মুম্বই : কেরিয়ারের শুরুতেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। অল্পদিনেই ছুঁয়েছিলেন খ্যাতির চূড়া। এহেন সুশান্ত সিং রাজপুতের অসময়ে মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। আজ তাঁর মৃত্যুর একবছর অতিবাহিত। এখনও তাঁকে ঘিরে ভক্তদের সেই একই উন্মাদনা চোখে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। গত বছর আজকের দিনেই বান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্টে অভিনেতার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সুশান্তের মৃত্যু আজও রহস্যে ঘেরা। কারণ, কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি।


তাঁর মৃত্যুর পর তদন্তভার গ্রহণ করে মুম্বই পুলিশ। সুশান্তের বাবা রিয়া চক্রবর্তী ও অন্যদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে এফআইআর দায়ের করার পর মামলাটি চলে যায় সিবিআইয়ের হাতে। এই মামলার এখনও তদন্ত করছে সিবিআই ও এনসিবি। তাঁর মৃত্যুর তদন্ত শুরু হওয়ার পর মাদকযোগের বিষয় উঠে আসায় মামলাটি অন্যদিকে মোড় নেয়। এনিয়ে তদন্ত শুরু করে এনসিবি। সুশান্তের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনও জানায়নি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যদিও বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে সুশান্ত-মৃত্যুর তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে। দেখে নেওয়া যাক সেগুলি কী...


১৪ জুন, ২০২০ : মুম্বইয়ের বান্দ্রার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃতদেহ। ঘটনার কথা পুলিশকে জানান অভিনেতার হাউস-হেল্প। করোনার প্রথম ঢেউ চলাকালীন ঘটনাটি ঘটে। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা দেশ।


১৫ জুন, ২০২০ : মুম্বইয়ের পবন হংসে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এই সময়ে সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলে দেন অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত। তিনি ষড়যন্ত্রের সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সুশান্ত মানসিকভাবে শক্তিশালী ছিলেন। কাজেই তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন না। এই সময়ে সুশান্তের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে তদন্তের দাবি জানান তাঁর জামাইবাবু ও পি সিং।


১৬ জুন, ২০২০ : বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এই ঘটনায় গভীর ষড়যন্ত্রের সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং উচ্চস্তরীয় তদন্তের দাবি জানান। 


১৮ জুন, ২০২০ : বান্দ্রা থানায় সুশান্তের প্রাক্তন বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর বিবৃতি রেকর্ড করা হয়। এর আগে সুশান্ত সম্পর্কিত সমস্ত পোস্ট মুছে দেন রিয়া। এই যুগল লিভ-ইন সম্পর্কে ছিলেন। এবং সুশান্তের মৃত্যুর কিছুদিন আগে তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যায় বলে শোনা যায়। অভিনেতার মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তাঁর ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যান রিয়া।


১৯ জুন, ২০২০ : এই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে স্বজন-পোষণের বিষয়টি উঠে আসে। সুশান্তের ফ্যানরা কাঠগড়ায় তোলেন করণ জোহর, সলমন খান এবং একতা কাপুরকে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ শুরু হয়।


২৪ জুন, ২০২০ : সুশান্ত সিং রাজপুতের ময়নাতদন্তের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনা হয়। রিপোর্টে- শ্বাসরোধ করা বা বাইরে থেকে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়। 


২৫ জুন, ২০২০ : সিবিআই তদন্তের দাবি জানান বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।


৪ জুলাই, ২০২০ : সিবিআই তদন্তের দাবি জানান সুশান্তের বাবা কেকে সিং।


৬ জুলাই, ২০২০ : প্রখ্যাত পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনসালির বয়ান রেকর্ড করে মুম্বই পুলিশ।


১৪ জুলাই, ২০২০ : সুশান্তের মৃত্যুর একমাস পর সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মানসিক অবস্থার কথা জানান রিয়া।


১৬ জুলাই, ২০২০ : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কাছে সুশান্তের মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের দাবি জানান রিয়া চক্রবর্তী। 


২৪ জুলাই, ২০২০ : ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় সুশান্তের শেষ ছবি "দিল বেচারা"।


২৯ জুলাই, ২০২০ : পটনার রাজীব নগর থানায় ৬ জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ জানান সুশান্তের বাবা। এর পর রিয়া চক্রবর্তী সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান, মামলাটি মুম্বই পুলিশের হাতে দেওয়া হোক। তদন্তের জন্য মুম্বই পৌঁছায় বিহার পুলিশ। যদিও দুই রাজ্যের পুলিশকর্মীদের মধ্যে এনিয়ে মতভেদ দেখা দেয়।


৩০ জুলাই, ২০২০ : বিহার পুলিশের কাছ থেকে তথ্য জোগাড় করে তদন্ত শুরু করে ইডি।


৫ অগাস্ট, ২০২০ : এর পর সুশান্তের মৃত্যুতে সিবিআই তদন্ত সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় সরকার। 


১০ অগাস্ট, ২০২০ : সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন রিয়া। তিনি দাবি করেন, আদালত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগেই সংবাদমাধ্যম তাঁকে অপরাধী বানিয়ে ফেলেছে। 


১৯ অগাস্ট, ২০২০ : সুশান্ত সিংয়ের মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্তের আদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এরপর দায়িত্বভার তুলে নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।


২৬ অগাস্ট, ২০২০ : মাদকের বিষয়টি উঠে আসায় রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এনসিবি। তদন্ত শুরু করে তারা।


২৮ অগাস্ট, ২০২০ : সিবিআই তদন্তের মুখে পড়েন রিয়া। বেশ কয়েক ঘণ্টা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।


৪ সেপ্টেম্বর. ২০২০ : সুশান্তের মৃত্যুতে মাদক মামলায় রিয়া ও তাঁর ভাই শৌভিককে গ্রেফতার করে এনসিবি। 'রাবতা'-র অভিনেতার হাউস ম্যানেজার স্যামুয়েল মিরান্ডাকেও গ্রেফতার করা হয়। আরও অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে পাকড়াও করা হয়। 


২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ : দীপিকা পাড়ুকণ, সারা আলি খান, শ্রদ্ধা কাপুর এবং অন্যদের ডেকে পাঠায় এনসিবি।


৫ অক্টোবর, ২০২০ : দিল্লি এইমসের মেডিক্যাল বোর্ড তাদের রিপোর্ট জমা করে সিবিআইয়ের কাছে। তাতে পরিষ্কার লেখা হয়, আত্মহত্যা করেছেন সুশান্ত।


৮ অক্টোবর, ২০২০ : বাইকুল্লা জেলে ৪ সপ্তাহ কাটানোর পর জামিনে মুক্তি পান রিয়া।


৯ নভেম্বর, ২০২০ : অভিনেতা অর্জুন রামপালের বান্দ্রার বাড়িতে অভিযান চালায় এনসিবি।


৫ মার্চ, ২০২১ : ১২ হাজার পাতার হার্ড কপি এবং ডিজিটাল ফর্ম্যাটে ৫০ হাজার পাতার চার্জশিট দাখিল করে এনসিবি। তাতে রিয়া চক্রবর্তী, শৌভিক চক্রবর্তী, স্যামুয়েল মিরান্ডাদের নাম করা হয়।


২৮ মে, ২০২১ : মাদক মামলায় সুশান্তের বন্ধু এবং ফ্ল্যাটমেট সিদ্ধার্থ পিঠানিকে গ্রেফতার করে এনসিবি।


৪ জুন, ২০২১ : মাদক মামলায় স্যামুয়েল মিরান্ডাকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়। 


এই মামলায় এখনও কোনও চার্জশিট দাখিল করেনি সিবিআই।