কলকাতা: ইসকনের সন্ন্যাসী অমোঘ লীলা দাসের মন্তব্য নিয়ে তোলপাড়, বিতর্ক! স্বামী বিবেকানন্দ ও শ্রী রামকৃষ্ণের ভাবধারা সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করায় আপাতত চর্চার শীর্ষে ইসকনের এই সন্ন্যাসী। যদিও তাঁর আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়া হয়েছে ইসকনের তরফে। ১ মাসের জন্য নিষিদ্ধও করা হয়েছে তাঁকে। তবে তাতে কার্যত কমেনি এই সন্ন্যাসীর মন্তব্য নিয়ে জমা হওয়া ক্ষোভ। কেবল সাধারণ মানুষ নয়, সমাজের বিভিন্ন জ্ঞানীগুণী মানুষেরাও এই বিষয়টা নিয়ে মুখ খুলেছেন। আর এবার, অমোঘ লীলা প্রসঙ্গে কলম ধরলেন শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায় (Srijato Bandhopadhay)।
আজ সামাজিক মাধ্যমে একটি লম্বা পোস্ট শেয়ার করে নেন কবি। সেখানে তিনি লিখেছেন অমোঘ লীলা দাসের বক্তব্য প্রসঙ্গে তাঁর ভাবনা, উপলদ্ধি। পাকা হাতের তুলিতে এঁকেছেন সমাজের ছবিটাও। শ্রীজাত লিখছেন, 'বিষয়টা ইয়ার্কিরও নয়, তাচ্ছিল্যেরও নয়। বরং ভেবে দেখবার। এই অমোঘ লীলা দাস যা বলেছেন এবং যে-অঙ্গভঙ্গি সহকারে ও যে-ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলেছেন, তার উৎপত্তি হঠাৎ হয়নি। তিলে তিলে হয়েছে। নয়তো কোনও ‘প্রাতিষ্ঠানিক সন্ন্যাসী’ (যতই হাস্যকর শোনাক, এটাই সত্যি) হুট করে এ-ধরনের কথা বলবার সাহস পান না।' এখানেই শেষ নয়, লাইনে লাইনে তিনি অমোঘ লীলাকে বিঁধেছেন শ্লেষে, তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছেন ভারতের সংস্কৃতি, শিক্ষার কথা।
সম্প্রতি অমোঘ লীলার একটি বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। রামকৃষ্ণের ‘যত মত তত পথ’ বাণীকে উদ্ধৃত করে এমন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যা নিয়ে বেজায় চটেছেন রামকৃষ্ণ ভক্তরা। শ্রীরামকৃষ্ণ যেভাবে মানুষকে ঈশ্বরলাভের বহু পথ সম্পর্কে জ্ঞাত করার চেষ্টা করেছিলেন, তারই সমালোচনা করেন এই ব্যক্তি। স্বামী বিবেকানন্দকেও নিশানা করেছিলেন তিনি। বলেন, স্বামী বিবেকানন্দ যদি মাছ খান, তা হলে তিনি কিকরে একজন সিদ্ধপুরুষ? কারণ কোনও সিদ্ধপুরুষ কখনও মাছ খাবেন না, কারণ মাছও ব্যথা অনুভব করে। একজন সিদ্ধপুরুষের অন্তরে মমতা থাকে। শুধু তাই নয়, অমোঘ দাস লীলা এমনও বলেন যে স্বামী বিবেকানন্দের কিছু মতামত গ্রহণযোগ্য নয়।
অমোঘ লীলার মন্তব্যেক উল্লেখ করে শ্রীজাত লিখেছেন, 'আমিষ ভোজন নিয়ে নিদান দিচ্ছেন যখন অমোঘবাবু, তখন নিশ্চয়ই তাঁর এ-খেয়াল হয়নি যে, স্বামী বিবেকানন্দ কেবলমাত্র আরেকজন সন্ন্যাসী নন। তাঁর স্বল্পায়ু জীবনরেখায় যে-ত্যাগ, যে-লড়াই, যে-কৃচ্ছসাধন, যে-তিতিক্ষা, যে-আত্মবিশ্বাস আর যে-দুঃসাহস তিনি দেখিয়ে গেছেন, তা কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে কখনও সম্ভব হত না। একটা গোটা সমাজের পথপ্রদর্শক ও প্রতিনিধি হয়ে ওঠার জন্য কেবল সন্ন্যাসীর বসন যথেষ্ট নয়, অন্তরটুকুও তেমন হওয়া জরুরি।'
এভাবেই কার্যত প্রত্যেক পঙ্তিতে শ্রীজাত উগড়ে দিয়েছেন নিজের ভাবনা, বিরক্তি, আহত মনোভাবকে। শেষে বিঁধেছেন অমোঘ লীলার হাতে থাকা বহুমূল্য ঘড়িটি নিয়েও। ইসকন অমোঘ লীলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও, এখনও যে জমাট মেঘের মতোই ক্ষোভ জমে রয়েছে তাঁর বক্তব্যকে ঘিরে, তা আরও একবার চাবুক লেখনী দিয়ে মনে করিয়ে দিলেন শ্রীজাত।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন