মুম্বই:সাতচল্লিশ বছরে পা দিলেন সোনু সুদ। কিন্তু এই বছরের জন্মদিনটা তাঁর কাছে অনেকটাই আলাদা। কারণ চারপাশের পরিস্থিতিটাই যে আলাদা। গত কয়েক মাস মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ঝাঁপ বন্ধ। স্টুডিয়ো পাড়ায় লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন শোনাই যাচ্ছে না। শুকনো মুখে কোনও সহ-অভিনেতা সবজি বিক্রি করছেন, তো কোনও সিরিয়াল অভিনেত্রী রাখি বানাচ্ছেন। আবার কোনও অসুস্থ অভিনেতার বাড়ির লোক চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে দোরে দোরে ঘুরছেন। কিন্তু মারাত্মক ব্যস্ত সোনু। না শ্যুটিং নয়। জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন বলিউড ছবির এই অতি পরিচিত খলনায়ক। তিনি লকডাউনে অন্য শহরে বা পথে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করেছেন। বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় কারও সমস্যার ছবি বা ভিডিয়ো পোস্ট দেখে যেচে এগিয়ে গিয়েছেন সাহায্য করতে। চাকরি চলে যাওয়া কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার তরুণীকে সবজি বেচতে দেখে চাকরির খোঁজ দিয়েছেন। কৃষক দুই মেয়েকে দিয়ে হাল চাষ করাচ্ছেন দেখে ট্রাক্টর কিনে পাঠিয়েছেন। করোনা ও লকডাউনের আবহে দুর্গত মানুষদের পাশে এসে সোনু সুদ যেভাবে দাঁড়িয়েছেন তা আলাদা করে চোখে পড়ছে সকলের। আর এরই মধ্যে ৪৭ বছরে পা দিলেন তিনি। বার্থডে-বয়কে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্যানদের শুভেচ্ছার ঢল নেমেছে। তাঁর সেবামূলক কাজের জন্য আলাদা করে জন্মদিনে প্রশংসা করেছেন মানুষ। বলিউডের অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে যেমন শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তেমনই উইশ করেছেন পরিযায়ী শ্রমিক থেকে প্রবাসী ভারতীয় মানুষ।


দশক দু'য়েক আগেও অবশ্য ছবিটা এমন ছিল না। মুম্বইয়ে আসার প্রথম বছরে জন্মদিনের রাত একদম একাই কাটান সোনু। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, 'আমি মুম্বইয়ে প্রথম আসি ১৯৯৭ বা ৯৮ সালের ২৫ বা ২৬শে জুলাই। সেই বছরের ৩০ জুলাই আমি মুম্বইয়ের একজনকেও চিনতাম না। জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর কেউ ছিল না। লোখন্ডওয়ালায় একটা ব্রিজে একা বসে কাটিয়েছিলাম সারা রাত।'

সোনু স্মৃতিতে ডুব দিয়ে আরও বলেন, 'মনে আছে, সেদিন রাত ১২টার সময়ে মা, বাবা আর বোন আমায় ফোন করে উইশ করেছিল। ওরা জানতে চেয়েছিল যে এখানে আমার কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে কিনা। আমি কী করছি জন্মদিনে ইত্যাদি। কিন্তু আমি ওদের জানাই মুম্বইয়ে আমার কোনও বন্ধু নেই। বলতে গিয়ে চোখে জল চলে এসেছিল সেদিন। মুম্বই বিরাট-বিপুল এক শহর। কতো মানুষ। কিন্তু জন্মদিনে আমি কি ভীষণ একা। আমায় শুভেচ্ছা জানানোর মতো সেদিন কেউ ছিল না।'

সেদিনই একা একা বসে সোনু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, এতটাই কঠোর পরিশ্রম করবেন যাতে গোটা বিশ্ব একদিন তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। সোনু বলেন, '২২ বছর পর অবশেষে সেই দিনটা বোধহয় এল। আমার মনে হচ্ছে যেন গোটা দুনিয়ার মানুষই এখন আমার সঙ্গে আমার জন্মদিন পালন করছে। তাই এই যাত্রাপথটা আমার কাছে খুবই স্পেশ্যাল। তবে আমি সারা জীবন ওই জন্মদিনটা মনে রাখব, যেদিন আমায় এই শহরে শুভেচ্ছা জানানোর কেউ ছিল না।'