ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, পার্থপ্রতিম বিশ্বাস, হিন্দোল দে, কলকাতা: সরকারি হাসপাতালের ‘থ্রেট কালচার’ এবার টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ায়! সিলেকশনের বদলে ইলেকশন চাওয়ায় কেশসজ্জা শিল্পীর কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। আর তার জেরেই কেশসজ্জা শিল্পী গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে দাবি করল তাঁর পরিবার।
আর জি কর-কাণ্ডের আবহে এবার টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়াতেও উঠল থ্রেট কালচার চালানোর অভিযোগ। হুমকি সংস্কৃতির ঘেরাটোপে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন এক কেশসজ্জা শিল্পী। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, সম্প্রতি একের পর এক কাজ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল তাঁর। দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন কেশসজ্জা শিল্পী। এই অবস্থায় শনিবার রাতে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। তবে মেয়ের তৎপরতায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।
এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। তাঁর হাত ধরেই ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছিলেন এই কেশসজ্জা শিল্পী। সুদীপ্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, আত্মহত্যা করার আগে নাকি ওই শিল্পী বার্তা পাঠিয়েছিলেন সুদীপ্তাকে। তিনি এবিপি আনন্দকে বলেছেন, ' সংসার চলছে না। ওর দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। ওর কাছে এটা ছাড়া আর উপায় ছিল না। গিল্ড থেকে প্রথমে ওকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তিন মাসের জন্য। কিছু রুলস ব্রেক করার জন্য। এবং সাসপেনশন তুলে নেওয়ার পরে ওকে বলা হয়েছে, যে তুমি কাজ করতে পারবে একমাত্র আমরা কাজ দিলে সেটা করতে পারবে। নিজে কাজ খুঁজে এনে করতে পারবে না। ন্যাচারালি কাজের সংখ্যা কমে গিয়েছে।'
কিন্তু কেন এরকম চরম পথ বেছে নিচ্ছিলেন এই শিল্পী? এখানেই মারাত্মক অভিযোগ তুলেছেন তাঁর এক সহকর্মী যাঁকেও সাসপেন্ড করেছিল গিল্ড। হেয়ার ড্রেসার চন্দ্রা মিত্র এই বিষয়ে বলছেন, 'আমরা সবাই ভোট চেয়েছিলাম। ভোট চাওয়াতে...আমাদের কিছু ঠিক হয়েছিল, বা ভুল হয়েছিল...আরও সাধারণ মেম্বাররাও চেয়েছিল। আমাদের ২ বছর অন্তর অন্তর যেহেতু চেঞ্জ হয়, কমিটি চেঞ্জ হয়, তারজন্য ভোট করা হয়। এবছর সিলেকশন হয়ে গিয়েছিল কারণ ৫ জন যারা ছিল এগেইনস্টে, তাঁরা নাকি ভুল করেছিল।'
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়াতেও কি ভাইরাসের মতো ছড়াচ্ছে থ্রেট কালচার? এই ঘটনায় কাঠগড়ায় হেয়ার স্টাইলিস্টদের গিল্ড 'সিনে অ্যান্ড ভিডিও হেয়ার স্টাইলিস্ট অ্যাসোসিয়েশন' এবং ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিসিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার ভূমিকা।
হেয়ার ড্রেসার চন্দ্রা মিত্র বলছেন, 'আমাদেরকে একদিন ডাকে।'
এবিপি আনন্দ- কারা ডাকে?
চন্দ্রা মিত্র, হেয়ার ড্রেসার- ইউনিয়ন।
এবিপি আনন্দ- ফেডারেশন?
চন্দ্রা মিত্র, হেয়ার ড্রেসার- না আমাদের যেহেতু ফেডারেশনের যে কমিটি, আলাদা আলাদা, আমাদের যে হেয়ার স্টাইলিস্ট গিল্ড, গিল্ডে ডাকে। যাই। ৯ জন মিলে পুরো র্যাগিং করা চলে। তখন আমার মানসিক অবস্থা ভাল নেই। আমার মা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।
এবিপি আনন্দ- এখানে কারা কারা ছিলেন?
চন্দ্রা মিত্র, হেয়ার ড্রেসার- সেক্রেটারি, প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, ট্রেজারার সবাই ছিলেন।
থ্রেট কালচারের অভিযোগে, আঙুল উঠেছে 'সিনে অ্যান্ড ভিডিও হেয়ার স্টাইলিস্ট অ্যাসোসিয়েশন'-এর সভাপতি রিনা মণ্ডলের বিরুদ্ধে। যদিও এ নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন তিনি। পরবর্তীকালে একসঙ্গে বসে জানানো হবে কী হয়েছে। অন্যদিকে ফেডারেশনের বক্তব্য, সুরক্ষা বন্ধুকে বলা হয়েছে গোটা বিষয়টি কী হয়েছে দেখার জন্য।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।