কলকাতা: 'অলীক সুখ'-এর হাত ধরে শুরু হয়েছিল সম্পর্কটার। তারপর একে একে 'বেলাশেষে', 'প্রাক্তন', 'পোস্ত'... কখন যে রূপোলি পর্দা পেরিয়ে সম্পর্কটা পরিবারের মত হয়ে গিয়েছিল, বুঝতেই পারেননি পরিচালক। ক্রিকেটপ্রেম থেকে শান্তিনিকেতনের স্মৃতি, শ্যুটিং-এর অভিজ্ঞতা, এবিপি আনন্দে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে অকপট শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।


সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে প্রথম যে শব্দটি শিবপ্রসাদ ব্যবহার করলেন, সেটি হল 'কর্মযোগী'। মোবাইল ফোনে বললেন, ওনার সঙ্গে কাটানো প্রচুর স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছি। কাজের সূত্রে একাধিকবার শান্তিনিকেতনে গিয়ে থেকেছি। আমরা শ্যুটিং শেষে একটা পার্টি করতাম প্রত্যেকবার। সেখানে সৌমিত্রকাকু আবৃত্তি করতেন প্রতিবার। অবাক হয়ে শুনতাম। আর প্রাক্তন-এ ওঁনায় গলায় হঠাৎ দেখা আবৃত্তি তো আলাদা মাত্রা যোগ করেছিল ছবিটায়। আমার বেলাশুরু-র কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। কেবলমাত্র সৌমিত্রকাকুকে দেখাব বলেই একটা স্পেশাল স্ক্রিনিং-এর আয়োজন করেছিলাম। অতিমারী পরিস্থিতির জন্য সেটা বাতিল করতে হয়। ভেবেছিলাম পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবার আয়োজন করব সব নতুন করে। ছবিটা ওঁকে শেষবারের জন্য দেখাতে পারলাম না। এই আফশোসটা রয়ে যাবে।'

কাজ করতে ভালোবাসতেন সৌমিত্র। কাজের মধ্যে দিয়েই বেঁচে থাকতে চাইতেন। আর ভালোবাসেন ক্রিকেট-আড্ডা। শ্যুটিং থেকে শুরু করে জীবনের যাবতীয় উদাহরণ, তাঁর সমস্ত কথাতেই থাকত ক্রিকেটের প্রসঙ্গ। শিবপ্রসাদ বলছেন, 'পোস্তর শ্যুটিং চলাকালীন, মিমি বেশ কয়েকটা শটে দারুণ অভিনয় করছিল। সৌমিত্রকাকু সেখানে ছিলেন। আমায় ডেকে বললেন, আরে এতো কে এল রাহুল। তুমি তো বলোনি, তোমার টিমে একজন কে এল রাহুল আছে! ক্রিকেটে কে কেমন খেলছে সমস্ত খবর ছিল তাঁর নখদর্পণে।' স্মৃতি হাতড়ে শিবপ্রসাদ যোগ করলেন, ওঁর এমন একটাও জন্মদিন যায়নি যেখানে উনি কাজ রাখেননি। শেষবার জন্মদিনেও একদিনে ৩টে নাটকের শো করেছিলেন।'

লকডাউনে ছবি এঁকেছেন, কবিতা লিখেছেন, ভেবেছেন নতুন নাটক! শিবপ্রসাদ বলছেন, ওনাকে কখনও হতাশা গ্রাস করতে পারত না। ওনার সঙ্গে নতুন কাজ নিয়ে কথাও হয়েছিল। ১৪ ডিসেম্বর থেকে একটা কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেটা অসমাপ্তই থেকে যাবে।'