেই কেটেছে। এই প্রথমবার কলকাতার বাইরে গিয়ে একেবারে বিদেশের মাটিতে পুজো দেখার প্ল্যানিং। সেখানে গানবাজনা, সেখানকার পুজো, সেখানকার মানুষজন, এই সবমিলিয়ে একটা অন্যরকম পুজো কাটবে এই বছর। তবে কলকাতার পুজো প্রচণ্ড মিস করব।' শিল্পী অকপট, 'বিদেশে এই প্রথম পুজো না, আমি কলকাতার বাইরেই পুজোয় কোথাও যাই না। এতবছরে কখনও যাইনি। গেলেও ওই সকালের ফ্লাইটে গেলাম অনুষ্ঠান করলাম, আবার পরেরদিন সকালের ফ্লাইটে ফেরত চলে এলাম, এরকম হয়েছে। কলকাতার পুজোর একটা আলাদা ফ্লেভার আছে, সেটা এতবছরে মিস করিনি কখনও। কিন্তু এই বছর আর আটকাতে পারলাম না। এবার না হয় দেখে আসি বিদেশের পুজো কেমন।'
ছোটবেলার পুজো কেমন কাটত?
ছোটবেলার পুজোর কথা শুরু হতেই অদিতির কণ্ঠে উচ্ছ্বাস স্পষ্ট। 'ছোটবেলার যে একটা চিন্তাহীন আনন্দ, সেটার তো বিবরণ দেওয়া যায় না। নতুন জামা, নতুন জুতো, একটা আলাদা উত্তেজনা, এই ঠাকুর দেখব, ওই ঠাকুর দেখব, বাড়ির লোকজনের কাছে বায়না করা, পুজোয় ওই কটা দিন বাড়িতে খাবার না খাওয়া, সেসবের একটা আলাদা আনন্দ ছিল। অবশ্যই ছিল পুজোর গানের জন্য অপেক্ষা।'
ছোটবেলায় পুজোয় মজার ঘটনাও নেহাত কম ঘটেনি। খানিকটা বড় হওয়ার পর একটি ঘটনার কথা ভাগ করে অদিতি বলেন, 'আমি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কখনওই বিশেষ বেরোতাম না। বাড়ির লোকের সঙ্গেই ঠাকুর দেখে ফিরছি। পঞ্চমী সারারাত ধরে ঠাকুর দেখে ফিরছি যখন ষষ্ঠীর ভোর। সকলেই ক্লান্ত। কিন্তু আমাদের ভাইবোনেদের তখনও এনার্জি রয়েছে। সকলে আমরা বাঁশি কিনেছি, পুজোর সময় যেগুলো পাওয়া যায়। একেকজনের মুখে দুটো করে বাঁশি। এবার যখন ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ ফিরছি, মনের আনন্দে সকলে বাঁশি বাজাচ্ছি। হঠাৎ একটা বাড়ি থেকে একজন চিৎকার করে উঠলেন, 'কে কে এই সময় বাঁশি বাজাচ্ছে'! সঙ্গে সঙ্গে বাবা মায়ের থেকেও খেলাম বকা। কিন্তু সত্যিই এখন এই সমস্ত ছোট ছোট মুহূর্তগুলোকে ভীষণ মিস করি। এখন যে ওই পাড়া, দুষ্টুমি করলে কেউ এসে বকে দিলেন, সেরকম ব্যাপার এখন তো আর পাওয়া যায় না।'
আর পুজোয় প্রেম?
অনেকেই বলেন পুজোর আমেজটাই নাকি প্রেম-প্রেম। পুজোয় অদিতি মুন্সির জীবনে কোনও প্রেম এসেছে? হাসতে হাসতে গায়িকার জবাব, 'আমার এই সেগমেন্টটা খুব খারাপ। প্লিজ! আমি খুবই টিপিক্যাল ঘরকুনো মেয়ে। ঘরের বাইরে বেরোতে আমি কখনওই ভালবাসতাম না। পুজোর সময় বের হলেও মা-বাবা-ভাই-বোনদের সঙ্গেই বেরোতাম। ঘরে বসে পুজো পরিক্রমা দেখছি বা অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছি, টিমের লোকজনের সঙ্গে হইহই খাওয়া দাওয়া করে বাড়ি চলে আসছি। এসবের মাঝে প্রেম কখনও খুঁজে পাইনি। এটা লোকে শুনলে হাসবে!'
পুজোর গান বলতে কী মনে আসে?
গানবাজনা নিয়েই যাঁর সময় কাটে, গানবাজনাই যাঁর নেশা ও পেশা, তাঁর কাছে পুজোর গানের আলাদা মাহাত্ম্য তো থাকবেই। অদিতি বলছেন, 'পুজোর গান মানেই তো আলাদা অপেক্ষা। কিন্তু এই সময়ে দাঁড়িয়ে, আমি এখনকার দিনের মেয়ে হয়েও মনে করি, সেই স্থানে অনেকটা ঘাটতি হয়েছে। তবে আমরা অনেকেই চেষ্টা করি। সেই পুজোর গানের মেজাজটা যদি ফিরিয়ে আনা যায়। তবে এখনও আমরা যাঁরা গানবাজনা করি, প্রত্যেকেরই পুজো নিয়ে আলাদা প্ল্যানিং থাকে। যে ধারা আমরা গুরুজনেদের থেকে পেয়েছি, বা যাঁদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছি তাঁদের থেকে শিখেছি, সেই ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করি। হয়তো সংজ্ঞা বদলে গেছে কিন্তু আজও পুজোর গান অতটাই প্রাসঙ্গিক। এখনও আলাদা করে উল্লেখ করি আমরা যে এটা আমাদের পুজোর গান।'
অদিতি মুন্সির প্রিয় পুজোর গান কী? 'ওমা, সে তো প্রচুর। লিস্ট শেষ করতে পারব না। আমাকে পছন্দের গান বা শিল্পী, জিজ্ঞেস করলেই খুব সমস্যায় পড়ি। কনফিউজড হয়ে যাই। এত শিল্পী এত গান, একটা উল্লেখ করব কী করে! আমার শুধু সিনিয়রদের গান ভাল লাগে তা নয়, এখনের গানও খুব ভাল লাগে।'
আপাতত 'বারো গানে বর্ষযাপন' নিয়ে ব্যস্ত শিল্পী অদিতি মুন্সি। এক বছরের একটা পরিকল্পনা। প্রত্যেক মাসে একটা করে নতুন ধরনের গান নিয়ে আসার চেষ্টা করেন তিনি, সাড়াও মিলেছে ভালই।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন