কলকাতা: দিনটা ছিল দোলের আগে। সিদ্ধান্ত পাকা করে, নম্বর জোগাড় করে একটা মেসেজ পাঠিয়েছিলেন তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে। সারাদিন উত্তর নেই। পরেরদিন দোল। দুপুরবেলা উত্তর এল, 'আমায় ফোন করতে পারেন।' রিং হতেই ওপার থেকে গুরুগম্ভীর গলায় ভেসে এল.. 'হরি ওম'। তারপর.... প্রথম আলাপ থেকে শুরু করে প্রথমদিন শ্যুটিংয়ে যাওয়াটাই যেন একটা আস্ত সিনেমা। পাকা চিত্রনাট্যকারের মতোই এবিপি লাইভে (ABP Live)-এ সেই ছবি আঁকলেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (Shiboprosad Mukherjee)। বিষয়, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় (Victor Banerjee)। 


'রক্তবীজ' (Roktobij)-এর অন্যতম মুখ্যচরিত্রে দেখা যাবে ভিক্টরকে। কেমন ছিল প্রবীণ অভিনেতাকে ছবির প্রস্তাব দেওয়াটা? শিবপ্রসাদ বলছেন, 'প্রথম কথাটা হয়েছিল ফোনেই। তখন উনি মুসৌরীতে। অনুরোধ করেছিলাম, উনি কলকাতায় এলে চিত্রনাট্য শোনাতে একদিন ওঁর বাড়ি যাব। সেই মতো নির্দিষ্টদিনে ওঁর কলকাতার হো চি মিন সরণীর বাড়িতে হাজির হলাম। সারাটা ঘর দামি দামি পেন্টিং দিয়ে সাজানো। ঘুরে ঘুর সব দেখছি। নির্দিষ্ট সময়ে ঘরে এলেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই খাবার এল। এলাহি আয়োজন, সমস্ত বাড়িতে বানানো। আমি বললাম, 'আমি খেয়ে এসেছি, আর এমনিতেই এত খাবার খাওয়ার অভ্যাস নেই।' উনি বললেন, 'আমি বিশ্বাস করি যে পরিচালক খেতে পারেন না তিনি ছবি পরিচালনাও তেমন ভাল করতে পারে না।' একটু লজ্জা পেয়েই খেতে শুরু করলাম। ওঁকে বললাম, 'আমি আর নন্দিতাদি ছবি বানাই। জানি না আমাদের কাজ আপনি দেখেছেন কি না, তবে আপনার সঙ্গে আমরা কাজ করতে চাই।' উনি উত্তর দিলেন, 'আপনাদের সুখ্যাতি না শুনলে আমি মেসেজের উত্তর দিতাম না।' তখনই বুঝতে পেরেছিলাম, আমায় কঠিন পিচে বল করতে হবে। গাওস্কর ব্যাট করতে নেমেছে, সব বল এবার মাঠের বাইরেই যাবে। ভিক্টরবাবু তারপর বললেন, 'আমি যেমন আপনাদের সুখ্যাতি শুনেছি, আপনারাও নিশ্চয়ই আমার কুখ্যাতি শুনেছেন।' আমি ওঁর সম্পর্কে কিছু কথা শুনেছিলাম বটে। এরমধ্যে একটা হল, ৯টায় কলটাইম থাকলে উনি পৌনে ৯টার সময় সেজে এক্কেবারে রেডি হয়ে এসে হাজির হবেন।'


এতটা বলে সামান্য থামলেন 'রক্তবীজ'-এর পরিচালক। তারপরে একটু দম নিয়ে বললেন, 'ওঁর আরও একটা অদ্ভুত অভ্যাস রয়েছে। সেটা প্রথমদিনই আমায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, উনি শ্যুটিংয়ে কিচ্ছু খান না। প্রথমে খানিকটা বিব্রত হয়েছিলাম। কিন্তু তারপরে উনি জানিয়েছিলেন, এভাবেই উনি সমস্ত শ্যুটিং করেন। অথচ অসম্ভব একজন খাদ্যরসিক মানুষ ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়। শিঙাড়াটা ঠিক কীভাবে খেলে স্বাদ পাওয়া যাবে বা মুড়িতে কতটা চানাচুর দিতে হবে... সমস্তকিছু গোটা শ্যুটিং ধরেই বলে দিয়েছেন আমায়। খালি কথা বলবার সময়, যখন ওঁকে অন্যান্য শিল্পীদের কথা বলছি, উনি প্রশ্ন করেছিলেন, 'সবাই সময়ে আসবে তো?' আমি বলেছিলাম, 'আপনার সঙ্গে কাজ করছে, সবাই অবশ্যই আসবে।' চিত্রনাট্য পছন্দ হওয়ার পরে, ওঁকে অনুরোধ করেছিলাম, যদি নতুন প্রজন্মের অভিনেতা অভিনেত্রীদের সঙ্গে একটা পরিচয়পর্বের আয়োজন করি। উনি রাজি হয়েছিলেন।'


শ্যুটিংয়ের আগের সফরটাই ছবির মতো সুন্দর। স্মৃতিতে ডুব দিয়ে শিবপ্রসাদ বললেন, 'উনি সবসময় হাতে একটা ছড়ি নিয়ে আসতেন। কী ভীষণ ব্যক্তিত্ব একটা মানুষের। দীর্ঘ কর্মজীবনে আমি যেমন অনেকের সঙ্গেই কাজ করেছি, তেমন অনেককে পরিচালনা না করতে পারার আফসোসও রয়ে গিয়েছে। আমি ভিক্টর বন্দ্যোাপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করেছি, এটা ভাবলে এখনও রোমাঞ্চিত হতে হয়।'


আরও পড়ুন: Paresh Rawal: প্রথমভাগ সুপারহিট, তবুও কেন 'OMG 2' থেকে সরলেন পরেশ রাওয়াল?


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial