নয়াদিল্লি: তিনি কিংবদন্তি। তিনি ভারতের প্রথম ঘোষিত 'সুপারস্টার' (Superstar)। অমলিন হাসি দিয়ে লাখ লাখ মন ছুঁয়েছেন তিনি। তিনি রাজেশ খান্না (Rajesh Khanna)। আজ ১৮ জুলাই, এই পৃথিবী ছেড়ে পরলোকে যাওয়ার ১০ বছর পূর্ণ। তবে অনুরাগীদের মনে তিনি আজও 'এভারগ্রিন'। 


সকলের প্রিয় 'কাকা'


পর্দায় তাঁর অসাধারণ চার্ম তাঁকে অনবদ্য করে তুলেছিল। ওই ক্যারিসমা, ওই অভিনয় দক্ষতা মানুষের মনে স্থায়ী জায়গা করেছে। ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত, নিজের স্বর্ণযুগে, পরপর ১৫টা হিট ছবি করেছেন 'কাকা' রাজেশ খান্না, যেগুলির সবকটা তিনি একার কাঁধে টেনেছেন।


১৯৪২ সালের ২৯ ডিসেম্বর, যতীন খান্না জন্ম নেন অমৃতসর। পরে নাম বদলে রাজেশ খান্না হন। তবে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি 'কাকা' নামেও পরিচিত। রাজেশ খান্না মোট ১৬৩টি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ও ১৭টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিতে অভিনয় করেছেন। 'আখরি খত' ছবির হাত ধরে বলিউডে পা রাখেন। এই ছবি ১৯৬৭ সালে ভারত থেকে অস্কারে মনোনয়ন পায়। ১৯৭৪ সালে বিবিসি রাজেশ খান্নার ওপর একটি ছবি তৈরি করে, নাম দেয় 'বম্বে সুপারস্টার'। 


রাজেশ খান্নার খ্যাতি আকাশ ছুঁয়েছিল, যা তাঁর আগের কোনও অভিনেতার ক্ষেত্রে হয়নি। গোটা কর্মজীবন তাঁর ফ্যান ছিল অগুন্তি। ১৯৭৩ সালে রাজেশ খান্নার সঙ্গে ডিম্পল কপাডিয়ার বিয়ে হয়। তাঁদের দুই মেয়ে ট্যুইঙ্কল ও রিঙ্কি। ৬৯ বছর বয়সে ২০১২, ১৮ জুলাই মুম্বইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তবে 'কাকা' এখনও তাঁর কাজের মাধ্যমে আমাদের সকলের কাছে বেঁচে আছেন। রইল তাঁর কিছু দুর্দান্ত কাজের ঝলক।


'দাগ: এ পোয়েম অফ লভ'


১৯৭৩ সালে মুক্তি পায়। যশ চোপড়া পরিচালিত একটি রোম্যান্টিক ঘরানার ছবি এটি। ১৮৮৬ সালের থমাস হার্ডির উপন্যাস 'দ্য মেয়র অফ ক্যাস্টরব্রিজ'-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল এই ছবি। এখানে রাজেশ খান্না একজন পলাতক আসামির ভূমিকায় অভিনয় করেন। সিনেমায় রাজেশ খান্নার সঙ্গে জুটি বাঁধেন শর্মিলা ঠাকুর এবং রাখি গুলজার।


'আপ কি কসম'


১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। জে. ওম প্রকাশ মেহরার এই ছবিতে এক ঈর্ষান্বিত স্বামীর চরিত্রে দেখা যায় সুপারস্টারকে। এমন এক চরিত্র যে সবসময় তাঁর স্ত্রীকে সন্দেহ করে। রাজেশ খান্নার বিপরীতে ছিলেন মুমতাজ।


'নমক হরাম'


হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত এই ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজ করেন রাজেশ খান্না। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায়। বক্স অফিসে প্রবল সাফল্য অর্জন করে এই ছবি। 'দিয়ে জ্বলতে হ্যায়, ফুল খিলতে হ্যায়', 'নদিয়া সে দরিয়া, দরিয়া সে সাগর' বা 'ম্যায় শায়র বদনাম'-এর মতো গান মন ছুঁয়েছিল সিনেপ্রেমীদের।


'বাওয়ার্চি'


এই ছবিরও পরিচালনা করেছিলেন হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়। ১৯৭২ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি গোটা পরিবারের সঙ্গে বসে দেখার মতো পারিবারিক ছবি। রাজেশ খান্না ছাড়াও এই ছবিতে জয়া ভাদুড়ি ছিলেন। ছবিতে রাঁধুনে রঘুর চরিত্রে দেখা গিয়েছিল 'কাকা'কে।


'হাতি মেরে সাথী'


১৯৭১ সালে মুক্তি পায়। সেই বছরের সবচেয়ে বড় হিট। পোষা হাতির প্রতি তার মালিকের ভালবাসার গল্প। প্রিয় পোষ্যের রক্ষণাবেক্ষণে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাকে সেই গল্প বলে। বাচ্চাদের মধ্যে প্রবল জনপ্রিয়তা লাভ করে এই ছবি। 


'কটি পতঙ্গ'


১৯৭০ সালে মুক্তি প্রাপ্ত। শক্তি সামন্ত পরিচালনা করেন। আশা পারেখের সঙ্গে জুটি বাঁধেন রাজেশ খান্না। চরিত্রের নাম ছিল কমল সিন্হা। গল্পটি একটি পলাতক বধূকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে যে তার মৃতপ্রায় বিধবা বন্ধুকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে সে তার পরিচয়ে তার শিশু সন্তানের যত্ন নেবে। 'ইয়ে জো মহব্বত হ্যায়', 'ইয়ে শাম মস্তানি' ইত্যাদি এই ছবির জনপ্রিয় গান।


আরও পড়ুন: Vedaant Madhavan Record: সাঁতারে জাতীয় রেকর্ড ছেলে বেদান্তের, ট্যুইটে আনন্দ ভাগ করে নিলেন মাধবন


'অমর প্রেম'


১৯৭২ সালে শক্তি সামন্তের রোম্যান্টিক ছবি 'অমর প্রেম'-এ রাজেশ খান্না আবার শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে জুটি বাঁধেন। শর্মিলা ঠাকুর একজন গ্রাম্য মহিলার ভূমিকায় অভিনয় করেন যাকে তার স্বামী ত্যাগ করার পর কলকাতায় পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য হয়। সেখানেই একজন ধনী ব্যক্তি (রাজেশ খান্না)র সঙ্গে এবং পাড়ার একটি নির্যাতিত ছেলের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলেন ওই নারী।


'ইত্তেফাক'


যশ চোপড়া পরিচালিত, ১৯৬৯ সালের 'ইত্তেফাক' একটি ক্রাইম থ্রিলার। সেখানে রাজেশ খান্না প্রথম নন্দার সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন। এই থ্রিলারে স্ত্রীকে খুনের দায়ে বিচারাধীন চিত্রশিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অভিনেতা।


'আরাধনা'


রাজেশ খান্না ১৯৬৯ সালে শক্তি সামন্তের 'আরাধনা' ছবিতে শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে ফের জুটি বাঁধেন। সেখানে তিনি একজন বিমান বাহিনীর পাইলটের ভূমিকায় অভিনয় করেন যিনি গর্ভবতী স্ত্রীকে রেখে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।


আরও পড়ুন: ABP Exclusive: 'সেদিন কুয়াশা ছিল' ছবির হাত ধরে এবার বড়পর্দায় অর্ণ মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী উপাবেলা, রইল প্রথম লুক


'আনন্দ'


১৯৭১ সালের ছবি। রাজেশ খান্না হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের 'আনন্দ'-এ একজন গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন যিনি মৃত্যুর আগে পূর্ণ জীবনযাপনে বিশ্বাস করেছিলেন। ছবিটি তাঁর অন্যতম সেরা চরিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।